মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হাটহাজারীতে স্কুল শিক্ষক শাহা আলমের অত্যাচারে প্রবাসী পরিবার তটস্থ

প্রকাশ: ৬ জুন ২০২৩ | ৭:১২ অপরাহ্ণ আপডেট: ৭ জুন ২০২৩ | ৮:৩০ অপরাহ্ণ
হাটহাজারীতে স্কুল শিক্ষক শাহা আলমের অত্যাচারে প্রবাসী পরিবার তটস্থ

চট্টগ্রামের হাটহাজারীর এক স্কুল শিক্ষকের অত্যাচারে নিজ ভিটা মাটির দখল নিতে পারছেন না দুই প্রবাসী যুবক। ষড়যন্ত্রমূলক মামলার ভয়ে ফিরতে পারছেন না দেশেও। রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তিসম্পন্ন স্কুল শিক্ষক শাহ আলমের নানা হুমকি-ধমকিতে প্রবাসে ভীত সন্ত্রস্ত দিন কাটাচ্ছেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং মোঃ জয়নাল আবেদীন নামের এই দুই প্রবাসী যুবক। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তারা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার পূর্ব মেখল এলাকার ডাক্তার মফিজুর রহমানের বাড়ির মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং মোঃ জয়নাল আবেদীন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে অবস্থান করছেন। ২০১০ সালের জুন মাসের ২৬ তারিখে তাদের পিতা আব্দুস সালাম মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেন বসতঘর পাকা করার। বিদেশে টাকা উপার্জনের পর পৈত্রিক সম্পত্তিতে ঘর করার জন্য পুরনো একটি বসত ঘর ভাঙতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ায় একই এলাকার একজন স্কুল শিক্ষক। শাহ আলম নামে এই স্কুল শিক্ষক বসত ঘরটি তার বলে দাবি করে বসেন। পাশাপাশি এই বসতঘরের মালিকানা দাবি করে আদালতে একটি মামলাও জুড়ে দেন। নিজেদের বসতঘর দখলে নিতে গিয়ে উল্টো আসামী হলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও জয়নালসহ মোট তিনজন।

জানা গেছে, স্কুল শিক্ষক শাহ আলম চট্টগ্রামের রাউজান মোহাম্মদপুর স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পেশায় শিক্ষক হলেও ভূমিদস্যতার কারণে এলাকায় তার ব্যাপক দুর্নাম রয়েছে।

এদিকে জয়নাল এবং মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে শুধুমাত্র মামলা দিয়ে ক্ষান্ত হননি এ ভূমিদস্যু। সন্ত্রাসী দিয়েও নানাভাবে অত্যাচার চালাতে থাকেন প্রবাসী পরিবারটির ওপর।

হাটহাজারী থানার তদন্তকারী অফিসার এস আই জসিম উদ্দিন মামলাটি তদন্ত করার পর আসামীদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ খুজে না পেয়ে এবং জায়গাতে শাহ আলমের কোন অস্তিত্ব না পেয়ে মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করেন। কিন্তু এরপরেও থেমে যাওয়ার পাত্র নয় ভূমিদূস্য হিসেবে খ্যাত শিক্ষক শাহ আলম। মামলাটি নারাজি দিয়ে বসেন এই ভূমিদস্যু।

এরপর আদালত মামলাটির তদন্তবার দেন জেলা গোয়েন্দা শাখাকে। গোয়েন্দা শাখার এসআই মোঃ সেলিম মিয়া মামলাটি ব্যাপক তদন্তের পর বাদী শাহ আলমের অভিযোগের কোন অস্তিত্ব খুঁজে না পেয়ে পুনরায় চট্টগ্রামে চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুনরায় মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট প্রদান করেন।

আদালত মামলাটি ৮ নং মেকোল ইউনিয়ন পরিষদে সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেন। বৈঠকে শিক্ষক শাহা আলম তার মিথ্যা অভিযোগের জন্য করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে স্থান ত্যাগ করেন। কিন্তু সম্পত্তির প্রতি লোভ একটুও কমেনি শিক্ষক শাহ আলমের। এই পর্যায়ের মামলা মোকাদ্দমা ও সালিশি বৈঠকে নিষ্পত্তিকৃত পরিত্যক্ত বসত ঘরটি ২০২১ সালের অক্টোবরে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুনরায় প্রবাসী যুবক- মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন ও জয়নাল আবেদীনের পরিবার সহ মোট ৯ জনকে আসামি করে কোর্টে মামলা দায়ের করে। কোর্ট মামলাটি আমলে নিয়ে হাটহাজারী থানায় তদন্ত করার নির্দেশনা দেন। দীর্ঘদিন তদন্ত করার পর ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এই মামলাটিও মিথ্যা বলে দাবি করে তদন্তকারী অফিসার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। সাথে সাথে বাদী শাহ আলমের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলা করার প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন।

কিন্তু কৌশলী বাদী শাহ আলম নিজের অপরাধকে আড়াল করার জন্য পুলিশের তদন্তকে মিথ্যা বলে দাবি করে আদালতে নারাজি প্রদান করেন।আদালত নারাজি গ্রহণ করে সিআইডির কাছে মামলাটি হস্তান্তর করেন। দীর্ঘ তদন্তের পর ২০২২ সালের ২৭ জুলাই সিআইডিও হাটাজারী থানার তদন্ত রিপোর্টকে সত্য দাবি করে আদালতে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। এর পর আদালত মিথ্যা মামলা ঠিক খারিজ করে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর মামলার ৯ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।

এদিকে সব মামলা মোকাদ্দমায় হেরে যাওয়ার পরও শিক্ষক শাহ আলম ক্ষান্ত হয়নি। গত ২০ মে সন্ত্রাসীদের নিয়ে হামলা চালান প্রবাসী যুবক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও জয়নাল আবেদীনের বাড়ীতে। এ সময় তাদের বৃদ্ধ মা মোসাম্মৎ আনোয়ার বেগম, তাদের দুই পুত্রবধূ এবং নাতি নাতনি ঘরে অবস্থান করছিলেন।

এ বিষয়ে হাটহাজারী থানার এস আই ফরিদ আহাম্মেদ বলেন, মামলাটি থানা থেকে তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামলাটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আমরা অবগত নই। কোন মামল আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ার পর থানায় সেটার কোন দায়দায়িত্ব থাকেনা।

জানতে চাইলে স্থানীয় মেখল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সালাউদ্দীন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শাহা আলম মাস্টার ও প্রবাসী পরিবারটির মধ্যে জায়গাজমির বিরোধ চলছে। আদালত এ মোকাদ্দমাটি ইউনিয়ন পরিষদে সমাধানের জন্য পাঠালে তাদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে একাধিক বৈঠক হয়। উভয় পক্ষের কেউই এতে রায়ের পক্ষে সম্মত না হওয়ায় পুনরায় তারা আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে।

সম্পর্কিত পোস্ট