‘এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ/ মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে/ অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে/ নিমজ্জিত হতে চায় / হায় কী আনন্দ জাগানিয়া’। কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় বসন্তের আনন্দ জাগানিয়া প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রে একটি উপাদান থাকে নিজেকে সাজানোর। বসন্তের রঙে নারী নিজেকে সাজিয়ে নেয়। নারী হয়ে ওঠে প্রকৃতি। ফাল্গুনের এলিয়ে পড়া বাতাসে নিজেকে সাজিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা থাকাটাই স্বাভাবিক। কত কত উপলক্ষ!
ভালোবাসার দিন। বসন্তের প্রথম দিন। আবারও আসছে একুশ। পুরো মাসেই বসন্ত বন্দনাকে কেন্দ্র করে নানা উপলক্ষ। আর এই উপলক্ষের খাতিরেই নিজেকে সাজিয়ে নেওয়ার চেষ্টা। সে চেষ্টা থেকে দূরে থাকার প্রলোভন এড়াতেই বা পারেন কজন। বসন্তের সাজের রয়েছে অনেকগুলো দিক। আগাগোড়া বলতে যা বোঝায় তার সবই রয়েছে এখানে। একটু বিশদ বোঝানো জরুরি।
পোশাকের ভাবনায় বসন্ত
বসন্তের আগমনের আগেই সবাই প্রস্তুতি নেবে এমনটিই স্বাভাবিক। বসন্তের পোশাক ভাবনায় শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, ফ্রক যে যাই পরুক না কেন তাতে থাকা চাই হলুদ। হলুদের সঙ্গে থাকা চাই বাসন্তী কিংবা লাল রঙের ছোঁয়া। শুধু নারী নয়, পুরুষের শার্ট, পাঞ্জাবি বা ফতুয়ার ক্ষেত্রেই একই ব্যাপার কাজ করে। ফ্যাশন হাউজগুলোও আজকাল এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। অনেক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। পুরুষের জন্য অবশ্য এ সময় পাঞ্জাবিই সেরা। আর কর্মব্যস্ত পুরুষদের জন্য আজকাল বুটিক হাউসগুলো বাজারে এনেছে ফাল্গুন রঙা শার্ট। ঘরে-বাইরে-কর্মক্ষেত্রে সবখানেই বসন্তকালীন পোশাকের কদর দেখা যায়।
অলঙ্কারে বসন্তের ছাপ
অলঙ্কার তো পোশাকের অত রঙিন না হলেও তা কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে কাজ করে। বসন্তের রঙকে আরও রাঙিয়ে তুলতে খুব বেশিদূর যেতে হয় না। কাঠ, মাটি, মেটাল, পাথর, বাঁশ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি চুড়ি, কানের দুল, গলার মালা ইত্যাদি তো রয়েছেই। দেশজ উপকরণে তৈরি গহনা পরতে পারলেই ভালো। কাঠ, পুঁতি বা মাটির গহনা বসন্তের সাজে বেশ মানায়। কানে ঝোলানো দুল পরলে গলায় কিছু না পরলেও চলে। পরতে চাইলে ছোট পুতির বা মাটির লম্বা মালা পরা যায়। যদিও বসন্তের সাজে আপনার পোশাক আর মুখের দিকেই প্রকৃতির রেশ বেশি চলে আসে।
ফাল্গুন আসছে। ঘোরার উপলক্ষ অনেক। প্রকৃতির রিমিঝিমি তালের সঙ্গে কাঁচের রেশমি চুড়ি মানায় অনেক বেশি। তবে যারা কর্মজীবী তাদের হাত ভরে চুড়ি পরার সুযোগ কম থাকে। সেক্ষেত্রে মেটাল, কাঠ বা সুতার মোটা একটা বা দুইটা পড়তে পারেন। কাজের অসুবিধাও হবে না। আবার উত্সবের আমেজও বজায় থাকবে।
মেকআপের ভাবনা
শীত শেষ প্রায়। এই শেষদিকে নাক জ্বলুনি শীতের হাওয়া আস্তে আস্তে কমছে। তবে হিমেল হাওয়া ফাল্গুনেও থাকে। তাই ফাল্গুনের কর্মব্যস্ত সময়ে কিংবা ঘুরাঘুরির আতিশয্যে ত্বকের যত্ন নেওয়াটাও গুরুত্ববহ। এক্ষেত্রে ত্বক ময়েশ্চারাইজড রাখাটা জরুরি। ফ্যাকাসে চেহারায় ঘুরাঘুরি করলে আর বসন্তের পোশাক পরে লাভ কী। হিমেল হাওয়া যতই থাকুক ফাল্গুনের আগেই রোদটা একটু কড়াভাবে এলিয়ে পড়ছে। তাই সানস্ক্রিন লোশন মেখে বেরুতে হবে।
মেকআপ করলে মেকআপ বেইজ যেন ভালো হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। গায়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ওয়াটার বা ওয়েল বেইজড ফাউন্ডেশন লাগান। বসন্তের সাজে হালকা আইশ্যাডো বেশি মানানসই। তবে কাজল ব্যবহার করতে পারলে বসন্তের সাজ সবচেয়ে ভালো হয়। আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অনুসারে কাজল বাঙালি নারীর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয়। যদি কোনো উত্সব, মেলা বা উপলক্ষ হয় তাহলে আইলাইনারের বদলে মোটা করে কাজল পরলেই ভালো। এ তো গেলো চোখের কথা। ঠোঁটকে কী একটু মনোযোগ দেবেন না? দিতে তো হবেই। ফাল্গুনের সাজই বলুন বা বসন্তের সাজ, ঠোঁট একটু রঙিন হলে ভালো লাগে। কিন্তু নিজের পছন্দ ও গায়ের রঙও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। তাই মানানসই রঙ বেছে নিন।
সাজবে আমার চুল
সচরাচর বসন্তে নানা কারণেই ব্যস্ত থাকতে হয় বেশি। কর্মজীবীদেরও হুট করে বইমেলা বা কোনো উপলক্ষে যেতে হয়। তাই চুলের যত্নটাও এখানে জরুরি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইরে থাকলে চুল বেঁধে নিতে পারেন। চুলে খোঁপা বা বেণি করলে ফুল পরতে পারেন। ফুল বসন্তের সাজে অন্য মাত্রা যোগ করবে। চুলে ফুল পরতে হলেই চুল বাধতে হবে এমন ধারণায় এসেছে পরিবর্তন। এখন তরুণীরা খোলা চুলেই পরছে নানান রকমের ফুল তবে গোলাপ ফুল পরার প্রচলন একেবারেই কমে গিয়েছে। ফ্যাশন সচেতন নারীরা এখন জারবেরা কিংবা অর্কিড লাগাতেই বেশি পছন্দ করেন। আজকাল বেণির ভেতরেও ফুল গুজবার চল রয়েছে।
বসন্তের সাজ একান্তই আপনার। তবে ট্রেন্ড কিছু ব্যাকরণ যোগ করে। সেটা ভেবে রাখাও জরুরি।