মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাইদহে মাধ্যমিক পর্যায়ের কিশোরীদের নিয়ে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ !

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২২ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ২৯ মে ২০২২ | ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ
ঝিনাইদহে মাধ্যমিক পর্যায়ের কিশোরীদের নিয়ে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ !

শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া রোধ, সঞ্চয়ে উৎসাহ প্রদান, নেতৃত্বের বিকাশ, বাল্যবিবাহ রোধ, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করতে বিশেষ প্রকল্প চালু করেছে সরকার। নারীদের শিক্ষিত ও স্বাবলম্বি আত্মনির্ভশীল করে উন্নয়নে মূল ধারায় যুক্ত করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। প্রাথমিকভাবে পাইলটিং হিসাবে সারাদেশের মোট ৫৯ উপজেলায় এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় দু’টি করে মোট ১১৮ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে কিশোরী সংঘ। এরমধ্যে ঝিনাইদহ সদরসহ জেলার ৬ উপজেলার ১২টি স্কুলে এ কিশোরী ক্লাবের উদ্বোধন করা হয়েছে এ সংঘের প্রতিটিতে ১০০ জন করে কিশোরী যুক্ত হবে। । ভারতীয় সীমান্তবর্তি এ জেলার এসব ক্লাবে ১২০০ মেয়ে শিক্ষার্থীকে সদস্য করা হয়েছে। যাদের সবাই ১৮ বছরের আগে বিয়ে না করার জন্য প্রতিজ্ঞা করেছে। এসময়ে তারা সঞ্চয় করে আর্থিকভাবে স্বালম্বী এবং লেখাপড়া শিখে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
ঝিনাইদহ বিআরডিবি’র উপ-পরিচালক মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, পাইলটিং প্রোগাম হিসাবে সারাদেশে ৫৯ উপজেলার ১১৮টি বিদ্যালয়ে এ সংঘ গড়ে তোলার কাজ চলছে। এরমধ্যে ঝিনাইদহের ৬ উপজেলা ১২টি স্কুলে কিশোর সংঘ গঠন করা হয়েছে। ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ সংঘের সদস্য হতে পারবে। এরমধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এমকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও নগরবাথান মাধ্যমিক বিদ্যালয়। কালীগঞ্জ উপজেলায় বালিয়াডাঙ্গা এমএস মাধ্যমিক দ্যিালয় ও কোালা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শৈলকুপা উপজেলার গাড়াগঞ্জ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও রাহাতুন্নেছা স্কুল এন্ড কলেজ। হরিণাকুন্ডু উপজেলায় আন্দুলিয়া মাাধ্যমিক বিদ্যালয় ও লালন একাডেমি। কোটচাঁদপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া এবং শেরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়। মহেশপুর উপজেলার ডিপিজি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ কিশোরী সংঘ গঠন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) দরিদ্র মহিলাদের জন্য সমন্বিত পল্লী কর্মসংস্থানের সহায়তা প্রকল্প-২য় পর্যায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প পরিচালকরা বলছেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করা হবে। বাল্যবিবাহ রোধকল্পে ১৮ বছরের নীচে বিয়ে না করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ফলে যৌতুক, নারী নির্যাতন ও ইভটিজিং প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে এ সংঘের সদস্যরা। এছাড়া শিক্ষা জীবনেই সঞ্চয়ী মনোভাব গড়ে তুলতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মাধ্যমে মাসিক ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করতে পারবে। কিশোরীদের এই জমাকৃত সঞ্চয়ের উপর প্রতি বছর সরকার ২০০% হারে প্রনোদনার বোনাস প্রদান করবে। কিশোরীদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে জমাকৃত টাকার দুইগুণ ফেরত পাবে। তবে ১৮ বছরের আগে এ সঞ্চয় উত্তোলন করতে পারবে না। যদি করে তাহলে তার জমাকৃত ছাড়া সরকারের দেওয়া প্রনোদনার কোন টাকা পাবে না।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাইলটিংয়ে সফলতা পেলে পকল্পের পরিধি বাড়ানো হবে। দেশের সব উপজেয়ায় বিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিশোরীদের নিয়ে এ সংঘ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা মঙ্গলজান শেখ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম জানান, কিশোরীদের নিয়ে গঠিত এ প্রকল্পের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সফল হবে বলে বিশ্বাস করি। কারণ হিসাবে উল্লেখ করেন, কিশোরী বয়সে সঞ্চয় করছে। ১৮ বছরের নীচে সঞ্চয় তুলতে না পাারার ফলে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া ও বাল্য বিয় অনেকাংশে কমে আসবে। বিশেষ করে আমাদের মেয়েরা প্রতিমাসে একটি করে প্রশিক্ষণ পাবে। যেখানে তাদের পুষ্টি স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে একটি ট্রেইনিং হয়েছে। আমি সেখানে উপস্থিত থেকে দেখিছি, আমাদের মেয়েদের মাধ্যমিক পর্যায়ের এ বয়সে বিশেষ যত্ন ও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতার কারনে তা হয়ে উঠে না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা তাদের সমস্যাগুলো নির্দ্বিধায় চিকিৎসককে বলছে এবং সমাধান পাচ্ছে ও সচেতন হচ্ছে।
বালিয়াডাঙ্গা মঙ্গলজান শেখ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিশোরী সংঘের সভাপতি ও ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার হিরা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে তিন মাস টাকাা জমা দিয়েছি। আমার ৬০০ টাকা জমা হয়েছে। টাকা জমাতে পারছি এজন্য আমি খুশি, আমার খুব আনন্দ লাাগছে। এরইমধ্যে আমরা একটি প্রশিক্ষণ পেয়েছি। কিছুই জানতাম না, অনেক জেনেছি। বিশেষ করে পুষ্টি ও স্বাস্থ্য বিষয়ে জেনেছি, যা জানা সব কিশোারীদের খুব প্রয়োজন। ১৮ বছরের আগে লেখাপড়া ছাড়বো না এবং বিয়ে করবো না বলে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছি যোগ করে কিশোরী শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার হিরা।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, কিশোরী সংঘ সরকারের একটি চমৎকার প্রকল্পটি। কিশোর বয়সে একটা মেয়ে সঞ্চয় করার ফলে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। প্রকল্পের বাধ্যবাধকতা থাকার কারনে ১৮ বছরে আগে বিয়ে না করা বা টাকা উত্তোলন করতে না পারায় শিক্ষা জীবন থেকে ঝরে পড়া এবং বাল্যবিবাহ রোধ রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া নেতৃত্বের বিকাশ, নারী নির্যাতন, যৌতুক ও ইভটিজিং প্রতিরোধসহ কিশোরীদের বয়োঃসন্ধিকাল সম্পর্কে সচেতন করা। আমাদের মেয়েরা বিশেষ একটি সময়ে পারিবারিক বা সামাজিক কিছু দৃষ্টিভঙ্গির কারেন দারুণ হিনমন্যতায় ভোগে। কিন্তু এ সংঘের মেয়েরা সে সমস্য কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এ সংঘের সদস্যরা প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা সঞ্চয় করতে পারবে। বছর শেষে তাদের সঞ্চয়ে ২০০% প্রনোদনা হিসাবে সরকার দিবে। এভাবে ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে তার টাকা উত্তোলন করতে পারবে। ইতিমধ্যে আমি দুটি স্কুলে এই কিশোরী সংঘ উদ্বোধন করেছি। আমাদের মেয়েরা এধরনে একটি সুযোগ পেয়ে খুশি হয়েছে।
কথা প্রসঙ্গে সাংসদ বলেন, একটি সময় ছিল নারীদের লেখাপড়া করা, বাইরে আসা ছিল সমাজের চোখে নিন্দনীয় কাজ। নারীরা শুধু গৃহস্থালীর কাজ করবে, এর বাইরে কোন কিছু চিন্তা করা সমাজের চোখে ছিল অপরাধের সামিল। দেশ স্বাধীনতার পর থেকে বরাবরই নারীদের পিছিয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ যখনই সরকার গঠন করেছে, তখনই নারীদের উন্নয়নে কাজ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান আওয়ামলীগ নেতৃত্বধীন সরকার বালীবিবাহ বন্ধ করে নারীদের শিক্ষিত করে উন্নয়নের মূল ধারায় যুক্ত করতেই এ বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট