
অসহনীয় গন্ধ! ইঁদুর-তেলাপোকার এদিক-সেদিক ছোটাছুটি। বোর্ডের বক্স দিয়ে খাট তৈরি। দেওয়ালে এলোমেলোভাবে জামা-কাপড় ঝোলানো, বায়ু চলাচল দুর্বল। ফুটো পাইপ থেকে পানি গড়িয়ে মেঝেতে পড়ছে।
সম্প্রতি এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করা ৪০ জন বিদেশি শ্রমিকের সন্ধান পেয়েছে শ্রম বিভাগের ডিপার্টমেন্ট অব লেবার পেনিনসুলার মালয়েশিয়া। তারা বলছেন, নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতায় শ্রমিকদের বেহালদশা! নিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরও তারা কর্মীদের সঙ্গে অস্বাভাবিক কাজ করে চলছেন।
এদিকে স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, নিয়োগকর্তাদের উদাসীনতার কারণে বাংলাদেশি কিছু কর্মী প্রায় তিন মাস খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছেন। পানি, বিদ্যুৎ ছাড়া মানবেতর জীবনযাপন!
খবরে বলা হয়, ‘দেশটির তামান মেলাতি নামক এলাকায় বাংলাদেশি কিছু শ্রমিক নির্মাণখাতে কাজ করেন। তারা তিন মাস ধরে নোংরা পরিবেশে জীবনযাপন করছেন! এমনকি সেখানে একটি রাস্তার পাশে ড্রেনের ওপর শুধু ফাইবারের ত্রিপল টানিয়ে বসবাস করতে দেখা গেছে। সেখানে টয়লেট ও গোসলের কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা নেই।
শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর, অমানবিক পরিবেশে বসবাস করায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা, দায়িত্বহীনতায় এমনটি ঘটছে। ওই শ্রমিকদের নিয়োগকর্তাকে বারবার তাদের সমস্যার কথা বলা হলেও মালিকপক্ষ কোনো খোঁজ নেয়নি।

এ ঘটনায় তামান মেলাতি এলাকার রেসিডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আজহারি আবদুল তাহারিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারের নজরদারির মধ্যেও এই অমানবিক পরিবেশে শ্রমিকদের সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা কেমন করে মাসের পর মাস রাখতে পারে? এটা নিশ্চয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা।
অভিযানের সময় নিয়োগকর্তার এক প্রতিনিধি পুলিশকে জানান, বিদেশি শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ভালোভাবে খেয়াল করার সময় পাইনি। তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য শ্রমিকদের ওপরই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
শ্রমিকদের কল্যাণ
অতীতে শ্রম দপ্তরের এমন অভিযানে নিয়োগকর্তাদের বিভিন্ন অপরাধকে উন্মোচন করেছে। ডিপার্টমেন্ট অব লেবার পেনিনসুলার মালয়েশিয়া’র মতে, আইন ৪৪৬ এর অধীনে সংঘটিত অপরাধের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এই বছরের মার্চ পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৫টি মামলা তদন্ত করা হয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে ১৩৫টির বিচার করা হয়েছে। মোট ১ মিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা করা হয়েছে। আরও ৯০৮টি মামলায় মোট ১০.৫ মিলিয়ন রিঙ্গিত জরিমানা করা হয়েছে। বাকিগুলো ডেপুটি পাবলিক প্রসিকিউটর অফিস থেকে পদক্ষেপের অপেক্ষায়।
জেটিকেএসএমের ডেপুটি ডিরেক্টর-জেনারেল (অপারেশনস) আসরি আবদ ওয়াহাব বলেছেন, তার বিভাগ জোরপূর্বক শ্রমের সমস্যা মোকাবিলা ও দেশের শ্রম ব্যবস্থাপনার উন্নতির চেষ্টা করছে। তিনি শ্রম পরিস্থিতি ‘খুব উদ্বেগজনক’ বলে মনে করেন।
তিনি বলেন, অভিযান পরিচালনা করার সময় দেখা যায় কর্মীরা আইন মেনে চলতে ব্যর্থ। তাদের ব্যর্থতার কারণ হিসেবে নিয়োগকর্তারা বারবার সামনে আসছে। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ার ৩৭ হাজার ৬৬২ নিয়োগকর্তার মধ্যে ৫০ শতাংশ এখনও প্রশংসাপত্র পায়নি।
আসরি বলেন, প্রশংসাপত্রটি নিয়োগকর্তাদের আবাসন আইন মেনে পূরণ করতে হয়। এর মধ্যে টয়লেট, বিছানা, রান্না, বিশ্রাম, খাওয়াসহ ইউটিলিটি সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
তিনি বলেন, একজন নিয়োগকর্তা যদি এটি করতে ব্যর্থ হয় তাকে ৫০ হাজার রিঙ্গিত পর্যন্ত জরিমানা ও এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা উভয়ই দণ্ড দেওয়া হয়। আইনটি সংশোধন করতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
মালয়েশিয়া ২১ মার্চ সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রটোকল ২৯ অনুমোদন করে। ফলে দেশটির সরকার বিদেশি কর্মীদের কল্যাণে ও শ্রম অবস্থার উন্নতি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রটোকল ২৯ হলো ফোর্সড লেবার কনভেনশনের একটি অতিরিক্ত প্রটোকল, যা ১৯৫৭ সালে মালয়া দ্বারা অনুমোদিত।

আইএলও বাধ্যতামূলক শ্রমের রূপরেখা
যার মধ্যে রয়েছে কর্মীদের অনুমতি ছাড়াই মালিক নিজের দখলে পাসপোর্ট ও ব্যক্তিগত পরিচয়পত্র রাখতে পারবে না। শ্রমিকদের পরিবার বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।
নিয়োগকর্তা কর্মীর লেখাপড়া বা ভাষা না জানার দুর্বলতার সুযোগ নিতে পারবে না। এমনকি কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার করতে পারবে না। অনেক নিয়োগকর্তা তাদের কর্মীরা কতক্ষণ ধরে কাজ করছেন বা তাদের খাবার দেওয়া পর্যন্ত তারা কী ধরনের কাজ করছেন তাও খেয়াল করেন না- বলে উল্লেখ করেছে শ্রম দপ্তর।