হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস শনাক্ত হওয়ার যে খবর কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তা ‘সঠিক নয়’ বলে দাবি করেছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন যে কিডনি, হৃদযন্ত্রের পাশাপাশি লিভারের জটিলতাতেও ভুগছেন, সে কথা ডা. জাহিদও বলেছেন। তবে সেটা কী ধরনের সমস্যা তিনি তা স্পষ্ট করেননি।
গত ১৩ নভেম্বর থেকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে রোববার সকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান জাহিদ।
তিনি বলেন, “ম্যাডামের অবস্থা আগের মতই আছে। খুব একটা পরিবর্তন নেই। এটাকে উন্নতিও বলা যাবে না, আবার স্থিতিশীলও বলা যাবে না। এক কথায় বলা যেতে পারে, এখনো তিনি ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যেই আছেন। ডাক্তাররা সার্বক্ষণিক ক্লোজড মনিটিরিং করছেন। তার বিভিন্ন প্যারামিটারসগুলো ওঠানামা করছে, সে অনুযায়ী ডাক্তারা তাৎক্ষণিক দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।”
এন্ডোসকপি পরীক্ষায় খালেদা জিয়ার ‘লিভার সিরোসিস ধরা পড়েছে’ বলে শনিবার খবর দেয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। বিএনপির চেয়ারপারসনের সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলও এক ফেইসবুক পোস্টে একই ধরনের কথা বলেন।
সেখানে তিনি লেখেন, “তার রোগ ও শারিরীক অবস্থার কথা প্রচার করা না হলেও আমি সাংবাদিকতার কলাকৌশল প্রয়োগে বিভিন্ন ভাবে খোঁজ খবর করে নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি তাঁর পুরনো জটিল রোগগুলো ছাড়াও ডিকমপেন্স্যাটেড লিভার সিরোসিস-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এটা সম্ভবতঃ NASH (Non alcoholic steato hepatitis) অর্থাৎ ফ্যাটি লিভার থেকে হয়ে থাকতে পারে। এখন এর দুটি মাত্র চিকিৎসা: স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্টেশন থেরাপি এবং তাতেও কাজ না হলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা। এর কোনোটিই বাংলাদেশে সম্ভব নয় এবং করার সুযোগ নেই।
“আমি যতদূর জেনেছি, শরীর থেকে রক্ত যেতে যেতে তার হিমোগ্লোবিন একেবারে কমে গেলে এবং রক্তবমি হতে থাকলে তাকে এবার হাসপাতালে নেয়া হয়। ডাক্তারেরা এন্ডোস্কপি করে তার লিভার সিরোসিস শনাক্ত করেন। তার দেহে দফায় দফায় রক্ত দেয়া হয় এবং তার বড় হয়ে যাওয়া রক্তনালী এন্ডোস্কপির মাধ্যমে Oesophageal Band ligation করা হয়েছে এবং সিসিইউ-তে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এর বেশি কিছু বাংলাদেশের ডাক্তারদের করার নাই বলেই জানানো হয়েছে।”
লিভার সিরোসিস হলে যকৃৎ বা লিভার বিকৃত ও অকার্যকর হয়ে পড়ে। বিপাক ক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ, ওষুধ ও রাসায়নিক শোষণ, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরির কাজগুলো ঠিকভাবে হয় না। তাতে দেখা দেয় নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা। খাবারে অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, শরীরে পানি আসা অনিরাময়যোগ্য এ রোগের মূল উপসর্গ।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, “এই সংবাদটা সঠিক নয়। ম্যাডাম লিভার, কিডনি, হার্টের জটিলতায় ভুগছেন। রয়েছে ডায়াবেটিসও।… এখন গণমাধ্যম কোথা থেকে লিভার সিরোসিস এর সংবাদ পেলেন, সেটা আমার জানা নেই।”
এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধায়নে রয়েছেন খালেদা জিয়া। তার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনকে নরম খাবার দেওয়া হচ্ছে। বিছানাই বেশির ভাগ সময় কাটাতে হচ্ছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথি তার পাশে থাকছেন।
ডা. জাহিদ বলেন, “ম্যাডামের যে অবস্থা এখন, মাল্টি ডিসিপ্লিনারি ডিজিজগুলোর প্রপার রেসপনস করতে হলে দ্রুত অ্যাডভান্সড সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা নিয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ড বলুন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে থেকে অনলাইনে যুক্ত হওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলুন, তারা সবাই উদ্বিগ্ন। সকলে বলছেন, তাকে দ্রুত বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন।”
খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার তার বোনকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছেন, কারণ দুর্নীতিতে দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসনের দেশত্যাগের অনুমতি নেই।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কারাগারে ছিলেন দুই বছর। পরিবারের আবেদনে গত বছরের ২৫ মার্চ নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার।
তার পর থেকে এ নিয়ে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৬ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ। এর মধ্যে গত এপ্রিলে তিনি করোনাভাইরাসেও আক্রান্ত হয়েছিলেন।
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২১ | ১:৫২ অপরাহ্ণ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২১ | ১:৫২ অপরাহ্ণ