মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

আল-শিফা হাসপাতালে দুই সপ্তাহে ৪০০ নিহত

প্রকাশ: ১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭:৫৪ অপরাহ্ণ আপডেট: ১ এপ্রিল ২০২৪ | ৭:৫৪ অপরাহ্ণ
আল-শিফা হাসপাতালে দুই সপ্তাহে ৪০০ নিহত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালে ইসরাইলের ১৩ দিনব্যাপী হামলায় রোগী, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী ও যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। যদিও হাসপাতালটি অবরোধের সময় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা মর্টারশেল ও রকেট ছুড়ে ইসরাইলি সৈন্য ও সাঁজোয়া যান রুখে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

এদিকে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে ১০ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতির নিন্দা জানিয়ে এবং পণবন্দিদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। অন্যদিকে, গাজা শহরে ফিলিস্তিনি সাহায্যপ্রার্থীদের ওপর ইসরাইলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া ওই ঘটনায় আহত হয় আরও ৩০ জনেরও বেশি নাগরিক। ফিলিস্তিনিরা সাহায্য ও খাবার পাওয়ার আশায় রাস্তার মোড়ে অবস্থান নিলে কোনো কারণ ছাড়াই ইসরাইলি বাহিনী তাদের ওপর গুলি চালায়। গত জানুয়ারি মাস থেকেই এ রকম বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলি বাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলে দেইর এল-বালাহ ও দক্ষিণে খান ইউনিসে বিমান হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণ করেছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আল আকসা শহিদ হাসপাতাল আশপাশের এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। তবে হাসপাতালটিতে অভিযান চালানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ইরাকের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই সংগঠনটি ইরানপন্থি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলবিরোধী সশস্ত্র সংগঠন হিসেবে পরিচিত।
আকাশপানে চেয়ে ক্ষুধার্ত গাজাবাসী : গাজা থেকে ১ হাজার মাইল পূর্বে কাতারের আল-উদেইদ বিমান ঘাঁটি থেকে সাহায্যের জন্য বড় বড় কাঠের বাক্স মার্কিন সামরিক পরিবহন বিমানে ভরা হয় ক্ষুধার্ত গাজাবাসীদের মাঝে বিতরণের জন্য। ক্ষুধা নিবারণে প্যারাসুটের মাধ্যমে নিচে ফেলা এসব ত্রাণের দিকেই তাকিয়ে থাকে গাজাবাসী।

বিবিসির খবর অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহেই ফ্রান্স, জার্মানি, জর্ডান, মিশর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাহায্য নিয়ে দুইটি ত্রাণভর্তি বিমান পরিচালনা করা হয়েছে। এটি ছিল মার্কিন বাহিনীর ১৮তম মিশন। অন্তত ৪০ হাজার প্রস্তুত খাবারের প্যাকেট ছোট ছোট বাক্সে ভরা হয়। সেগুলোকে আবার একটি কাঠের বড় বাক্সে ভরে প্যারাসুটের মাধ্যমে নিচে ফেলা হয়।

এদিকে চলতি সপ্তাহের শুরুতে সমুদ্রে পড়ে যাওয়া খাবারভর্তি বাক্স উদ্ধার করতে গিয়ে ডুবে মারা গেছে অন্তত ১২ জন। খাবার প্যাকেট নিতে গিয়ে হুড়োহুড়িতে পদদলিত হয়ে মারা গেছে আরও ৬ জন। হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হামাস এগুলোকে অকেজো বলে উল্লেখ করেছে। প্যারাসুট থেকে ফেলা ত্রাণের বড় বড় বাক্সকে ক্ষুধার্ত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য সত্যিকারের বিপদ বলে অভিহিত করেছে তারা। সেই সঙ্গে প্যারাসুট থেকে ত্রাণ বিতরণ বন্ধের দাবিও জানিয়েছে হামাস।

তবে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজাবাসীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ এখন এক জটিল, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল কাজ। মিশনের কমান্ডার মেজর বুন বলেছেন, প্যারাসুটের মাধ্যমে খুবই সাবধানে খাবার ভর্তি কাঠের বাক্স সমুদ্রের পাড়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বিমানের শব্দ শুনেই লোকজন ভিড় করতে থাকে আর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়।

চেষ্টা করা হয় প্যারাসুটগুলো যাতে গাজার উপকূলে নিরাপদ ও খোলা জায়গায় নামানো যায়। কিন্তু বিমানের শব্দে নিচে ভিড় জমে গেলে সবসময় তা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া সাহায্যের প্যাকেটগুলো ক্ষুধার্ত মানুষের তুলনায় অতি নগণ্য, যা এক বালতিতে এক ফোটা পানির মতো বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন বিমান বাহিনীর মুখপাত্র মেজর রায়ান ডিক্যাম্প। তাই বিমানের শব্দ শুনলেই লোকজন সেদিকে ছুটতে থাকে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গাজার উত্তরাঞ্চলের ক্ষুধার্ত হাজার হাজার লোকজন তাই বিমান থেকে ফেলা প্যারাসুটের জন্যই এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় ৩২ হাজার ৭০৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৭৫ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই নিরীহ শিশু ও নারী। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলায় নিহত হয় ১ হাজার ১৩৯ জন।

সম্পর্কিত পোস্ট