শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নেশা করতে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২২ | ৩:৪৫ অপরাহ্ণ
নেশা করতে বাধা দেওয়ায় স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা

নরসিংদীতে নেশা করতে বাধা দেওয়ায় সুবর্ণা আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূকে রেঞ্জ দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে তার পাষন্ড স্বামী সোহেল মিয়া। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) ভোর রাত ৩টার দিকে নরসিংদীর হাজিপুর ইউনিয়নের চকপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সোহেল মিয়াকে আটক করেছে পুলিশ।

নিহত সুবর্ণা আক্তার হাজীপুর ইউনিয়নের বেঙ্গল এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে। সোহেল মিয়া স্থানীয় বাজারে হলুদ মরিচের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। তাদের ইয়াদুল নামে ৬ মাসের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনরা জানায়, প্রায় ৩ বছর আগে হাজীপুর ইউনিয়নের বেঙ্গল এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে সুবর্ণা আক্তারের সঙ্গে সোহেল মিয়ার বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই যৌতুক ও নেশার টাকা যোগার করে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন শুরু করে। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। সুবর্ণা কয়েকবার তার বাবার কাছ থেকে টাকা এনে স্বামীকে দেয়। তারপর আরও টাকা এনে দেওয়ার জন্য সুবর্ণাকে মারধর করতো। একপর্যায়ে সুবর্ণা কয়েক দফায় বাপের বাড়ি চলে যায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার দুপুরে সুবর্ণাকে তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে আসে স্বামী সোহেল মিয়া। কিন্তু দিন পার হতে না হতেই রাতে পুনরায় ঝগড়া শুরু হয়। রাত ১টার দিকে স্বামী সোহেলকে নেশা করতে বাধা দেন তার স্ত্রী। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। একপর্যায়ে সোহেল রেঞ্জ দিয়ে তার স্ত্রীর মাথা ও মুখমণ্ডলে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এর একপর্যায়ে ধারালো ছুরি দিয়ে তার পেটে আঘাত করে। রাত ৩টার দিকে সুবর্ণার বাড়িওয়ালা ইদ্দিছ মিয়ার স্ত্রী বের হয়ে সুবর্ণাকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। পরে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সাড়ে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে সদর মডেল থানা পুলিশ নিহতের স্বামী সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করে।

নিহতের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, জামাই নেশাগ্রস্ত ছিল সেটা আমরা জানতাম না। দুদিন পর পর সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকতো। পরে মিলিয়ে দিতাম। বিয়ের পর থেকে এভাবেই চলছিলো। আমি গরিব মানুষ। পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাই। এর মধ্যে যতটুকু সম্ভব টাকা দিয়ে জামাইয়ের চাহিদা মিটাতাম। কিন্তু সব সময় পেরে উঠতাম না। তাই বলে সে আমার মেয়েটাকে মেরে ফেলবে। আমি তার বিচার চাই।

মেয়ের মামা আলামিন বলেন, সোহেল প্রতিদিনই নেশা করতো। সে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ওষুধের মাধ্যমে নেশা করতো। আর নেশা করেই আমার ভাগনিকে মারধর করতো। অনেকবার তাকে বুঝিয়ে ভাগনিকে সংসারে পাঠিয়েছি। তারপর ও তার অত্যাচার কমেনি। এমন নির্মমভাবে রেঞ্জ দিয়ে পিঠিয়ে পুরো মুখ থেতলে দিয়েছে। ৬ মাসের দুধের শিশুটা মাকে ছাড়া কীভাবে থাকবে? আমরা সোহেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্বামী সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার নেপথ্যের কারণ জানতে অনুসন্ধান চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ ছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হতো না। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

সম্পর্কিত পোস্ট