শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় রিদমসের নৃত্যানুষ্ঠান

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০২২ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২২ | ১:৩৭ অপরাহ্ণ
মালয়েশিয়ায় রিদমসের নৃত্যানুষ্ঠান

‘রিদমস, মালয়েশিয়া’র উদ্যোগে ‘পরম্পরা বসন্ত উৎসব ও নৃত্যানুষ্ঠান’ হয়েছে। শনিবার (১২ মার্চ) রাজধানী কুয়ালালামপুরের ব্রিকফিল্ডের টেম্পল অব ফাইন আর্টস অডিটোরিয়ামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ভারতের হাইকমিশনার বিএন রেড্ডি। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ললিতা রেড্ডি, চার দশকের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আধুনিক ও ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী রামলী বিন ইব্রাহিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন কুয়ালালামপুরের ‘লাস্যা আর্ট একাডেমি’ প্রতিষ্ঠাতা গুরুভায়ুর উষা দোরাই।

দর্শনীর বিনিময়ে ও কোভিড-১৯ এর দিকনির্দেশনা মেনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অডিটোরিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। অসীম সাহা রায় ও হারবিন্দর কুমারের সঞ্চালনায় অতিথিদের প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়।

প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করা হয় যা দর্শকরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। গান পরিবেশনের মূল দায়িত্বে ছিলেন মন্তি সরকার। অনুষ্ঠানের প্রথম অংশ ছিলো ‘পরম্পরা’। আর এই ‘পরম্পর’ হলো সেই ধারা যার মাধ্যমে গুরু থেকে শিষ্যের দিকে উত্তরাধিকার প্রতিফলিত হয়! এটি একটি ‘চিন্তার ক্রমাগত উত্তরাধিকার’ কে বোঝায় যা প্রজন্ম ধরে আমাদের কাছে হস্তান্তরিত হয়েছে।

আগামী প্রজন্মের কাছেও পৌঁছে যাবে ভবিষ্যতের দিনগুলোতে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যের দুটি প্রধান ধরন ‘কত্থক’ ও ‘ওড়িশি’ কে উপস্থাপন করা হয়েছে এই অংশে যেমনটি পন্ডিত বিরজু মহারাজ লালিত ও গুরু শ্রীমতি কাকলি শঙ্কর মিশ্র এই প্রজন্মের হাতে তুলে দিয়েছেন। ৬টি ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপনা ছিলো প্রথম পর্বে – গুরু বন্দনা, গজল, ঠুমরী, ভজন, দেবী বন্দনা এবং তারানা।

প্রথম পর্বের পর ছিল অরিন্দম বোসের পরিচালনায় ‘বিশেষ কুইজ’ প্রতিযোগিতা। যেখানে উপস্থিত দর্শকরা বসন্ত উৎসব সম্পর্কিত বিভিন্ন কুইজের সঠিক উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে আকর্ষণীয় চকলেট জিতে নেন।

দ্বিতীয় পর্বে ‘বসন্তোৎসব ২০২২’ ছিল সরাসরি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সাথে নৃত্য পরিবেশনা-গান ও নাচের যুগল দ্বৈরথ। তুলে ধরা হয় শান্তিনিকেতনের বসন্তোৎসব যা চিরাচরিত দোল আর হোলি থেকে অনেকটাই আলাদা, যেখানে আয়োজন শুধু রঙখেলাতে সীমাবদ্ধ থাকে না। সেখানে পাওয়া যায় জীবনের রসদ যা দু’হাত ভরে নিতে ছুটে আসে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অগণিত মানুষ এই শিমুল-পলাশের গন্ধ মাখানো রাঙামাটির দেশে।

তুলে ধরা হয় বাংলাদেশের পহেলা ফাল্গুনসহ বসন্ত উৎসব পালন করার বিভিন্ন রীতি যেখানে অন্যতম প্রধান ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে ধরা দেয় কবিগুরু ও তার অনন্য অনবদ্য সৃষ্টিকর্ম।

প্রধান অতিথি হাইকমিশনার বিএন রেড্ডি তার বক্তব্যে এই আয়োজনের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, এ ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই এই পৃথিবীকে প্রকৃত সুন্দর হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। তিনি ভারত ও বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত সংস্কৃতিপ্রেমী ও শিল্পী যারা এই অনুষ্ঠানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, আপনারা নিজ নিজ দেশের বাইরে অবস্থান করেও দেশীয় সংস্কৃতি, শিল্পের বিকাশে ও প্রসারে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তা সত্যিই অতুলনীয়, প্রশংসনীয়। আপনাদের এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা সবসময় অব্যাহত থাকবে।

এই আয়োজনের জন্য যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন ও স্পনসর করেছেন তাদের আনুষ্ঠানিক ধন্যবাদ জানানোর মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। উপস্থিত মিলনায়তন ভর্তি দর্শকরা মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে তাদের ভালোলাগা প্রকাশ করেন শিল্পীদের প্রতি, ফিরে যাওয়ার সময় তাদের কানে বাজতে থাকে অনুষ্ঠানের শেষ পরিবেশনা, ‘আজ খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়, সুখের বাসা ভেঙে ফেলবি আয়, মিলনমালার আজ বাঁধন তো টুটবে, ফাগুন-দিনের আজ স্বপন তো ছুটবে।

‘রিদমস, মালয়েশিয়া’ ২০১৯ সালে কুয়ালালামপুরে প্রতিষ্ঠিত হয় কত্থক নৃত্যবিশারদ তিথি চট্টোপাধ্যায় ও ওড়িশি নৃত্যবিশারদ রেশমী রয়’র নেতৃত্বে শিল্পোনুরাগী কিছু মানুষকে নিয়ে। তাদের মূল উদ্দেশ্য, ভারতীয় নৃত্য ও সঙ্গীতের ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতাকে একই বৃত্তের ভেতরে এনে নিজ নিজ স্বপ্ন পূরণ।

এছাড়া রিদমস হলো ভারত, বাংলাদেশ, সিংগাপুর ও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত শিল্পীদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর মাধ্যমে নৃত্যচর্চাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম সেতু বন্ধন।

সংলাপ-১৫/০৩/০০৩/আ/আ

সম্পর্কিত পোস্ট