দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই প্রথম ইউরোপের প্রথম দেশ হিসাবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ এবং সমুদ্রপথে ইউক্রেনে সবচেয়ে বড় হামলা শুরু করেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বৃষ্টির মতো পড়েছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের চেরনিহিভ, খারকিভ এবং লুহানস্ক সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রুশ সৈন্য স্থলপথে দেশটিতে ঢুকে পড়েছে।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। আজ এই শহরের বাসিন্দাদের ঘুম ভেঙেছে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দে। বন্দুকের আওয়াজ, সাইরেনের শব্দ আর বাসিন্দাদের পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় শহরের বাইরের প্রধান মহাসড়কটি যানজটে শ্বাসরুদ্ধকর হয়ে পড়ে, বলছে রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে কিয়েভে বিস্ফোরণের পর ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা সদরদফতর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। যুদ্ধ এড়াতে পশ্চিমা নেতাদের ব্যর্থ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার পর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেওয়ার পর নজীরবিহীন সংঘাতের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের সর্বশেষ চিত্র তুলে ধরেছে এক প্রতিবেদনে। সময়ের সংলাপের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো…
• রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তার উদ্দেশ্য হলো ইউক্রেনকে নিরস্ত্রকরণ করা এবং নাৎসিবাদ হটানো।
• ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের বর্ষণ হয়েছে এবং রাজধানী কিয়েভের কাছে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেন বলছে, কিছু সামরিক কমান্ড আক্রান্ত হয়েছে।
• ন্যাটোর মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ন্যাটো শতাধিক যুদ্ধবিমান সতর্ক অবস্থায় রেখেছে। এসব যুদ্ধবিমান ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে জোটের সৈন্যদের শক্তিশালী করবে। তবে ইউক্রেনে মোতায়েনের পরিকল্পনা নেই।
• ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি দেশ রক্ষায় নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে লড়াইয়ে যোগ দিতে চান, তাদের প্রত্যেককে অস্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
• ক্রেমলিন বলেছে, সামরিক অভিযানের ব্যাপ্তি নির্ভর করবে এটি আসলে কীভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং আদর্শগতভাবে কিয়েভের সামরিক সক্ষমতা নিরস্ত্র করার ওপর।
• রাশিয়ার সব সম্পদ জব্দ করার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার ব্যাংকের প্রবেশ বন্ধ এবং ক্রেমলিনের স্বার্থকে তার ‘বর্বরোচিত হামলার’ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার কথা বলছে ইইউ।
• মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনের আজকের হামলাকে ‘পূর্বপরিকল্পিত যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করে জি৭ এর পক্ষ থেকে ‘কঠোর’ নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
• ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা লোকজনকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে মধ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।
• রাশিয়ার পদক্ষেপকে ‘আগ্রাসন’ বলতে নারাজ চীন এবং সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
• বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ফেলে দেওয়ার কারণে ইউরোপীয় শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন ঘটেছে। রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের দাম সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে।
কী বলছেন বিশ্ব নেতারা?
• পুতিন বলেছেন, আমি ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছি… সেই সমস্ত লোকজনকে রক্ষায় যারা কিয়েভের নিপীড়ন এবং গণহত্যার শিকার হয়েছেন। আমরা ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং নাৎসিমুক্ত করবো।
• ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া অশুভ পথে যাত্রা করেছে। তবে ইউক্রেন নিজেকে রক্ষা করছে এবং মস্কো যা ভাবুক না কেন, ইউক্রেনের স্বাধীনতা কোনোভাবেই সমর্পণ করা হবে না।
• স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ইতিহাস পুনর্লিখনের চেষ্টায় বলপ্রয়োগ করছে রাশিয়া। ইউক্রেনে ন্যাটোর সৈন্য পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা যা করছি তা রক্ষণাত্মক।
• এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের মিত্র ও অংশীদাররা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
যা ঘটতে পারে
• রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার জি৭ সদস্যদের সাথে বৈঠক করবেন জো বাইডেন।
• ইইউ নেতারা বৃহস্পতিবার নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা করবেন।
• শুক্রবার জরুরি শীর্ষ সম্মেলনে বসবে ন্যাটো।
• জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করবে।
• ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের নীতিনির্ধারকরা সংকটালীন বৈঠকে বসতে পারেন।