মিশরের কূটনৈতিক মহলে সমাদৃত ‘ডিপ্লোম্যাসি ম্যাগাজিন’র উদ্যোগে কূটনৈতিক সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। চলতি বছর সেরা রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হয়েছেন এশিয়া অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম।
রোববার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় রাজধানী কায়রোতে কনকর্ড এল সালাম হোটেলে জাঁকজমকপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ডিপ্লোম্যাসি ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক আবদেল হাই মোখতারের সঞ্চালনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে বাছাই করে বছরের সেরা রাষ্ট্রদূত নির্বাচন ও সম্মাননা পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
চলতি বছর সেরা রাষ্ট্রদূত নির্বাচিত হয়েছেন এশিয়া অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম, লাতিন আমেরিকা থেকে মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূত অক্টাভিউ ট্রিপ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান বার্জার, বলকান দেশগুলোর মধ্যে আলবেনিয়ার রাষ্ট্রদূত অ্যাডয়ার্ড সোলো ও আফ্রিকান দেশগুলোর সেরা রাষ্ট্রদূত হয়েছেন রুয়ান্ডার রাষ্ট্রদূত আলফ্রেড জ্যাকোবা।
এছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের সহধর্মিণী ফাহিমা তাহসিনা, মেক্সিকান রাষ্ট্রদূতের স্ত্রী আদ্রিয়ানা কারমেন, কিউবান দূতাবাসের কাউন্সিলর ডেনিস ক্যাজারেসসহ কূটনৈতিক সহযোগী ও কূটনৈতিক ব্যক্তিদের সম্মানিত করে তাদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন ডিপ্লোম্যাসি ম্যাগাজিনের সিইও আবদেল হাই মোখতার ও দেশটিতে নিযুক্ত আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান লরেন ডি বয়েক।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসর ঈমান জাদ ও জনপ্রিয় ফ্যাশন ডিজাইনারসহ পাঁচজনের হাতে বাংলাদেশের শুভেচ্ছাদূতের সনদপত্র তুলে দেন। এসময় বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনৈতিক, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে পাঁচজন বিশিষ্ট মিশরীয় ব্যক্তির হাতে শুভেচ্ছাদূতের (গুডউইল অ্যাম্বাসেডর) সনদপত্র তুলে দেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম। বাংলাদেশ ছাড়াও আলবেনিয়া ও স্লোভেনিয়ার রাষ্ট্রদূতরা তাদের নির্বাচিত মিশরীয় শুভেচ্ছাদূতদের হাতে সনদ তুলে দেন।
তিনি বলেন, আমি মিশরের সেইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অভিনন্দন জানাই, যারা আজ এই সুন্দর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের শুভেচ্ছাদূত’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। শুভেচ্ছাদূতদের জন্য যে কোনো সময় আমার দরজা খোলা থাকবে। নির্বাচিত শুভেচ্ছাদূত বাংলাদেশ ও মিশরের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক আরও উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
রাষ্ট্রদূত মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে এই আনন্দঘন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক নীতি ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি স্বনির্ভর, সুখী ও সুশাসনভিত্তিক দেশে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে সর্বক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। মিশরে বাংলাদেশের আবাসিক মিশন খোলার ৫০ বছর পূর্তি হতে চলছে, কিন্তু আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক শুরু হয়েছিল ষষ্ঠ শতাব্দীতে, যখন আরব অভিযাত্রীরা ধর্মপ্রচার ও বাণিজ্যিক কারণে প্রাচীন বাংলায় আসা-যাওয়া করতেন। চৌদ্দশতকে স্বাধীন বাংলার শাসকরা অনেক আরব ও আফ্রিকান ব্যক্তিকে উজির, এমনকি সেনাবাহিনীর প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করেছিলেন।
রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন, মিশরের বন্ধুত্বপূর্ণ জনগণ ও সরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে এগিয়ে এসেছিল। মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা সফর করেন।
আধুনিক যুগে সম্পর্কের শুরু থেকেই বাংলাদেশ ও মিশর পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চমৎকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপভোগ করছে। বর্তমানে উভয় দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী এপ্রিল মাস থেকে ঢাকা-কায়রো সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে।
সংলাপ-২৩/০৩/০০৬/আ/আ