সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় সারা দেশে ঈদুল আজহা পালিত

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৩ | ১০:৪৮ অপরাহ্ণ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৩ | ১০:৪৮ অপরাহ্ণ
যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় সারা দেশে ঈদুল আজহা পালিত

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ সারা দেশে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ অনুয়ায়ী পশু কোরবানি করেছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই কবরস্থানে ছুটে গেছেন। চিরবিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান।

ঈদুল-আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

গতবারের মতো এবারও করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করছেন মুসলমানরা। পশু কোরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।

এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত ঈদের এই প্রধান জামাতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নামাজ আদায় করেন।

ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এই ঈদ জামাত প্রতিবছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়।

প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।

তবে আজ সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই ঈদের খুশিতে বাগড়া দিয়েছে বৃষ্টি। এর ফলে ঈদের খুশি ও পশু কোরবানিতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে শত ক্লান্তি মাড়িয়ে হলেও শহরের মানুষ ফেরে গ্রামের বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনের কাছে। ঈদের দিন ভোরে পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে বৃষ্টি বাধা উপেক্ষা করে ঈদগাহে যায় মানুষ। ঈদের জামাতের পর খুতবায় ইমামরা হজরত ইবরাহিম (আ.) ও হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর কোরবানির অমর কাহিনি বয়ান করেন।

ঈদে জামাতে সম্মিলিতভাবে দুই রাকাত নামাজ শেষে সবার জন্য করা হবে মঙ্গল কামনা। ব্যক্তি, সমাজ, দেশ, মুসলিম উম্মাহ এবং সারা বিশ্বের শান্তি ও কল্যাণ কামনায় দোয়া করা হয়। জামাত শেষে কোলাকুলি করে প্রকাশ করা হয় পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা।

ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে সামর্থ্যবান মুসলমানরা পশু কোরবানি করেন। ধর্মীয় নির্দেশনা অনুযায়ী মাংস ভাগ করে দেওয়া হয় আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও অসহায় মানুষের মাঝে।

পশু কোরবানিই ঈদুল আজহার প্রধান আনুষ্ঠানিকতা। ঈদের পরও দুই দিন পশু কোরবানি দেওয়া হয়। ঈদের আগে পশু কেনার পর পরিচর্যা করার মাধ্যমে যে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়, রাজধানীর মানুষের মধ্যে এবারও তা দৃশ্যমান।

ক্রেতারা হাট থেকে পছন্দের পশু কিনে গলায় জরির মালা, শিংয়ে রাংতা পরিয়ে বাসায় নিয়ে যান। পশুর হাঁকডাক, যত্ন-আত্তি নিয়ে মানুষের ছোটাছুটি নাগরিক পরিবেশে সৃষ্টি করে অন্য এক আবহ।

এদিকে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ‘মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আজহা। কোরবানি আমাদের মধ্যে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেওয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে পবিত্র ঈদুল আজহার মর্মবাণী অন্তরে ধারণ করার আহবান জানান। তিনি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনকল্যাণমুখী কাজে অংশ নিয়ে বৈষম্যহীন, সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহবান জানান।

প্রসঙ্গত, গত বছর এই সময়ে দেশের একটি অংশ বন্যায় আক্রান্ত ছিল। ওই অংশের মানুষের ঈদের আনন্দ ফিকে হয়ে গিয়েছিল বানের পানিতে। এবার এখন পর্যন্ত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই। তবে সারা দেশেই বৃষ্টি হচ্ছে।

সম্পর্কিত পোস্ট