শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

৫ লাখ আবেদন জমা পড়েছে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে

প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২২ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২২ | ১২:৪০ অপরাহ্ণ
৫ লাখ আবেদন জমা পড়েছে মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নিয়োগে

বিদেশি কর্মী নিয়োগে চার লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৮টি আবেদন জমা পড়েছে মালয়েশিয়ার মন্ত্রণালয়ে। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী দাতুক সেরি এম. সারাভানান বলেন, ১ এপ্রিল পর্যন্ত নিয়োগকর্তাদের কাছ থেকে এ আবেদন জমা পড়ে।

এর মধ্যে দুই লাখ ৯০ হাজার ২৪৮টি আবেদন রয়েছে উৎপাদন খাতে শ্রমিক নিয়োগের জন্য। আর সেবা খাতে ৭৭ হাজার, বৃক্ষরোপণে ৫৩ হাজার ৮৫৪, নির্মাণে ৪৩ হাজার ৫১৯, কৃষিতে ১১ হাজার ৩৭, খনি ও কোয়ারিতে ২০টি নিয়োগের আবেদন রয়েছে।

সারাভানান বলেছেন, এ পর্যন্ত উৎপাদন এবং প্ল্যান্টেশন সেক্টরে দুই হাজার ৬০৫ বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

৪ এপ্রিল এক বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, অসম্পূর্ণ বা ভুল তথ্য প্রদান এবং কোটা অতিক্রমসহ বিভিন্ন কারণে প্রক্রিয়া করা যায়নি এমন আবেদনও রয়েছে। কর্মসংস্থানের সব সেক্টরে বিদেশি কর্মী নিয়োগের আবেদন ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান।

গত বছরের ১০ ডিসেম্বর দেশটির মন্ত্রী বলেছিলেন, মালয়েশিয়ায় পাঁচটি (বিপজ্জনক, কঠিন) সেক্টরে শ্রমিক সংকট রয়েছে। যেমন- বৃক্ষরোপণ, উৎপাদন, উন্নয়ন ও কৃষি।

এদিকে গেলো বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সইয়ের পর চলে গেছে প্রায় চার মাস। কিন্তু মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে তিন বছরের বেশি সময় মালয়েশিয়া যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্মীদের হতাশা বাড়ছে।

দুই দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং আন্তর্জাতিক রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ সীমিত সংখ্যক বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্টের (বিআরএ) মাধ্যমে বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়োগ দিতে চায়। তবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সব বৈধ সংস্থাকে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিতে চায়। দুই দেশের আলাদা এ নীতির কারণে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া এখনও স্থগিত রয়েছে।

মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সব রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়িত্ব দিয়ে ডাম্পিং গ্রাউন্ড করা যাবে না। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আমরা সিন্ডিকেটের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না, কর্মী পাঠানোর পক্ষে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়ায় বিদেশি চাকরিপ্রার্থীদের মর্যাদাপূর্ণ অভিবাসন নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ।

দেশটিতে কর্মী পাঠাতে গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশ। এরপর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি এক চিঠির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান জানান, বাংলাদেশের সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করা হবে না। ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে আরও ২৫০টি এজেন্সি সহযোগী হিসেবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে।

এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে ১৮ জানুয়ারি পাল্টা চিঠি দেন বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।

এক মাস পর ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মাধ্যমে আরেকটি চিঠি দেওয়া হয় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মানবসম্পদ মন্ত্রীকে। সেই চিঠিতে রিক্রুটিং এজেন্সি সংখ্যা নির্বাচনে স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল পদ্ধতি এবং দুই দেশের অনলাইন পদ্ধতি যুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এজন্য একটি যৌথ কারিগরি কমিটির বৈঠক আহবান করতে অনুরোধ জানানো হয় চিঠিতে। যদিও এর কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি মালয়েশিয়া।

উল্টো ১০ মার্চ মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন, সব রিক্রুটিং এজেন্সির জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করবে না মালয়েশিয়া। তিনি আরও বলেন, প্রতিটি দেশে কয়েক হাজার এজেন্সি আছে। সবাইকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিয়ে মালয়েশিয়ায় ডাম্পিং গ্রাউন্ড করতে চাই না।

জোর করে শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগের বিষয়ে গত ১০ মার্চ দেশটির বিভিন্ন সংস্থা, বিদেশি প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

এই মতবিনিময়ে নানা বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দেন এম সারাভানান। তিনি বলেন, এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, আমরা শ্রমিকদের জোর করে অতিরিক্ত কাজে বাধ্য করার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আমার সহকর্মীদের প্রতি বিনীত অনুরোধ করছি যে, এজেন্সি দ্বারা সোর্স কান্ট্রিতে কর্মীরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ কারণেই আমি বিদেশি কর্মী আনতে এজেন্সি সীমিত করেছি।

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী বলেন, আমি সারাবিশ্বে আমার সহকর্মীদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে আমাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছি। আমরা সঠিক পথেই আছি। আর সোর্স কান্ট্রির কারণে যেন কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং এখানে শিল্প কারখানাতেও যেনো কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হবে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় ‘সি’ ক্যাটাগরির অধীনে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৫০১টি কর্মসংস্থান সংস্থা বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়া যদি কোনো বেসরকারি কর্মসংস্থান সংস্থা বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য আবেদনপত্রের এই নিয়মের অপব্যবহার করে তাহলে ০৩-৮৮৮৬ ৫১৯২ এই নম্বরে দেশটির জনশক্তি বিভাগে জানানোর অনুরোধ করেন এম সারাভানান।

সংলাপ-০৫/০৪/০০১/আ/আ

সম্পর্কিত পোস্ট