‘সাম্প্রদায়িকতা হারিয়ে দেয়ার মোক্ষম হাতিয়ার কবিতা। যে পরিমাণ সাম্প্রদায়িকতা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে লুকিয়ে তৈরি হচ্ছে একমাত্র কবিতা সেই শেকড়টা উপড়ে দিতে পারবে।’ কবি তানিয়া চক্রবর্তী এভাবেই কবিতার শক্তি বর্ণনা করছিলেন।
শনিবার রাতে ছিল তার লেখা ‘বৃত্ত’ নামের কবিতার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। শারজাহ বাংলাদেশি সমিতির হলরুম এই কয়েকঘন্টা কবিতার বৃত্তে আবদ্ধ ছিলেন প্রবাসী সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রেমীরা।
এই ফাঁকে কবিও আহবান করলেন, ‘বৃত্তের মধ্যে আপনারাও আসুন, বৃত্তকে গ্রহণ করুন।’
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেনের আঁকা কিছু ছবির রহস্য উন্মোচন করতে গিয়ে কবি তানিয়া চক্রবর্তী লিখে ফেলেন এই কবিতা গ্রন্থ। পাতায় পাতায় ছবি, পাতায় পাতায় কবিতা। ছবি আর কবিতার এই মেলবন্ধনকে আরো বেশি গুরুত্ববহ করে তোলে ইংরেজি, উর্দু, আররি ও হিন্দি ভাষায় কবিতাগুলোর অনুবাদ। বৃত্ত-এর কবিতাগুলো চারটি ভাষায় অনুবাদ হওয়ায় বইটি অনন্য এক মাত্রায়ও নিয়ে গেছে বলে অভিমত জানান উপস্থিত সাহিত্য-সংস্কৃতি প্রেমীরা।
কবি তানিয়া চক্রবর্তী বললেন, ‘কবিতা বা শিল্পের কোনো নির্দ্দিষ্ট কারণ থাকে না। যার কাছে আসে, তার কাছে অতিপ্রাকৃতিকভাবে আসে। কবিতা আমার কাছে ঘুমন্ত শিশুর মতো। ঘুমের শিশু যেভাবে বাড়ে, আমার কবিতাও নিভৃতে বাড়ে।’
কবি তানিয়া চক্রবর্তী যেভাবে বললেন, ‘জামাল ও আমার এই প্রয়াসকে ভালোবাসুন’। তেমনই কবি ও শিল্পী বিএম জামাল হোসেনও তানিয়ার মুনশিয়ানার বর্ণনা করতে ভুল করেননি।
বিএম জামাল হোসেন বললেন, ‘একটি সাদা কাগজে কলমের একফোঁটা কালি পড়ে গেলে শিল্পী সেখান থেকেই শুরু করেন, একসময় শেষ হয়। শিল্পীর অবচেতন মনে আঁকা সেসব ছবির অর্থ শিল্পী জানেন না। এমন কিছু ছবি তানিয়াকে পাঠিয়েছিলাম। সে ছবিগুলোর হৃদয় খুঁড়ে কবিতা বের করে নিয়ে আসে। এটি তার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। সে প্রত্যেকটি ছবি থেকে এমন ভাব, রহস্য আর অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে, তার কবিতাগুলো পড়ার পরে আমি জেনে অভিভূত হয়েছি। সে যদি এগুলো টেনে বের না করত, কোনোদিনও আমি এটি আবিষ্কার করতে পারতাম না।’
বক্তব্যে তিনি কয়েকজন কবির দেশপ্রেম, বিদ্রোহ আর প্রেম নিয়েও বর্ণনা করলেন। পাশাপাশি দুবাই ও উত্তর আমিরাত প্রবাসীদের জন্যে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। এই বার্তা সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব দূর করার বার্তা।
‘বইমেলার মাধ্যমে সাহিত্য-সংস্কৃতির একটি গোড়াপত্তন করতে চাই। সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বের যে কথা ওঠে এসেছে, সেই বন্ধ্যাত্বের অবসানে আজ প্রথম শিশুর জন্ম হলো।’
বক্তব্য শেষ করতে গিয়ে জামাল হোসেন এভাবে আশার বাণী শোনান।
বৃত্ত বইটির মোড়ক উন্মোচনের আয়োজন করেছে আরবান রিডার্স ও বায়ান্ন টিভি।
আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা প্রকৌশলী নওশের আলী আরবান রিডার্সের পক্ষে কথা বললেন। ওই সংস্থা বইপ্রেমীদের উৎসাহিত করে তোলার কথা জানালেন। কিন্তু পাঠক কই! তার বক্তব্যে এমন হতাশার কথা প্রকাশ পেলেও কার্যত তিনি আশায় বুক বাঁধছেন।
বললেন, ‘বই ঠিকই আছে কিন্তু পড়ার মানুষ নাই। কনসাল জেনারেল নিজেই একজন কবি। তিনি একটি নতুন কমিউনিটি গড়ে তোলার জন্য যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, আমি আশাবাদী, এটি দেখেই আমি খুশি। বৃত্ত-এর মোড়ক উন্মোচন দিয়ে আমরা একটি সাংস্কৃতিক যাত্রার শুরু করতে যাচ্ছি। আমরা ভাল কিছুর দিকেই আগাচ্ছি। আমাদের সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব দূর হবে এবং তা আজকে থেকেই শুরু হলো।’
বইয়ের মোড়ক উন্মোচনে প্রধান অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখেন আরবি কবি সুলতান আল কেতবি।
এসময় তিশা সেনের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরো অংশ নেন হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহতাবুর রহমান নাসির সিআইপি, আবুধাবি বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন, শারজাহ বাংলাদেশ সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব এম এ বাশার, আরিফ ভালদার, আনোয়ার শাজাহান ও লুৎফুর রহমান।