বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জাতিসংঘে বাংলাদেশের মহীসোপানের তথ্য দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশ: ২ মার্চ ২০২২ | ৬:২৯ অপরাহ্ণ আপডেট: ২ মার্চ ২০২২ | ৬:২৯ অপরাহ্ণ
জাতিসংঘে বাংলাদেশের মহীসোপানের তথ্য দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে আব্দুল মোমেলন বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যাদি জাতিসংঘের পেশ করা হয়েছে। ১ মার্চ জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ৫৪ তম অধিবেশনে ২১ সদস্যের ‘কমিশন অন দ্য লিমিটস অফ দ্য কন্টিনেন্টাল শেল্ফ’ (সিএলসিএস) বিস্তারিত হালনাগাদ তথ্যাদি উপস্থাপন করা হয়। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব ও প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম এবং এ সংক্রান্ত কমিটির অন্য কারিগরি বিশেষজ্ঞগণ। ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর সিএলসিএস-এ আনুষ্ঠানকিভাবে বাংলাদেশের মহীসোপানের সংশোধিত তথ্য দাখিলের পর এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যাদির উপস্থাপন করা হলো।

বাংলাদেশের মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত দলিলাদি ২০১১ সালের ফ্রেবুয়ারি মাসে প্রথমবারের মতো সিএলসিএস-এ জমা দেয়া হয়। মিয়ানমার ও ভারতের সাথে অমীমাংসিত সমুদ্রসীমাজনিত বিরোধের কারণে, কমিশন বাংলাদেশ দাখিলকৃত দলিলাদি সেসময় পরীক্ষা করতে পারেনি। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিচারিক সংস্থার মাধ্যমে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধের সমাধান করে।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ের উপর ভিত্তি করে, বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালের দাখিল পুনরায় পর্যালোচনা করে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর সিএলসিএস এর কাছে বাংলাদেশের মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত দলিলাদির নতুন সংস্করণ পেশ করে। এই সংশোধিত দাখিলে, ট্রাইব্যুনাল নির্ধারিত বঙ্গোপসাগরের মহীসোপানের নতুন সীমারেখা অনুসরণ করা হয়।

সর্বশেষ মঙ্গলবারের এই উপস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অর্থাৎ সমুদ্রের এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার ভূমির অধিকার রক্ষা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত তথ্য সরবরাহ করেছে। এরপর সিএলসিএস এর নিয়ম অনুযায়ী, এ উদ্দেশ্যে গঠিত একটি সাব-কমিশন বাংলাদেশ উপস্থাপিত দলিলাদি পরীক্ষা করে বাংলাদেশের মালিকানার বিষয়ে সুপারিশ প্রদান করবে। এরফলে বাংলাদেশ ঐ এলাকায় প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করতে পারবে।

এ সময় মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম উল্লেখ করেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যারা সরকারে ছিলেন তারা এসব তথ্য-উপাত্ত জাতিসংঘে সাবমিট করলে এতদিন অপেক্ষা করতে হতো না সমুদ্রের তলদেশের বিশাল এই সম্পদের মালিকানা পেতে। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের পরই মূলত: সমুদ্রের তলদেশের এই সম্পদের ন্যায্য হিস্যার জন্যে জাতিসংঘে তৎপরতা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। স্মরণ করা যেতে পারে সে সময় এই সীমানা নির্দ্ধারণের দাবিতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের বক্তব্য উপস্থাপন করেছিলেন ড. এ কে এ মোমেন। সে সময় তিনি ছিলেন স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত। এখন মন্ত্রী হিসেবে তথ্য-উপাত্তসহ বক্তব্য সাবমিট করলেন ড. মোমেন।

জাতিসংঘ ফোরামে প্রদত্ত বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ যেখানে সম্পদের অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের মহীসোপান সীমার বিষয়ে জাতিসংঘের চুড়ান্ত সুপারিশ উপরোক্ত বিশাল সমুদ্র এলাকার সকল প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ যত রকমের প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে তার অন্বেষণ, সংরক্ষণ ও উন্নয়নে একটি ভিত্তি প্রদান করবে-যা আমাদের টেকসই উন্নয়ন, শক্তির চাহিদা ও আমাদের জনগণের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে”।

মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খোরশেদ আলম জানান, জেনেভার আদালতের রায় পাবার পর মহিসোপানের বডি এখানে জাতিসংঘ সদর দফতরে। সেজন্যেই আমরা এখানে এসেছি। আমাদের একটা রিভেলিডেশনের দরকার ছিল। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অনেক সম্পদ দরকার। এই বিশাল ভূমি তা পূরণে সক্ষম হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকার এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই দলিলাদির উপস্থাপন নিয়ে কাজ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্বিক সমন্বয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স, জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ, স্পারসো ও বিআইডব্লিউটিএ এর একটি বিশেষজ্ঞ দল এই দাখিল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। এছাড়া কমনওয়েলথ সচিবালয় এবং জাতিসংঘের ট্রাস্ট ফান্ড থেকে বাংলাদেশ এ বিষয়ে আইনি ও প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন আরও বলেন, ‘মহীসোপান সীমা সংক্রান্ত এই উপস্থাপন আমাদের দেশের জন্য একটি বড় অর্জন, বিশেষ করে এমন একটি সময়ে আমরা এটি সম্পন্ন করতে পারলাম যখন আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হওয়ার পথে সামনে এগিয়ে চলেছি, যেটি আমাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। আগামী দিনগুলোতে এই মহীসোপান এলাকার প্রাণযুক্ত ও প্রাণহীন প্রাকৃতিক সম্পদ-প্রাচুর্য উন্মোচণে আমাদের পূর্ণ সামর্থ্যরে ব্যবহার এ পথচলায় সবচেয়ে বড় পাথেয় হয়ে থাকবে’। অর্থাৎ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলাকে ত্বরান্বিত করবে সমুদ্রের তলদেশের বিশাল এই সম্পদ।

সংলাপ- ০২/০৩/০০৭ আজিজ

সম্পর্কিত পোস্ট