শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুবাইয়ে সাহিত্য সন্ধ্যা ‘গীতি-কাব্যে অরুণিমা’

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২১ | ৬:০২ পূর্বাহ্ণ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২১ | ১:৪৭ অপরাহ্ণ
দুবাইয়ে সাহিত্য সন্ধ্যা ‘গীতি-কাব্যে অরুণিমা’

দুবাইয়ের বুকে সন্ধ্যা নামতেই ল্যাম্পপোস্টগুলো সড়কের গায়ে কৃত্রিম আলো ছড়াতে শুরু করে। ঝলমলে শহরটির বুকে বিস্তৃত দুবাই ক্রিকে ইঞ্জিন চালিত নৌকাগুলো তখনও শব্দ করে ছুটে যায় যাত্রী পারাপারে। তার পাশেই শেরাটন দুবাই ক্রিক হোটেল। শুক্রবার সন্ধ্যায় কোলাহলপূর্ণ এই শহরের প্রবাসীরা শেরাটন হোটেলটিতেই আপন সংস্কৃতির চর্চা ও সাহিত্যের বিভিন্ন পরিবেশনা উপভোগ করে কাটালেন বেশকিছু সময়।

ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন ইউএই’র আয়োজিত এই সাহিত্য সন্ধ্যাটির নামকরণ করা হয়েছিল – ‘গীতি-কাব্যে অরুণিমা’। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত আটটা। জেবিন আহমেদ ও শারমিন আহসান মঞ্চে এসে উপস্থিতিকে সম্বোধন জানালেন। মঞ্চের মৃদু আলোয় নৃত্য পরিবেশনের জন্য ফারাহ শামসকে আমন্ত্রণও করে গেলেন তারা। এর মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠানের মূল পর্ব। লোকগীতি, দেশাত্ববোধক, রবীন্দ্র আর নজরুলের অনবদ্য সৃষ্টিতে মুখরিত হতে থাকে বলরুমে উপস্থিত দর্শকরা। কবিতা, সাহিত্য আর সংস্কৃতির মোহ মায়া তাদের হৃদয়ে দোল খায় দেশ-মাতৃকা।

ড. তারেক আহমেদের আবৃত্তি যেমন সবার মনোযোগ টানছিল তেমনি মুগ্ধ করছিল সামিদা চৌধুরী পপির কণ্ঠে ‘আজও মধুর বাঁশরী বাজে’ গানটির পরিবেশনা। দীর্ঘ সময় নিয়ে ‘কাদম্বরী দেবীর সুইসাইড নোট’ পরিবেশনায় স্নিগ্ধ সরকার তিথি, ইয়াসমিন মেরুনা ও আহমেদ ইখতিয়ার পাভেলের অংশগ্রহণ দর্শকদের সাহিত্যের গভীরে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

একটু পর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। নিভে যায় মঞ্চের আলো। দু’পাশে দেয়ালে রাখা পর্দায় ভেসে আসে কবিতা ‘ওড টু জর্জ ফ্লয়েড’। কবি জামাল হোসেনের লেখা এই কবিতাটি আবৃত্তি করেন কলকাতার সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। স্থিরচিত্র আর বর্ণনায় পুরো সাত মিনিট জুড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো বল রুম। এই যেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিজের মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা স্ফুলিঙ্গের ন্যায় বেরিয়ে আসা প্রতিবাদের ধ্বনি। কবিতা আবৃত্তি শেষে মঞ্চের আলো জ্বলতেই দর্শকদের করতালিতে সেই ভাবটুকুই যেন প্রকাশ পেল। এরপর সদরুদ্দিন জামাল উচ্ছ্বাস, সোনিয়া সামিয়া, বঙ্গশিমুল সহ সংগঠনের অন্যান্য সদস্যরাও একে একে নিজেদের পরিবেশনা সম্পন্ন করেন।

কবিতা কেন্দ্রীক অনুষ্ঠানের সূচিপত্র থাকলেও আয়োজকদের মুনশিয়ানায় স্বল্প সময়ে শেষ হয় অতিথি বরণ, শুভেচ্ছা বক্তৃতা ও সম্মাননা প্রদান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাউজান উপজেলার সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর তনয় ফারাজ করিম চৌধুরী। ইয়ুথ বাংলা কালচারাল ফাউন্ডেশন ইউএই’র উপদেষ্টা শেখ ফরিদ আহমেদ সিআইপির সার্বিক তত্বাবধানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সম্মাননায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ইয়াসমিন কালাম মেরুনা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন বলেন, আমরা শেকড় থেকে বিচ্যুৎ হলে গর্ব করার কিছুই থাকবে না। আমরা যেন শেকড়ের সন্ধান করি। আমাদের শেকড় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের দেশ, আমাদের স্বাধীনতা। যিনি এই ভুখন্ড স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন সেই মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তিনিই আমাদের বিশুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চা করার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন।

বিশেষ অতিথি ফারাজ করিম চৌধুরী বলেন, এই অনুষ্ঠান থেকে আমি যতটুকু শিখতে পেরেছি, আট-দশটি রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গেলেও এত অভিজ্ঞতা হতো না। আমাদের তরুণদের আধুনিক হতে বাধা নেই। তবে সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রেখে আধুনিক হতে হবে। মনে রাখতে হবে, সংস্কৃতি বদল না করে বরং সংস্কৃতিকে ব্যবহার ও নিজেকে সঠিক নিয়মে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।

এসময় সংগঠনের কয়েকজন পৃষ্ঠপোষকের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন সংগঠনের উপদেষ্টা শেখ ফরিদ আহমেদ সিআইপি। সম্মাননা প্রদানকালে সংগঠনের উপদেষ্টা শেখ ফরিদ আহমেদ সিআইপি ও সভাপতি ইয়াসমিন কালাম মেরুনা অনুষ্ঠানে আগত অতিথি এবং প্রবাসীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এরপর নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ইতি টানেন আয়োজকরা।

সম্পর্কিত পোস্ট