মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হঠাৎ সবক শেখাচ্ছেন সাবেক সিইসি : নূরুল হুদা

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২২ | ৪:৩১ অপরাহ্ণ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২২ | ৪:৩১ অপরাহ্ণ
হঠাৎ সবক শেখাচ্ছেন সাবেক সিইসি : নূরুল হুদা

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ টি এম শামসুল হুদা হঠাৎ করেই সবক শেখাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, শামসুল হুদা এতদিন পরে এসে আমাদের সবক দিচ্ছেন। তিনি ৯০ দিনের পরিবর্তে ৬৯০ দিন পর নির্বাচন করেছিলেন, এটা কীভাবে সম্ভব? দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা আর সামরিক শাসনের অধীনে নির্বাচন করা এক কথা নয়, এটা তো বুঝতে হবে।

নূরুল হুদা আরও বলেন, বদিউল আলম মজুমদারের মতো একজন লোককে তিনি কীভাবে নির্বাচন কমিশনে কাজ করার সুযোগ দিয়েছেন! শামসুল হুদা কমিশন ক্যান্টনমেন্টের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এখন গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। নির্বাচন কমিশন নিয়ে গণমাধ্যমে উঠে আসা যেকোনো অনিয়ম, সংকট তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিই আমরা।

বৃহস্পতিবার সকালে নির্বাচন কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে ‘রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) টক’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা এসব কথা বলেন। আরএফইডির সভাপতি সোমা ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক কাজী জেবেল।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনের ভোট রাতে হয়েছে এটি একটি অভিযোগ, এমন অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। দিনের ভোট রাতে হয়েছে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ প্রার্থীসহ কেউ নির্বাচন কমিশনে সরাসরি কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি এ অভিযোগ নিয়ে কেউ আদালতেও যাননি। ফলে আমরা ধরে নিচ্ছি দিনের ভোট রাতে হওয়ার বিষয়টি একটি অভিযোগ। সিইসি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কেউ কোথাও রাতে ভোট হওয়ার বিষয়টি দেখেননি। এমনকি কোনো সাংবাদিক রাতে ভোট হয়েছে তা দেখেছেন কিংবা লিখেছেন বলে আমাদের জানা নেই।

একাদশ জাতীয় সংসদ কয়েক শত কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। এটি কীভাবে সম্ভব— এমন প্রশ্নের জবারে তিনি বলেন, গেজেট হওয়ার পর বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। এর আগে পর্যন্ত এ বিষয়ে কেউ নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেনি। তাই এ বিষয়ে আমার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি, ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও ছিল না। নির্বাচনের গেজেট প্রকাশ হয়ে গেলে আমাদের কিছু করার থাকে না। কারণ এটা আইন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের আইনের বাইরে গিয়ে কিছু করার সুযোগও ছিলো না।

নিজের-কমিশনের কাজের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা হচ্ছে , সাত কোটি ছয় লাখের বেশি স্মার্টকার্ড রেডি হয়ছে, পাঁচ কোটির বেশি বিতরণ করা হয়েছে। এতে বিদেশিরা নয় দেশের মানুষ যুক্ত ছিল। অনেকগুলো আইনি-বিধি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের ভোটার তালিকা সংশোধন করা হয়েছে। সমালোচনা গঠনমূলক হলে গ্রহণ করা হয়।

নূরুল হুদা আরও বলেন, কুমিল্লা নির্বাচনে রাজনৈতিক চাপ ছিল না। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনও সন্তোষজনক। নির্বাচনকালীন সময় আমাদের ওপর কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না, আমরা আমাদের মতো করে কাজ করতে পেরেছি। নির্বাচনে সংঘর্ষ, সহিংসতা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষে, যদি না প্রার্থীরা সহনশীল না হয়। তবে রাজনৈতিক দলের অধীনে নির্বাচন করা কঠিন হলেও তা অসম্ভব নয়, এটা সামরিক সরকারের অধীনের চেয়ে অনেক ভালো।

নির্বাচনে বিভিন্ন দলের এজেন্টদের ভোট কেন্দ্রে সাবলীল পরিবেশ ছিল না অভিযোগের জবাবে বলেন, প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এজেন্ট বের করে দেওয়ার বিষয়ে বলেন অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ সময় অভিযোগ আসে না।

তিনি বলেন, বর্তমান কমিশনের আমলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়েছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে

সিইসি নুরুল হুদা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন শতভাগ ইভিএমে করা সম্ভব হবে না, তবে ৫০ ভাগ করা যেতে পারে।

গত পাঁচ বছর তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে তিনি নিজেকে শতভাগ সফল হিসেবে দেখছেন না, তবে তার আন্তরিকতার অভাব ছিল না।

ইসির বিরুদ্ধে ৪২ নাগরিকের করা অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ের অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আইন হলে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা ফিরে আসবে কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি ব্যবস্থা ভালো, তবে আইন হওয়া সবচেয়ে বেশি ভালো।

সম্পর্কিত পোস্ট