বৃহস্পতিবার, ৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি স্টেশন চালু করছে ভারত

প্রকাশ: ৮ আগস্ট ২০২২ | ৮:১৯ অপরাহ্ণ আপডেট: ৮ আগস্ট ২০২২ | ৮:১৯ অপরাহ্ণ
শ্রীলঙ্কায় জ্বালানি স্টেশন চালু করছে ভারত

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকট প্রশমনে ভারতের তেল কোম্পানি লঙ্কা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনকে (এলআইওসি) দেশজুড়ে ৫০টি নতুন জ্বালানি স্টেশন চালুর অনুমতি দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সোমবার এলআইওসির একজন কর্মকর্তা ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

গত সাত দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ফুরিয়ে যাওয়ায় জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মূল্য পরিশোধ করতে পারছে না দেশটি। ডিজেলের সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না লঙ্কান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো।

ফলে গত কয়েক মাস ধরে সেখানে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। জ্বালানি সংকটের কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে দেশটির যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা।

ভারতীয় তেল কোম্পানি লঙ্কা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোজ গুপ্ত রয়টার্সকে বলেছেন, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার জ্বালানি সরবরাহে ছোট একটি পক্ষ এলআইওসি। ইতিমধ্যে সেখানে তাদের ২১৬টি জ্বালানি স্টেশন রয়েছে এবং নতুন করে আরও স্টেশন স্থাপনের জন্য প্রায় সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

ভারত সরকারের মালিকানাধীন তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশনের (আইওসি.এনএস) সহযোগী প্রতিষ্ঠান হলো এলআইওসি। এই কোম্পানিটি কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত রয়েছে।

মনোজ গুপ্ত বলেছেন, ‌আমরা এই অনুমোদন পাওয়ার জন্য কিছুদিন ধরে চেষ্টা করছি। শ্রীলঙ্কায় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার কোম্পানি সহায়তা ও বৃহত্তর ভূমিকা পালন করতে ইচ্ছুক।

শ্রীলঙ্কার বৃহত্তম খুচরা জ্বালানি বিক্রেতা, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান সিলন পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (সিপিসি) দেশজুড়ে ১ হাজার ১৯০টি জ্বালানি স্টেশন পরিচালনা করে।

বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তার অংশ হিসেবে চলতি বছর ভারত দক্ষিণের এই প্রতিবেশী দেশটিকে ৪ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। একাধিক ক্রেডিট লাইনের মাধ্যমে জ্বালানি, খাদ্য এবং সার কেনার জন্য এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। সংকট উত্তরণে চীন ও জাপানের কাছ থেকে সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি সম্ভাব্য ৩ বিলিয়ন বেলআউট প্যাকেজের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথেও আলোচনা করছে শ্রীলঙ্কা।

১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এবারই সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ তলানিতে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারের অব্যাবস্থাপনা, অযৌক্তিক কর কাটছাঁট, করোনা মহামারির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস ও ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা না ভেবে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় দেশটির দুরবস্থার প্রধান কারণ।

বর্তমানে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও বিভিন্ন দেশের কাছে শ্রীলঙ্কার দেনা রয়েছে ৫১০ কোটি ডলার। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ায় গত মাসের শুরুতে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে।

সূত্র: রয়টার্স।

সম্পর্কিত পোস্ট