মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের প্রস্তাব পাস, পক্ষে ভোট বাংলাদেশের

প্রকাশ: ৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ৬ এপ্রিল ২০২৪ | ১:০৬ পূর্বাহ্ণ
জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের প্রস্তাব পাস, পক্ষে ভোট বাংলাদেশের

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ এর সদর দপ্তর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধের একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে।

প্রস্তাবে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) পাস হওয়া এই প্রস্তাবটি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে পাকিস্তান মানবাধিকার পরিষদে তুলেছে।

পরিষদের ৪৭ সদস্যদেশের মধ্যে বাংলাদেশসহ ২৮টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। বিপক্ষে ভোট দেয় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ ৬টি দেশ। অন্যদিকে ভারত, ফ্রান্সসহ ১৩টি দেশ ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।

প্রস্তাবে ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি, স্থানান্তর ও অন্য কোনোভাবে না পাঠাতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, গাজায় নতুন করে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বন্ধে এই আহ্বান জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি নিয়ে গত জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রুলের কথাও উল্লেখ রয়েছে প্রস্তাবে।

অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ যেতে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে প্রস্তাবে। এতে বলা হয়েছে, অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে মানবাধিকার পরিষদ। এ ছাড়া গাজার দক্ষিণের রাফায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে প্রস্তাবে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে উপত্যকাটির ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির অর্ধেকের বেশি রাফায় আশ্রয় নিয়েছেন।

ইসরায়েলে বাহিনী প্রায় ছয় মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালাচ্ছে। নির্বিচার এ হামলায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ৩৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। প্রস্তাব পাসের মধ্য দিয়ে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে এবারই প্রথম কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান নিল মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের সর্বোচ্চ পর্ষদ।

জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের দপ্তরে প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটিতে উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইব্রাহিম মোহাম্মদ খারাইশি। প্রস্তাবটি নিয়ে ভোটের আগে তিনি বলেন, ‘এই গণহত্যা বন্ধে আপনাদের সবার জেগে ওঠা প্রয়োজন। এটা এমন এক গণহত্যা, যেটা টেলিভিশনের পর্দায় পুরো পৃথিবী দেখছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ এবং যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রস্তাব বাস্তবে কার্যকরিতা সেভাবে না থাকলেও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে ইসরায়েলকে অস্ত্র না দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাইডেন। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গাজায় ত্রাণকর্মী ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপকালে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

ইসরায়েলকে বরাবরই সমর্থন দিয়ে এসেছে বাইডেন প্রশাসন। তবে এই প্রথম সহায়তা ও অস্ত্র বন্ধের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন তিনি। এতে ছয় মাস ধরে চলা যুদ্ধে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই বন্ধুত্বে কিছু দিন ধরে টানাপোড়েন চলছে

বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে টেলিফোনে ৩০ মিনিট আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, বাইডেন নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন— বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে, মানুষের দুর্দশা কমাতে ও ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলকে বিশেষ, সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত পদক্ষেপ ঘোষণা করতে হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসরায়েল এসব ক্ষেত্রে কতটা পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ওপর মার্কিন নীতি নির্ভর করছে।

ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘে বেশির ভাগ সময় ইসরায়েলের কূটনৈতিক ঢাল হিসেবে ভূমিকা রাখে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইসরায়েল ও গাজায় যুক্তরাষ্ট্র বিশেষ নীতিগত কোনো পরিবর্তন আনবে কি না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি। তিনি বলেন, ‘শিগগিরই ইসরায়েল তাদের গৃহীত পদক্ষেপের ঘোষণা দেবে বলে ওয়াশিংটন আশা করছে।’

সম্পর্কিত পোস্ট