শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

সেই ডাকঘর খোলা নাই

প্রকাশ: ৯ অক্টোবর ২০২১ | ১০:৫১ অপরাহ্ণ আপডেট: ৯ অক্টোবর ২০২১ | ১০:৫৪ অপরাহ্ণ
সেই ডাকঘর খোলা নাই

প্রিয় বাবা, তুমি চলে যাওয়ার পর মনে হয়েছিলে কোথাও কেউ নাই! ঘর আর দুনিয়া জুড়ে যদিও মানুষের সমাগম কিন্তু একজনও আপন মানুষ নাই!

বাবা অন্তরের অন্তস্থল থেকে শ্রদ্ধা নিও। নিও ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যাওয়া হৃদয়ের একরাশ জমানো সিক্ত অশ্রু।

বাবা, যাদের আপনজন ভাবতে, যারা তোমার হৃদয়ের স্পন্দন, কলিজার টুকরা তাদের প্রার্থনায় আছো কিনা জানিনা, প্রতিদিন অন্তত একবার না হলেও মাঝেমধ্যে তাদের স্বরণে তুমি আছো, এটা কিন্তু ধ্রুব সত্য! কারণ, মাঝেমধ্যে তারা তোমার স্মরণে গরু, ছাগল, মুরগী জবাই করতে দেখেছি, যা একদম তোমার পছন্দ ছিল না । আর আমি আমার পাঁচ ওয়াক্ত মোনাজাতে তোমাকে রেখেছি। তোমার আত্মার শান্তির মাগফেরাত কামনা করছি।

যদিও কোনো ডাকঘর খোলা নেই, তোমার কাছে বার্তা পৌঁছাবার কোন সুযোগ নাই। তাই, জায়নামাজে বসে চোখ বন্ধ করে তোমাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি আর জমানো অভিমানগুলো বলি। খুব বেশি দুঃখ নিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। হৃদয়ের আর্তনাদ কেউ দেখেনি। শুনতে পায়নি তোমার মনের আকুতি। খুব তাড়া ছিল তোমার, সেটা আমরা জানতাম না। বিছানায় দিনের পর দিন গুণেছো একেকটা যন্ত্রণায়। তোমার কাছে হয়ত মনে হতো মরে গেলে বাঁচি। কি অদ্ভুত মানুষের চরিত্র!

যে সন্তান মা-বাবাকে ভাগাভাগি করে ফেলে, তাদের উপর থেকে আল্লাহর রহমত ও করুণা দূরে সরে পড়ে। তোমরা তো কোনো সন্তানকে কখনও ভাগ করোনি! স্পষ্ট মনে পড়ে, সন্তানের জন্য তোমাদের ত্যাগের কথা। অথচ, হে আল্লাহ্ চোখের সামনে বিধবা মাকে ঘরহীন করতে দেখেছি। মা-বাবাকে আলাদা করতে দেখেছি। এখনও অনেকের মা-বাবা জীবিত আছেন। কেউ কেউ তাদের সেবা-যত্ন তো দূরের কথা ভালোমন্দ খাবারও দেয় না। তাদের শরীরে নানাধরণের রোগ বাসা বাঁধে। চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে সন্তানরা নানা বাহানায় অর্থের ঘাটতি দেখায়। কী করুণ কাহিনী !

বাবা ইজ্জত, সম্মাত থাকতে তুমি পরপারে চলে গেলে, এটাই তোমার সম্মান। আল্লাহ্ আমাকে পুত্র সন্তান দেয়নি, আমার কোনো দুঃখ নেই। পৃথিবীর অনেক মা-বাবাকে দেখে আমার এখন আর পুত্র সন্তানের জন্য আফসোস হয় না। আমার চোখে দু’বার জল এসেছিল। প্রথমবার আনন্দের। এক ভাগিনা যখন চাকরির প্রথম বেতন পেয়ে ফোন উপহার দিয়েছিল, সে বার চোখে জল আসে। দ্বিতীয়বার কোনো সন্তানকে যখন দেখি মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। সে বারও আনন্দে বুক ভরে গিয়েছিল।

বাবা, তুমি বেঁচে থাকলে হয়ত মাথার উপর রাখতে পারতাম। হ্যাঁ, আমি তোমার কন্যা সন্তান বলছি। সত্যি বলছি। পরপারে খুব বেশি ভালো থেকো সকল মা-বাবা। কেমন জানি জায়নামাজে বুকটা খালি হয়ে হাহাকার করে উঠছিল। তাই, দু’কলম লিখে একটু স্বস্তিবোধের আশা করছি।

কেউই জীবিত মা-বাবার প্রতি অবহেলা করবেন না কেউ। তাদের দায়িত্ব নিয়ে নিজের ফরজ আদায় করুন। এতে পরম শান্তি। তারা হারিয়ে গেলে খবর পাঠানোর মত আর ডাকঘর খুঁজে পাওয়া যাবে না। খোলা থাকবে না বার্তা পাঠানোর কোনো পথ।

সম্পর্কিত পোস্ট