শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারে নৈতিকতা

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৭:৫১ অপরাহ্ণ আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১:০০ অপরাহ্ণ
স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহারে নৈতিকতা

গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে তথ্য-প্রযুক্তির অবারিত সুযোগের এই সময়ে স্যোশাল মিডিয়ার গুরুত্ব ও প্রভাব অনস্বীকার্য। তথ্য ও প্রযুক্তি মানব জীবনের উন্নয়নে নিয়ে এসেছে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন। মানুষের জীবনপ্রবাহকে করে তুলেছে বেগবান।

আর ইসলাম মানুষের জন্য যেকোনো কল্যাণকর জিনিসের সঠিক ব্যবহার অনুমোদন করে। তাই তথ্য ও প্রযুক্তির অপার দান স্যোশাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহারেও ইসলামের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় স্যোশাল মিডিয়ার ভুল ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের আগত প্রজন্মের অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোররা পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ করার বয়সে স্যোশাল মিডিয়ার নেশায় বুঁদ হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কমে যাচ্ছে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ। তাদের মধ্যে হ্রাস পাচ্ছে সামাজিক সৌজন্যতাবোধ। তৈরি হচ্ছে একটি ভারসাম্যহীন সমাজ কাঠামো। যা অকল্পনীয়, অভাবনীয়। এত সব ক্ষতির কথা জেনেও সমাজে কমছে না এর ব্যবহার। হ্রাস পাচ্ছে না স্যোশাল মিডিয়াপ্রীতি। কাজেই আমাদের উচিত এর ব্যবহারের কার্যকর পন্থার অন্বেষণ করা। ব্যবহারকারীদের মধ্যে নৈতিক প্রেরণা সৃস্টির মাধ্যমে এর সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা।

কোনো জিনিসের ভুল ব্যবহার হলে তা নিষিদ্ধ হয়ে যায় না। বরং ভুল ব্যবহার বন্ধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে ইসলামী ভাবধারায় শিক্ষিত সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে স্যোশাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার শেখানো তাদের নৈতিক দায়িত্ব।

বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি অর্থাৎ ইন্টারনেট তথা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তার জবাব ইসলামী ভাবধারায় শিক্ষিত সমাজ থেকেই আসা উচিত। ইসলামের নামে অসংখ্য নতুন নতুন ফিতনা, বিভ্রান্ত মতবাদের প্রতিবাদ তাদের ওপরই বর্তায়। সমাজে ইন্টারনেট, টিভি, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যবহার করায় বিমুখী নীতির প্রসার ‘মাথা ব্যথা হলে মাথা কেটে ফেলার’ নামান্তর। বরং যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে এসবই হতে পারে বিশ্ববাসীর নিকট ইসলামের সঠিক দিক তুলে ধরার সময়োপযোগী মাধ্যম।

প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে ইসলামবিরোধীরা স্যোশাল মিডিয়ায় নির্জলা মিথ্যা ছড়িয়ে দিচ্ছে। উসকে দিচ্ছে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা আর নগ্নতাকে। ত্বরান্বিত করে চলেছে নাস্তিকতার প্রচার; আর অবিশ্বাস তৈরি করছে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে। আধুনিক জাহেলিয়াতের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ইসলামের প্রকৃত বার্তা মানুষের কাছে তুলে ধরার দায়িত্ব আমাদের। মানুষকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের মৌলিক শিক্ষাগুলো তথ্যসূত্রসহ তুলে ধরা যেতে পারে।

ইসলামী ভাবধারা শিক্ষিত সমাজেরই দায়িত্ব প্রযুক্তির এই দিকহারা জাহাজের পাল টেনে ধরা। সেই সঙ্গে মানুষকে তার সঠিক ব্যবহার শিক্ষা দেওয়া। ইসলামের খেদমতে প্রযুক্তিকে কিভাবে আরো শক্তিশালী করা যায়, তা নিয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা। কারণ এখন মানুষ প্রযুক্তিনির্ভর। অফিস-আদালত, বই-পুস্তক, দোকানপাট সবই এখন হাতের মুঠোয়। আল্লাহর এই অমূল্য নেয়ামতগুলো যাতে তাঁর নাফরমানিতে ব্যবহার না হয়।

আল্লাহ বলেন, ‘আমি পৃথিবীর সব কিছুকে পৃথিবীর জন্য শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভালো কাজ করে।’ (সুরা কাহফ, আয়াত : ৭)

তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে দাঈ ইলাল্লাহ তথা আল্লাহর পথে আহ্বানকারীদের জন্য তাওহিদের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোরআন-সুন্নাহর শিক্ষা মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিতে হবে। ইসলামের অপার সৌন্দর্য সর্বসাধারণের কাছে তুলে ধরতে হবে। জাহেলিয়াতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সর্বত্র পৌঁছে দিতে হবে কোরআনের আলো। আর সে প্রচেষ্টায় সবারই অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ইসলামের দাওয়াত বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন!

  • মুফতি সাইফুল ইসলাম
    লেখক : প্রাবন্ধিক ও অনুবাদক, ফকিরের বাজার, নেত্রকোনা
সম্পর্কিত পোস্ট