বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফুটপাতের শরবত ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ | ৩:০৪ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ | ৩:০৪ অপরাহ্ণ
ফুটপাতের শরবত ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে

তীব্র তাপদাহে পুড়ছে পুরো দেশ, বাদ নেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামও। এই প্রচণ্ড গরমে নগরীর সড়কে সড়কে, মোড়ে মোড়ে বসছে ভ্রাম্যমাণ শরবতের দোকান। রমজানে সারাদিন মানুষ কিছু না খেলেও সন্ধ্যার পর দেদারসে পান করছেন এই শরবত। যা স্বাস্থ্যের জন্য চরম মাত্রার ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) সরজমিনে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে ব্যাপক মাত্রায় শরবত, বিভিন্ন নামী-বেনামি পানীয় বিক্রির দৃশ্য। এছাড়া নগরীর ব্যস্ততম স্থানগুলোর ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের ভর্তা এবং ভাজাপোড়া খাবার। বিশেষ করে নগরীর নিউ মার্কেট এলাকায় এর মাত্রা বেশি।

ঈদকে সামনে রেখে নিউ মার্কেট এলাকায় এাখন চলছে তুমুল ব্যস্ততা। বড় বড় শপিংমল থেকে শুরু করে হকার মার্কেটেও ভিড়ের কমতি নেই। প্রচণ্ড গরমের সাথে মানুষের শরীরের উষ্ণতা—বাড়িয়ে দিচ্ছে ভোগান্তি। পিপাসায় কাতর হয়ে মানুষ ‘খাবলে খাচ্ছে’ সড়কের পাশের এসব পানীয়।

দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর রসের সঙ্গে প্যাকেটের ‘ড্রিংক পাউডার’ মিশিয়ে বানানো হয় শরবত। পানিতে থাকে ঠান্ডা বরফ। যার বিশুদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেননি কোন দোকানি। লেবুর শরবতের পাশাপাশি বেল, পেঁপে, আখ, মাল্টা, আঙ্গুরের জুসও বিক্রি হয়। একই ব্লেন্ডারেই বারবার বানানো হয় জুস। একটু গ্লাসে বারবার পরিবেশন করা হয় সেই জুস। শুধু পানীয় নয়, উন্মুক্তভাবে বিক্রি হচ্ছে মৌসুমি ফল তরমুজ ও আনারস। রাস্তার পাশে ভাসমান দোকানিরা আনারস ও তরমুজ কেটে সুন্দর করে প্লেটে সাজিয়ে বিক্রি করছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাস্তার পাশের বিক্রি করা শরবত নিরাপদ নয়। তাদের শরবতের পানি, বরফ কোথায় থেকে আসে তারও ঠিক নেই। এগুলো পানে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হতে পারে। বিশেষ করে ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস ও ক্রিমি সৃষ্টি হতে পারে। আর লিভারের জটিলতা, পাকস্থলীতে প্রদাহ, খাদ্যনালিতে সমস্যা, আলসারসহ মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এছাড়া রাস্তার পাশের এসব পানি পান না করাই হচ্ছে মঙ্গলজনক। শরবত পান করে পেটের অসুখ, হেপাটাইটিস এ বা বি-সহ নানা রোগ হতে পারে। তবে তীব্র গরমে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে তা ঠিক। সে পানি হতে পারে লেবু শরবত। কিংবা উচ্চ রক্তচাপ না থাকলে খাবার স্যালাইন। কিন্তু এসব রাস্তার পাশে থাকা পানি পান করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। আবার বরফ মিশ্রিত এসব শরবতে কিডনি বিকল ও ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রামে গত কিছুদিন ধরে বেড়ে চলেছে ডায়রিয়া রোগীর প্রকোপ। নগরী এবং উপজেলার হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে দুই থেকে তিনগুণ। যাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। গরমের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়লেও এসব পানীয়ও ফুটপাতের খাবরও দায়ী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) সহযোগী অধ্যাপক ডা. মামুনুর রশিদ বলেন, গত কদিন ধরে বিআইটিআইডি হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। অতিরিক্ত গরমের কারণে যেখান-সেখান থেকে জুস, পানি এবং খাবার খাওয়ার কারণে এ রোগে আক্রান্ত বাড়ছে। বর্তমানে তরমুজের মৌসুম। তরমুজ কাটার পর যাতে ফ্রিজে রাখা না হয়। ফ্রিজে কাটা তরমুজ থাকলে ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমণ হয়। যা মানুষের শরীরে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাইরের খাবার যেমন হোটেল-রেস্তোরাঁর খাবার খাওয়া যাবে না। পানি অবশ্যই ফুটিয়ে খেতে হবে। যে কোনও কিছু খাওয়ার আগে ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলায় ১৪ এপ্রিলের পর থেকে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। এখন দৈনিক গড়ে দুইশর বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছেন। হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং স্যালাইন মজুদ আছে বলেও জানান তিনি। সেইসাথে সাধারণ জনগণকে স্বাস্থ্যঝুকি আছে এমন পানীয় পান না করার পরামর্শ দেন।

সম্পর্কিত পোস্ট