শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মিশরীয়দের ইফতার আইটেম

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২ | ২:১২ অপরাহ্ণ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২২ | ২:১২ অপরাহ্ণ
মিশরীয়দের ইফতার আইটেম

পিরামিড, নীল-নদ ও তুর পাহাড়ের দেশ মিশর। হাজার বছরের স্মৃতি বুকে জড়িয়ে রয়েছে দেশটি। ফেরাউনদের দেশ যেমন মিশর ঠিক তেমনী অসংখ্য নবী-রাসূল সাহাবা আউলিয়াদের দেশও মিশর। পবিত্র কোরআনে ‘মিশর’ শব্দটি পাঁচবার উল্লেখ করা হয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা অনেক নেয়ামত-অনুকম্পায় মিশরীয়দের সিক্ত করেছেন। নীল নদের পানির বরকতে মিশরের মাটি থাকে সব সময় উর্বর। তাই মিশরকে নীল নদীর দান বলা হয়। প্রাচীন কৃষ্টি সভ্যতাসমৃদ্ধ দেশটিতে রোজা শুরু হয় বেশ ধুমধাম করেই। সেখানে প্রতিটি বাড়ি, রাস্তা, দোকানে ফানুস জ্বালানো রমজানের সংস্কৃতি।

দুপুরের পরই অলিগলিতে বসে ইফতারির জন্য মায়েদাতুর রাহমান টেবিল। কোথাও ব্যক্তিগত উদ্যোগ, কোথাও সেবামূলক সংস্থার অধীনে রাস্তায় সামিয়ানা টানিয়ে মায়েদাতুর রাহমান নামক ইফতারির আয়োজন করা হয়।

ধনী-গরিব, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, মুসলিম-খ্রিষ্টান প্রত্যেকেই অংশ নেন এই ইফতার টেবিলে। ফেরাউনের স্মৃতি বিজড়িত মিশরে কামানের গোলার শব্দে শুরু করা হয় ইফতার। এটা বহুকাল ধরে চলে আসা তাদের একটি সামাজিক প্রচলন।

সেই ৮৫৯ হিজরিতে ইখশিদি আমল থেকে চালু হয় এই নিয়ম। কথিত আছে, কামানের গোলা ছোড়ার মাধ্যমে ইফতারের সময় ঘোষণার ঐহিত্য ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়। যখন ঘড়ি বা অন্যান্য প্রযুক্তি ছিল না, তখন মানুষকে ইফতারের সময়ের জানান দিতে এটাই ছিল একমাত্র পন্থা।

সাধারণত পানি ও খেজুর দিয়ে রোজা ভাঙা হলেও ফলের রস, কোষাফ পান করার মাধ্যমে ইফতার শুরু করেন মিশরীয়রা। প্রধান ইফতার আইটেমে থাকে মা’হসী মলোকাইয়া (পাট শাকের সোপ), বামিয় মা’আ লাহমা (মাংস ও ঢেঁড়শ ভুনা), ফেরাখ মা’হামারা, এইস বেলাদী (মিশরীয় আটার রুটি), তাজা ফল ও পুদিনা পাতার চা ইত্যাদি।

ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পুরো সময়টাতে সব জায়গায় থাকে ইবাদত করার মনোরম পরিবেশ। মাগরিবের কিছুক্ষণ পর থেকেই মানুষ ছুটে যায় তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করতে।

প্রতিরাতে ইমামরা তারাবিতে এক বা একের বেশি পারা তেলাওয়াত করেন। কোনো কোনো মসজিদ তিন-চার পারাও তেলাওয়াত করা হয়। বিভিন্ন কেরাতে (তেলাওয়াত-শৈলী) ইমামরা নামাজ পড়ান। তারাবির নামাজের মধ্যভাগে থাকে সংক্ষিপ্ত বিরতি ও আলোচনা। এ সময় প্রতিটি মসজিদেই বাচ্চাদের তাদের বাড়ি থেকে (মায়েদের দেওয়া) আনা মিষ্টি, খেজুর ফলের জুস ও ঠান্ডা পানি দিয়ে মুসল্লিদের আপ্যায়ন করতে দেখা যায়।

তারাবি শেষে মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ ঘরে ফেরেন। ১৫তম রোজার পর থেকে তারাবির দুই-তিন ঘণ্টা বিশ্রামের পর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের জন্য তারা আবার ফিরে যান মাসজিদে। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে তাহাজ্জুদ আদায় করেন এক বা দুই খতম কোরআন পড়ার মাধ্যমে। পবিত্র রমজানে আরেকটি বিষয় যেটি মিশরে বেশি দৃশ্যমান হয়, তা হলো পবিত্র কোরআনের প্রতি তাদের যত্ন ও ভালোবাসা।

বলা হয়, পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে হিজাজে। আর এ কোরআন উত্তমরূপে তেলাওয়াত হয়েছে মিশরে। পুরো রমজানজুড়ে সেখানে থাকে কোরআন চর্চার পরিবেশ। সব জায়গা থেকে শোনা যায় কোরআন তেলাওয়াতের আওয়াজ।

বিশ্বের বড় বড় নন্দিত ক্বারিদের জন্ম হয়েছে মিশরে। ক্বারি আব্দুল বাসেত আব্দুস সামাদ, মাহমুদ খলিল আল-হুসারি, আস-সিদ্দিক আল-মিনশাওভিসহ আরও অনেকেরই এখানে জন্ম।

রমজান মাসে সব জায়গা থেকে ভেসে আসে সুমিষ্ট কণ্ঠের তেলাওয়াত। অভ্যাসগতভাবেই মিশরীয়রা তেলাওয়াত করতে ও শুনতে পছন্দ করে।

বলাবাহুল্য, মিশরের প্রায় মসজিদেই থাকে নারীদের নামাজের ব্যবস্থা। মাজহাবগত দিক থেকে মিশরের অধিকাংশ মানুষ শাফেয়ী মাযহাব অনুসরণ করেন। সর্বোপরি পুরো রমজানে তারা আমলের সঙ্গে কাটান।

সম্পর্কিত পোস্ট