মিরসরাইয়ের ইছাখালী ইউনিয়নের সাগরের কোল ঘেষে জেগে ওঠা জমিতে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়েছে তরমুজের। প্রায় ২০০ একর জমিতে এখন তরমুজের সমারোহ। একসময় এই জমি গুলোতে গরু-মহিষের গোচারণ এবং ধান চাষ করতেন স্থানীয় কৃষকরা। এসব এলাকায় এখন তরমুজে ভরপুর। তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় খুশি চাষিরা। চলতি মাসের শুরু থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতারা এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন প্রতিদিন।
জানা গেছে, প্রত্যেক বছর রবি মৌসুমে উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নে চরের অধিকাংশ জমি খালি পড়ে থাকতো। পূর্ব ইছাখালী গ্রামে দোঁআশ মাটি (বালিযুক্ত) ও উপযুক্ত পরিবেশ হওয়ায় এবং ইছাখালী খাল থেকে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকায় চলতি বছর পাশ^বর্তী উপজেলার নোয়াখালী জেলার সুবর্ণ চর উপজেলার ৯ জন উদ্যোক্তা মিরসরাইয়ে তরমুজ চাষের উদ্যোগ নেন। প্রথমে তারা মাটিগুলো ল্যাবে পরীক্ষা করেন। মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গত ডিসেম্বর মাসে তারা স্থানীয় কৃষকদের থেকে ৩ মাসের জন্য প্রতি একর জমি ১৫ হাজার টাকা খাজনায় বর্গা নেন। সেই জমিতে তারা তরমুজের বীজ বপন করেন। প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তারা তরমুজ চাষ করে এলাকায় ভালো আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন।
তরমুজ চাষী মো. মুজাক্কির বলেন, তারা ১৫ জনের একটি দল নোয়াখালীর মাইজদী কৃষি অফিস থেকে তরমুজ চাষের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর বিগত কয়েক বছর নিজ উপজেলা সুবর্ণচরে তরমুজ চাষ করে সফল হন। এই প্রথম মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী, মিঠানালা ও কাটাছরা ইউনিয়নের চরের মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় তারা এখানে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের থেকে জমি বরগা নিয়ে চীন, আমেরিকা ও বাংলাদেশী ৮ প্রজাতির তরমুজ চাষ করেন।
তিনি বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে তরমুজ বিক্রি শুরু করি। প্রতিদিন ৫-৬ বড় ট্রাকে করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ফেনী, চকরিয়া, সাতকানিয়া ও ফেনী পাইকারী আড়তদারদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। তরমুজকে ৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আকারভেদে তরমুজ শত হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে ২০০০ হাজার থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত। প্রতিটি তরমুজ ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মুজাক্কির।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তরমুজ গাছের চারা থেকে কৃষকরা বড় সাইজের তরমুজ গুলো কেটে এক জায়গায় এনে একত্র করছেন বিক্রির জন্য। কেউ আবার সেগুলো গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন। তরমুজ কিনার জন্য প্রতিদিন স্থানীয়রা ভিড় করছেন।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মিরসরাইয়ে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়েছে তরমুজের। আবহাওয়া উপযোগী থাকলে ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তরমুজ চাষে পরিশ্রম বেশী হলেও অন্যান্য রবিশষ্য থেকে এটাতে ৩ গুণ বেশী লাভ হয়।
ইছাখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল মোস্তফা বলেন, ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্রত্যেক বছর খালি পড়ে থাকতো। এ বছর নোয়াখালীর সুবর্ণচর এলাকার কয়েকজন উদ্যোক্তা সেই জমিতে তরমুজ চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। আশা করছি আগামী বছর থেকে মিরসরাইয়ের মানুষ তরমুজ চাষ করে লাভবান হবে।