
মিরসরাই উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকের সংখ্যা। এরা কেউ প্যাড বা ভিজিটিং কার্ডে নামের আগে ডাক্তার লিখতেও দেখা যাচ্ছে। যা প্রাণী স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আইনের লঙ্ঘন। কেউ আবার রেজিস্ট্রেশন বিহীন কোম্পানির ঔষধ বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে। এতে একদিকে হুমকিতে পড়ছে স্বাস্থ্যসেবা, অন্যদিকে প্রতারিত হচ্ছে পশু মালিক ও খামারিরা।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের দেয়া তথ্য মতে, পুরো উপজেলায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কৃত্রিম প্রজনন দেওয়ার জন্য অনুমোদিত এআই টেকনিশিয়ান আছে মাত্র ১১জন। যারা শুধু প্রাণীর কৃত্রিম প্রজনন বীজ স্থাপন করতে পারবে। কিন্তু সরকারি পশু চিকিৎসকদের খুব সহজে না পাওয়া কিংবা যোগাযোগের মাধ্যম না থাকায় গ্রামীণ খামারিরা নামধারী ওসব চিকিৎসকের সেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে করে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
জানাগেছে, বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল ২০১৯ সালের আইনের ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী নিবন্ধন ও সনদ ছাড়া কেউ চিকিৎসা দিতে পারবে না। একই আইনের ৩৫ ধারায় আইন অমান্যকারীর তিন বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২ লাখ টাকা জরিমানা করার কথা বলা আছে। এছাড়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল প্রাণীর চিকিৎসা-সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। যেখানে নিবন্ধনহীন পশু চিকিৎসকদের চিকিৎসা বন্ধসহ তাদের আইনে সোপর্দ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
খামারি আবুল কালাম জানান, তার দুটি গাভী রয়েছে। এর ভেতর গত কয়েকদিন আগে একটি গাভীর পাতলা পায়খানা হলে সে স্থানীয় এক পশু ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। ওই ডাক্তার তাকে কিছু ঔষধ লিখে দেন এবং সেগুলো খাওয়াতে বলেন। কিন্তু তাতে গাভীর কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং অসুস্থতা বেড়ে গাভীটি মারা যায়।
আসাদ আলী নামে আরেকজন খামারি বলেন, সময় মতো সরকারি ডাক্তারদের পেতে কষ্ট হয়। এজন্য এসব গ্রামের চিকিৎসক দিয়ে পশুর চিকিৎসা করা হয়।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নে এআই টেকনিশিয়ানের দায়িত্বে থাকা বেলায় হোসেন জানান, অনিবন্ধিত চিকিৎসক দ্বারা অনেক সময় ভুল চিকিৎসায় পশুর বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। এদের বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জানানো হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবে বললেও এখনও নেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কথা হলে মিরসরাই প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা তাহমিনা আরজু মুঠোফোনে জানান, যারা চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা অবশ্যই অন্যায় করছেন। তবে উপজেলায় ভেটেরিনারি চিকিৎসক কম হওয়ায় তাদের সরকারি নির্ধারিত আইনের আওতায় আনাও সম্ভব হচ্ছে না। অফিসের কাজের ব্যস্ততায় ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের মাঠে গিয়ে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ হচ্ছে না। যদি কোনো ব্যক্তির দ্বারা পশুর ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী আফিসার মিনহাজুর রহমান সময়ের সংলাপকে বলেন, বেআইনিভাবে কেউ চিকিৎসা দিতে পারবে না। যুব উন্নয়ন কর্তৃক প্রশিক্ষণ নিয়ে সনদপ্রাপ্তরা চিকিৎসা দেয়ার একটা সুযোগ আছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা বলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে যারা বেআইনিভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।