বিশ্বের সর্ববৃহৎ সিফুড এক্সপো গ্লোবালের আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে লাল সবুজের বাংলাদেশও। স্পেনের পর্যটন নগরী বার্সেলোনায় প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত ২৮তম বিশ্বের বৃহৎ এ সিফুড এক্সপো গ্লোবাল গত ২৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয়। শেষ হয় ২৮ এপ্রিল।
এবারের সিফুড এক্সপো গ্লোবালে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশের ৯টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আদেশ এবং ১২০ লাখ ডলারের সম্ভাব্য রপ্তানি আদেশ পেয়েছে। এতে করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে বাংলাদেশের সম্ভাবনার বার্তাটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে সদ্য শেষ হওয়া বার্সেলোনা সিফুড এক্সপো গ্লোবালের মাধ্যমে ইতিবাচকভাবে পৌঁছে দেওয়া গেছে বলে মনে করছেন স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর পৃষ্ঠপোষকতায় স্থাপিত বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে বাংলাদেশের সিফুড রপ্তানিকারক ৯টি কোম্পানির পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সিফুড রপ্তানিকারক এজেন্ট, সিফুড সম্পৃক্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং বাংলাদেশ ফিস ও শ্রিম্প ফাউন্ডেশন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ সিফুড মেলায় অংশগ্রহণ করেছে।
২৬ এপ্রিল মেলার প্রথম দিনে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান এবং স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ এনডিসি।
এ সময় বাংলাদেশ মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রোগ্রামের টিম লিডার সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেইন, বার্সেলোনায় বাংলাদেশের অনারারি কনসাল রামন পেদ্রো, স্পেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নুরিয়া লোপেজ, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং শীর্ষ সিফুড রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা উপস্থিত ছিলেন।
রাতে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বার্সেলোনার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ীদের সম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। রিয়েল ক্লাব নটিক দে বার্সেলোনাতে আয়োজিত এ নৈশভোজে সাবাদেল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি রামন আলবেরিখ, রেউস চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খরদি জুস্ট মিরো, কাতালোনিয়ার জেনারেল কাউন্সিল অব চেম্বারের সিইও নার্সিস বোশ, কাসা এশিয়া বার্সেলোনার ডিরেক্টর আমাদেও জেনসানা, স্পেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নুরিয়া লোপেজ, গ্লোবাল সিফুড এলায়েন্সের প্রেসিডেন্ট ড. জর্জ চেম্বারলিন, সিউদাত দে লা বার্সেলোনার ডিরেক্টর এস্টেলা বেরগেলসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্প্যানিশ ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ থেকে ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং শীর্ষ সিফুড রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারেরা ছাড়াও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এএইচএম আহসান, পরিচালক মাহমুদুল হাসান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব তানিয়া ইসলাম, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হাফসা বেগম, স্পেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সারওয়ার মাহমুদ এনডিসি, মিশন উপপ্রধান এটিএম আব্দুর রউফ মন্ডল ও কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
নৈশভোজে বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর রেদোয়ান আহমেদের পরিচালনায় আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় রাষ্ট্রদূত সারওয়ার মাহমুদ স্পেনের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহবান জানান।
মেলার ২য় দিন বাংলাদেশ শ্রিম্প অ্যান্ড ফিস ফাউন্ডেশন ও গ্লোবাল সিফুড এলায়েন্সের যৌথ উদ্যোগে ‘রেভিটালাইজেশন অব ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্প ইন দা গ্লোবাল সিফুড মার্কেট’ বিষয়ে ইউরোপিয়ান সিফুড আমদানিকারক ও পরিবেশকদের সঙ্গে এক মধ্যাহ্নভোজ সভার আয়োজন করা হয়। এতে ব্ল্যাক টাইগার শ্রিম্পের সমস্যা, সম্ভাবনা, উত্তরণ নিয়ে আলোচনা করেন পার্টনারশিপ এসুরেন্স মডেলের করম্যাক ও সুলিভান, সি ফ্রেশ গ্রুপের ডমিনিক গোটিয়ে, এশিয়া শ্রিম্প ইম্প্রুভমেন্ট কোলাবোরটিভের ত্রিনি প্রাতিউই এবং সাসটেইনেবল ফিশারিজ পার্টনারশিপের এলেনা পিয়ানা।
এ আলোচনায় বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রোগ্রামের টিম লিডার সাবেক এনবিআর চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেইন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সারওয়ার মাহমুদ অংশগ্রহণ করেন।
সিফুড এক্সপো গ্লোবালে এবারের অংশগ্রহণকারী ৯টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ক্রিমসন রোজেলা সিফুড লিমিটেড, এম ইউ সিফুডস লিমিটেড, সাউদার্ন ফুডস লিমিটেড, ব্রাইট সিফুড লিমিটেড, ন্যাশনাল সিফুড ইন্ডাস্টিজ লিমিটেড, বিডি সিফুড, সবি ফিশ প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, গ্লোব ফিশারিজ লিমিটেড এবং মাসুদ ফিশ প্রসেসিং অ্যান্ড আইস কমপ্লেক্স লিমিটেড প্রায় ৬০ লাখ ডলার রপ্তানি আদেশ ও ১২০ লাখ ডলারের সম্ভাব্য রপ্তানি আদেশ পেয়েছে।