শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

মিরসরাইয়ে বৈশাখী মেলা বন্ধ করলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান

প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ৩:৪২ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২২ | ৩:৪২ অপরাহ্ণ
মিরসরাইয়ে বৈশাখী মেলা বন্ধ করলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান

মিরসরাইয়ে নিরাপত্তার অজুহাতে ২০০ বছরের পুরোনো একটি বৈশাখী মেলা (গড়িয়া মেলা) বন্ধ করে দিয়েছেন হিঙ্গুলী (২ নং) ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া সওদাগর। বৃহস্পতিবার সকালে পূর্ব হিঙ্গুলী গ্রামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলাটি একক সিদ্ধান্তে বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মেলা বন্ধের জন্য চেয়ারম্যান নিরাপত্তার অজুহাত দেখালেও পুলিশ বলছে, মেলাস্থলে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে, এমন তথ্য তাঁদের কাছে নেই। তা ছাড়া মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য পুলিশের একটি দলও প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

পূর্বঘোষণা ছাড়াই মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। এতে মালপত্র নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও।

মেলার আয়োজক কমিটির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় খীল হিঙ্গুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে একটি বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়ে আসছিল। স্থানীয়দের আয়োজনে এক দিনের এ মেলায় উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। করোনার কারণে গত দুই বছর বন্ধ থাকার পর এ বছর আবার মেলা উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে বিদ্যালয় মাঠে দোকানিরা যখন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছিল, তখন হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া এসে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে মেলা বসাতে নিষেধ করেন। চেয়ারম্যানের বাধা পেয়ে মেলায় পণ্য বিক্রি করতে আসা প্রায় ১০০ দোকানি মালপত্র নিয়ে ফিরে যান।

মেলার আয়োজক কমিটির সঞ্জয় মজুমদার জানান, চড়কপূজাকে কেন্দ্র করে কোনো কমিটি বা কারও অনুমতি ছাড়াই ২০০ বছর ধরে এ বৈশাখী মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু এবার অনুমতি না নেওয়ার কথা বলে মেলার দিন সকালে এসে চেয়ারম্যান মেলা বন্ধের নির্দেশে দেন। যুগ যুগ ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া এ মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় মানুষ হতাশ হয়েছে।

উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা মেলায় খেলনাসামগ্রী বিক্রি করতে আসা মো. আবদুল হালিম বলেন, ‘আমি বেশ কয়েক বছর ধরে এই মেলায় এসে খেলনাসামগ্রী বিক্রি করেছি। লাভের আশায় এবারও এসেছিলাম। কিন্তু পূর্বঘোষণা ছাড়াই মেলা বন্ধ করে দেওয়ায় আমার বড় ক্ষতি হয়েছে।’

এই বিষয়ে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোনা মিয়া সওদাগর বলেন, ‘পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মেলাটির কোনো কমিটি নেই। মেলা আয়োজনের বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি আমাকে। তা ছাড়া মেলার নামে সেখানে মাদকের আড্ডাসহ বিভিন্ন অপকর্ম হয়। পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া মেলা আয়োজন করলে যেকোনো বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার কথা ভেবে মেলা আয়োজন করতে নিষেধ করেছি আমি।’

জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুর হোসেন মামুন বলেন, ‘পূর্ব হিঙ্গুলী এলাকায় মেলা আয়োজনে নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে, এমন কিছু কেউ জানাননি আমাকে। বরং ওই মেলার আয়োজন হলে সেখানে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য আমাদের পুলিশ সদস্যের একটি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। আমাদের পক্ষ থেকে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেছেন মেলাটি এবার হবে না। মেলায় নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তুতি ছিল আমাদের।’

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিনহাজুর রহমান বলেন, নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বৈশাখী মেলা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে নিজের সিদ্ধান্তে এমন প্রাচীন একটি মেলা বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ চেয়ারম্যানের নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট