সক্রেটিসের দেশে ভালো নেই বাংলাদেশিরা। বলছি প্রাচীন সভ্যতার দেশ গ্রিসের কথা। এ দেশটি যেন বাংলাদেশি অভিবাসীদের প্রতি যেন দিন দিন কঠোর হচ্ছে। চলতি মাসে বাংলাদেশ ও গ্রিসের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ চুক্তিটি কারো জন্য আর্শিবাদ হলেও সিংহভাগ বাংলাদেশিদের জন্য যেন অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে।
দেশটির কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের কর্মীর চাহিদা পূরণ করছেন এই বাংলাদেশিরা। কিন্তু অনিয়মিত অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে তোড়জোর শুরু করেছে সরকার। এরই মাঝে ২০১৬ সালের পর প্রথমবারের মতো অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে ইউরোপের দেশ গ্রিস। সম্প্রতি একটি চার্টার ফ্লাইটে করে ১৯ জনকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে বাংলাদেশি অভিবাসীদের মাঝে। এবার আন্দোলনে নেমেছেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ও হেলেনিক রিপাবলিক গ্রিসের মধ্যে জনশক্তি রপ্তানি সংক্রান্ত বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্মারক সইয়ের ফলে প্রতিবছর চার হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে কাজ করার সুযোগ দেবে গ্রিস। এতে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ এবং গ্রিসের পক্ষে দেশটির মিনিস্টার অফ মাইগ্রেশন অ্যাণ্ড অ্যাসাইলাম প্যানাইয়োটিস মিতারাচি সই করেন।
সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে গ্রিসের অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়- বর্তমানে গ্রিসে অবস্থান করছেন এমন ১৫ হাজার বাংলাদেশিকে মৌসুমি কাজের অনুমতি দেয়া হবে। এর বাইরে বছরে ৪০০০ বাংলাদেশি নাগরিককে মৌসুমি কাজের ভিসা দিবে দেশটির সরকার, যা পাঁচ বছর ধরে চলমান থাকবে। আবেদনকারীর অবশ্যই কাজের নিয়োগপত্র থাকতে হবে, যা দিবেন গ্রিসের নিয়োগকর্তা। এই ভিসার অধীনে গ্রিসে বছরে নয় মাস পর্যন্ত রেসিডেন্স পারমিট বা থাকার অনুমিত মিলবে। ভিসাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্বের আবেদন করতে পারবেন না।
ইউরোপের মৌসুমি শ্রমিক আইন অনুযায়ী, তারা পরিবারের সদস্যদের আনারও অনুমতি পাবেন না৷ সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে গ্রিসের মন্ত্রী জানান, এই চুক্তিটি গ্রিসের পার্লামেন্টে অনুমোদনের মাধ্যমে শিগগির বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর পক্রিয়া নির্ধারণ হবে। কোন কোন খাতে লোক নেয়া হবে সেটাও এখনো নির্ধারণ হয়নি। তবে প্রথমেই কৃষি খাতে নেয়ার পর অন্যান্য খাতে কর্মী নেয়া সম্ভবনা রয়েছে। প্যানাইয়োটিস মিতারাচি বলেন, বাংলাদেশি কর্মীরা পরিশ্রমী হলেও মানবপাচারকারীরা তাদের ফাঁদে ফেলে সর্বশান্ত করছে।
এ চুক্তির ফলে বাংলাদেশি কর্মীদের স্বার্থ সংরক্ষিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সমঝোতা স্মারকের ফলে বাংলাদেশের কর্মীদের জন্য গ্রিসে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হলো বলে জানায় মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে গ্রিসে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা পর্যায়ক্রমে বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু যারা এখনো এসাইলাম আবেদনের সুযোগই পাননি তারা রয়েছেন আতংকে।
অব্যাহত থাকবে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া:
গ্রিসে বসবাস করেন প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি। গ্রিক সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈধ অনুমতি নিয়ে দেশটিতে বসবাস করা বাংলাদেশিদের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। এর বাইরে অনেকে রয়েছেন যাদের বসবাসের অনুমতি নেই বা আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে। অবৈধ উপায়ে গ্রিসে প্রবেশ বন্ধে কড়াকড়ির পাশপাশি সম্প্রতি এমন অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও তৎপর হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২০১৬ সালের পর গত ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো চার্টার ফ্লাইটে করে ১৯ বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়েছে দেশটি।
সেই সময়ে নোতিস মিতারাচি দেশটির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আওতায় যারা নেই তাদেরকে ফেরত পাঠাচ্ছে গ্রিস।’’ নতুন সমঝোতা স্মারকে ফেরত পাঠানোর এই প্রক্রিয়া আরো জোরদারের কথা বলা হয়েছে। গ্রিসের অভিবাসী ও শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে লড়াই ও অবৈধভাবে যারা বসবাস করছে তাদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। পাচারচক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে গ্রিসের অবস্থান পরিস্কার।’’
এদিকে গ্রিসে অবস্থানরত প্রবাসীদের অনুরোধ আগে অবৈধদের বৈধ করে পরে যেন নতুন করে কর্মী নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এসব দাবি নিয়ে প্রবাসী অধিকার পরিষদ গ্রিস শাখার আয়োজনে গ্রিক সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন প্রবাসীরা। রোববার গ্রিক সংসদ ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে প্রবাসীরা। এতে পাকিস্তান কমিউনিটি, গ্রিসের কেরপাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সম্প্রতি গ্রিস থেকে ১৯ বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও অনিয়মিতদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়। ওপরদিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার খবরে নানা তৎপরতা শুরু করেছে দালাল চক্র। এসব দালালদের ফাঁদে পা না দিয়ে সবাই সর্তক থাকার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস।