ইউক্রেনের সমুদ্র-তীরবর্তী শহর মারিউপোল ও ভোলনোভখার বেসামরিক লোকজনকে সরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করলেও রুশ সৈন্যরা তা পুরোপুরি মানছে না। মারিউপোলে এখনও তারা গোলাবর্ষণ করছে বলে শনিবার অভিযোগ করেছেন শহরটির ডেপুটি মেয়র সেরহি ওরলভ।
টেলিগ্রামে দেওয়া এক বার্তায় মারিউপোলের সিটি কাউন্সিল বলেছে, জাপোরিজিয়া অঞ্চলে লড়াই চলছে। অথচ কথা ছিল, মারিউপোল থেকে মানবিক করিডোর ব্যবহার করে বেসামরিক লোকজনকে এই শহরে সরিয়ে নেওয়া হবে।
লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পথ বরাবর ‘অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ নিশ্চিত করতে রাশিয়ান পক্ষের সাথে আলোচনা চলছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মেয়র সেরহি ওরলভ বিবিসিকে বলেছেন, ‘রাশিয়ানরা আমাদের লক্ষ্য করে বোমা বর্ষণ এবং গোলাবারুদ নিক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। এটি একেবারে পাগলামি।’
তিনি বলেন, মারিউপোলে কোনো যুদ্ধবিরতি নেই। লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার পথজুড়েও যুদ্ধবিরতি দেখা যাচ্ছে না। আমাদের বেসামরিক লোকজন চলে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু গোলাগুলির মুখে তারা পালাতে পারছে না।
মারিউপোলের একজন বাসিন্দা যিনি এই নগরীর কেন্দ্রে বসবাস করেন তিনি বিবিসিকে বলেছেন, স্থানীয় সময় সকাল ৯টা থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শহরে এখনও গোলাগুলির শব্দ অব্যাহত রয়েছে।
৪৪ বছর বয়সী প্রকৌশলী আলেকজান্ডার বলেন, এই মুহূর্তে আমি মারিউপোলে রয়েছি। আমি এখন মারিউপোলের সড়কে রয়েছি। আমি প্রতি তিন থেকে পাঁচ মিনিট অন্তর গোলাবর্ষণের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, ‘সবুজ করিডোরটি একেবারে অর্থহীন। আমি এমন লোকজনের গাড়ি দেখতে পাচ্ছি, যারা পালানোর চেষ্টা করেছিল এবং তারা বর্তমানে শহরে ফিরে আসছে।’
কয়েক বছর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করে ইউক্রেন এবং তারপর থেকে এই ব্যাপারটিকে ঘিরে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে।
এর মধ্যে ন্যাটো ইউক্রেনকে পূর্ণ সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরও বাড়ে। ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন প্রত্যাহারে ইউক্রেনের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে গত দুই মাস রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় দুই লাখ সেনা মোতায়েন রেখেছিল মস্কো।
কিন্তু এই কৌশল কোনো কাজে আসেনি। উপরন্তু এই দু’মাসের প্রায় প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অভিযোগ করে গেছে— যে কোনো সময় ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রুশ বাহিনী।
অবশেষে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুই ভূখণ্ড দনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া; এবং তার দু’দিন পর, ২৪ তারিখ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
গত ৯ দিনের রুশ অভিযানে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্শিতী রাষ্ট্র পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয়। এছাড়াও শতাধিক বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে আছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিশুও।
সংলাপ/০৩/০৫/০১১/আ/হো