নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী রিয়াজকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। একইসঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে তার চার সহযোগীকে।
বুধবার (৬ এপ্রিল) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর একটি দল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, রিয়াজ একজন পেশাদার খুনি ও অবৈধ অস্ত্রধারী শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি রিয়াজুল ইসলাম এবং শুটার রিয়াজ নামেও পরিচিত।
গ্রেপ্তার বাকিরা হলেন- রিয়াজের সহযোগী মো. জাহিদুল ইসলাম (কালা ভাগিনা), মারুফ হোসেন মুন্না, মো. সেলিম, মো. মাহবুব মিয়া।
আজ (৭ এপ্রিল) দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে র্যাব এসব কথা জানায়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৯ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজি কেন্দ্র করে প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় একজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় আহত হন ২০ জন। ওই সময়ে এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর করা হয়।
তার আগে ১৫ মার্চ রূপগঞ্জ এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শফিক ও শামীম মল্লিক নামে দুই ব্যক্তিকে তাদের বাসার সামনে অতর্কিতভাবে এলোপাথাড়ি গুলি করা হয়। আবার ২০২১ সালের ২৩ ডিসেম্বর রূপগঞ্জে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে বিদ্যুৎ নামে একজনকে এলোপাথাড়ি গুলি করা হয়। সেই গুলিতে পাশের বাড়ির একটি মেয়ের চোখ নষ্ট হয়ে যায়।
এ ঘটনাগুলো রিয়াজ বাহিনীর প্রধান শুটার রিয়াজের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে।
গ্রেফতারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, সোনারগাঁও ও তার আশপাশ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তাদের দলের সংখ্যা ১০-১৫ জন। গ্রেফতার রিয়াজের নেতৃত্বে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করতে তার বাহিনী অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিত।
কমান্ডার মঈন বলেন, রিয়াজের নেতৃত্বে এ সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি, মার্কেট ও বাসস্ট্যান্ডে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম পরিচালনা করত। তারপরও কেউ চাঁদা দিতে না চাইলে ত্রাস সৃষ্টির জন্য হামলা, আক্রমণ ও আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। ভয়ে রিয়াজ বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ কথা বলার সাহস পেত না। রিয়াজের নেতৃত্বে তার সন্ত্রাসী দল এলাকার বালু ভরাট ও মাটি কাটার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এছাড়াও ট্রাক প্রতি নির্ধারিত হারে তার দল চাঁদাও নিয়ে থাকে।
শুটার রিয়াজের পরিচয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বড় ভাইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হন তিনি। রূপগঞ্জ ও সোনারগাঁও এলাকায় চাঁদাবাজি, ভূমি দখল ও ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে অপরাধ জগতের লোকজনের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে সে ব্যক্তির সাথে মনোমালিন্য হলে রিয়াজ নিজেই একটি সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলে। তিনি তার সহযোগীদের অস্ত্র সরবরাহ শুরু করে।
রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, মারামারি, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় ১৫টি মামলা ও বেশ কয়েকটি জিডি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাগারে ছিলেন।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামিদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবে র্যাব।