সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘোড়াঘাটে ‘বহুব্রীহি’ এনজিও’র বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ উত্তোলন চেষ্টার অভিযোগ

প্রকাশ: ২ জুন ২০২২ | ১২:১৪ অপরাহ্ণ আপডেট: ২ জুন ২০২২ | ১২:১৪ অপরাহ্ণ
ঘোড়াঘাটে ‘বহুব্রীহি’ এনজিও’র বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জালিয়াতি করে অর্থ উত্তোলন চেষ্টার অভিযোগ

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের আওতায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো নিরক্ষর জনগোষ্ঠীর স্বাক্ষর জ্ঞান নিশ্চিত করার লক্ষে সরকার দেশের ৬৪টি জেলায় মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প শুরু করেছে। ঘোড়াঘাট উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে নীতিমালা অনুযায়ী উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো বহুব্রীহি নামক একটি এনজিও’র সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ঘোড়াঘাট উপজেলাতে শুরু হয়েছে এই প্রকল্পটি। ৬ মাস মেয়াদী এই প্রকল্পটি আগামী ৮ জুন শেষ হবে।

তবে প্রকল্প শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি থাকলেও, সুপারভাইজার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ৬ মাসের বেতন ভাতা বাবদ একটি টাকাও দেয়নি বাস্তবায়নকারী এনজিও বহুব্রীহি। উল্টো প্রথম মাসের বেতন উত্তোলনের জন্য সুপারভাইজার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে মাস্টাররোল উপজেলা প্রোগ্রাম অফিসারের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই এনজিও’র বিরুদ্ধে।

এদিকে বেতন না দেওয়া এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। অভিযোগে তাদের বেতনের পুরো টাকা ইউএনও’র মাধ্যমে প্রদানের দাবি করেন তারা।

১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৪৫ লক্ষ নারী-পুরুষকে মৌলিক স্বাক্ষর জ্ঞান নিশ্চিত করার লক্ষে গত ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (একনেক)। ৬৪টি জেলার ২৫০টি উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবার কথা।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো দেশের বিভিন্ন উপজেলার জন্য দরপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন এনজিওকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়। শর্ত অনুযায়ী এসব এনজিও তাদের নিজস্ব ফান্ড থেকে প্রতিমাসে সুপারভাইজার এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন পরিশোধ করবে এবং তাদের স্বাক্ষর গ্রহণের মাধ্যমে বেতন প্রদানের মাস্টাররোল প্রোগ্রাম অফিসারের কার্যালয়ে জমা দিলে মন্ত্রনালয় এনজিও’র নামে অর্থ ছাড় দেবে।

ঘোড়াঘাটে প্রকল্প শুরুর আগে জরিপ কর্মীদের মাধ্যমে বহুব্রীহি জরিপ কার্যক্রম চালায় এবং নিরক্ষর নারী-পুরষের তালিকা তৈরি করে। তালিকা অনুযায়ী এই উপজেলার ১৮ হাজার নিরক্ষর নারী-পুরুষের জন্য ৪টি ইউনিয়ন এবং ১টি পৌরসভায় ৩০০টি কেন্দ্র স্থাপন করে বহুব্রীহি।

এসব কেন্দ্রে মৌলিক শিক্ষা প্রদানের জন্য মাসিক ২৪০০ টাকা বেতনে ৬০০ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয় এই এনজিওটি। এছাড়াও কেন্দ্র গুলো সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য ২৫০০ টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৬ জন সুপারভাইজার।

এসব কেন্দ্র যেসব বাড়িতে স্থাপন করা হয়েছে, সেসব বাড়িতে বাড়ি ভাড়া এবং বিদ্যুৎ অথবা জ্বালানী বিল প্রদানের পাশাপাশি কেন্দ্র গুলোতে আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন উপকরণ প্রদানের কথা থাকলেও কোন উপকরণই দেয়নি এই এনজিও। শুধুমাত্র বই, খাতা ও কলম দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের।

সেই কলম গুলোও আবার অচল ও নিন্মমানের। ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার বাগানবাড়িতে অবস্থিত রোজিনার বাড়ি কেন্দ্রের শিক্ষক আজিজুর রহমান ডিপটি বলেন, ৬ মাস শেষ হচ্ছে। কিন্তু আমরা বেতনের একটি টাকাও পাইনি। বেতন কবে পাবো শুনতে গেলে এনজিও’র লোকজন বিভিন্ন টালবাহানা করে। অন্যান্য জেলায় শিক্ষকদের প্রতি মাসের বেতন নিয়মিত ভাবে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ জয়দেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের শিক্ষিকা মাছুমা খাতুন বলেন, এনজিও আমাদের পুরো টাকা মেরে দিয়ে পালানোর পায়তারা করছে। কেন্দ্র গুলোতে বসার চাদর, ব্লাক বোর্ড ও হ্যারিকেনসহ অন্যান্য বিভিন্ন উপকরণ দেওয়ার কথা থাকলেও, তারা আমাদেরকে কিছুই দেয়নি।

অভিযোগ ও বেতন না দেওয়ার কারণ জানতে বহুব্রীহি এনজিও’র নির্বাহী পরিচালকের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ না করে কেটে দিয়েছেন।

অভিযোগ দুটির কথা নিশ্চিত করে ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএন) রাফিউল আলম বলেন, প্রকল্প শেষের পথে। তবে ওই এনজিও পক্ষ থেকে আমার সাথে আজ পর্যন্ত তারা কোন যোগাযোগ করেনি। এমনকি ডিসেম্বর মাস ব্যতিত অন্য কোনো মাসের বেতন শিটও তারা জমা দেয়নি। আমি নিজেই তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। তবুও তাদের দেখা পাইনি। এনজিওটির প্রধান কার্যালয় দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ভূষিরবন্দরে। সেখানে খোঁজ নিয়ে তাদের কোন অস্তিত্ব পাইনি।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্প শুরুর আগেই বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ কেনার জন্য সরকার এই এনজিও’কে মোটা অঙ্কের একটি অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। সামনে জুন ক্লোজিং। এনজিও এভাবে টালবাহানা করলে, এতগুলো শিক্ষক-শিক্ষিকার বেতন আটকা পড়ে যাবে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ এবং দাবির বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছি।

সম্পর্কিত পোস্ট