শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চাকরির নিয়োগে আবেদন ফি বাতিল হোক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১ | ৪:৩৬ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২১ | ৪:৩৬ অপরাহ্ণ
চাকরির নিয়োগে আবেদন ফি বাতিল হোক

শিক্ষা অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা মুখোমুখি হয় চাকরি নামক সোনার হরিণের। সেখানে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। পদের চেয়ে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা হয় বহুগুণ বেশি। সেক্ষেত্রে গ্রামের শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে। গরীব ও মেধাবীরা আরো পিছিয়ে থাকে। পিছিয়ে থাকার কারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা নয়, হতে পারে দারিদ্রতা কিংবা লবিং দুর্বলতা! এর ফলে বাড়তে থাকে বেকারত্বের হার।

বহুদিন ধরে চাকুরির নিয়োগের ক্ষেত্রে আবেদন ফি নিয়ে বিভিন্নভাবে বিতর্ক চলে আসছে। কেউ বলেন, আবেদন ফি নূন্যতম করা যায়। কেউ বলেন একেবারে মওকুফও করা যায়।

চাকুরির আবেদন ফি নিয়ে বিতর্কের প্রেক্ষিতে আমি মনে করি, ফি বাতিল করাই উচিত। কেননা একজন চাকুরি প্রার্থীকে যোগ্যতা অনুযায়ী অনেকবার আবেদন করতে হয়। আর সব আবেদনকারীকে সামর্থ্যবানও বলা যাবে না। দরিদ্র পরিবারের অনেক সন্তান আছে, যাদের দিনে দু’বেলা খাবারও জোটে না। কষ্ট করে হয়ত লেখাপড়া করেছে, চাকরির জন্য আবেদন করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে আবেদন ফি হয় মাত্রাতিরিক্ত। যা খুবই দুঃখজনক। বিভিন্ন মহল থেকে এই নিয়ে কথা উঠলেও কোন সুরাহা হয় না।

একজন শিক্ষার্থী সারাজীবন পড়ালেখা করার কারণে তার অনেক অর্থ ব্যয় হয়। গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে, টিউশনি করে কিংবা কোন হৃদয়বান ব্যক্তির সহযোগিতা নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। বিত্তবান লোকের ছেলেমেয়েরা হয়ত কোনধরণের কষ্ট ছাড়াই তাদের শিক্ষার পাঠ শেষ করে। যদিও তাদের সংখ্যা তত বেশি নয়। এমনিতে তাদের অনেক সন্তান সন্ততি বিদেশ গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ওখানেই সেটেল হয়। এখানেও বেশিরভাগ চাকরির দিকে ঝুঁকে না। তারা তাদের বাবার ব্যবসাপাতি দেখাশোনা করে। সেই হিসেবে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত বা দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই চাকরির প্রতি আগ্রহী। চাকরির সুবাদে তারা মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান নিয়ে একটি ছোট্ট সংসারের স্বপ্ন দেখে।

এসব পর্যালোচনা করে বলা যায়, রাষ্ট্রের কাছে চাকরিপ্রার্থীদের এটুকু আবদারতো (আবেদন ফি মওকুফ) থাকতেই পারে। সরকার চাইলে, যে কোনোভাবে এই বিষয়টি ম্যানেজ করতে পারেন। এমনিতে কত টাকা কতদিকে চলে যায়! অতিরিক্ত কোনো একটি খাত থেকে এর ব্যয় মেটানো যেতে পারে।

অনেক চাকরিপ্রার্থী আছেন যারা আবেদন ফি দিতে দিতেই ফতুর হয়ে যান। ক্ষয় হয় জুতার তলা। শেষ পর্যন্ত অনেকের চাকরিও হয় না। বেঁচে নিতে হয় প্রবাস জীবন বা অন্য কোনো কাজ। এসব দেখলে মন খারাপ হয়। কষ্টের মাধ্যমে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করেও চাকরি না হলে মনক্ষুন্ন হতে পারে যে কারোরই। এখন অবশ্য অনেকে উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ক্ষুদ্রব্যবসা বা অন্যকোনো কাজ করতে উদ্যোগী হচ্ছেন। এটা ভালো দিক। বেকারত্ব দূর করতে এটি সহায়ক হবে।

যেটা বলছিলাম, চাকরির আবেদনে ফি বাতিল করার সময় এসেছে। অথবা এমন একটি ন্যূনতম ফি নির্ধারণ হোক যা দিতে কারো পক্ষে কোনো প্রকার কষ্ট হবে না। এটা প্রতি নিয়োগ পরীক্ষার জন্য একই রাখাই উচিত হবে বলে মনে করি।

উপরের আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, নানা কারণে চাকরির নিয়োগে আবেদন ফি সম্পূর্ণ বাতিল করাই যুক্তিসংগত। এর মাধ্যমে মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা চাপ ছাড়াই নিয়োগ পরীক্ষায অংশ নিতে পারবে। এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

  • শিক্ষক ও কলামিস্ট

( পাঠক মতামত-এ প্রকাশিত সকল লেখার দায় কেবল লেখকের। এর সঙ্গে সময়ের সংলাপ কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পর্ক নেই।)

সম্পর্কিত পোস্ট