রবিবার, ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১

বৃষ্টিভেজা প্যারিসে অলিম্পিকের নজরকাড়া উদ্বোধন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ | ১২:৩৯ অপরাহ্ণ
বৃষ্টিভেজা প্যারিসে অলিম্পিকের নজরকাড়া উদ্বোধন

দুপুর থেকেই আইফেল টাওয়ার সংলগ্ন সেইন নদীর তীরে লোকে লোকারণ্য। আর একটু পরিষ্কার করে বললে অলিম্পিক গেমসকে কেন্দ্র করে ক্রীড়াবিদ, দর্শনার্থী ও অতিথিদের মিলনমেলা। ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর উদ্বোধন বলে কথা। ঘণ্টা চারেক সেইন নদীকে কেন্দ্র করে সবাই যেন বুঁদ হয়ে রইলো। এবারই ব্যতিক্রম এক চোখধাঁধানো উদ্বোধনের সাক্ষী হলো সবাই। যা অলিম্পিকের ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি।

সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছিলো, আকাশও ছিলো মেঘলা। সফল ও উৎসবমুখর উদ্বোধন নিয়ে আয়োজকেদের ছিলো সীমাহীন চিন্তা। তবে সব শঙ্কা কাটিয়ে নৌকায় ভেসে ভেসে অনুষ্ঠানে অংশ নেন দেশগুলো, মার্চপাস্ট করেন অ্যাথেলেটরা। এতো দিন অলিম্পিকের উদ্বোধন মানেই ছিল স্টেডিয়ামের ভেতরে জমকালো সবকিছু। প্যারিস সেই ভাবনা থেকে সরে এসে এবার সবাইকে দারুণভাবে চমকে দিয়েছে। শহরের প্রধান নদী সেইনকে ঘিরে ছিল সবকিছু। সঙ্গে যোগ হয়েছে ঐতিহ্যবাহী আইফেল টাওয়ার।

বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয় প্যারিস অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ফ্রান্সের অন্যতম সেরা ফুটবলার জিনেদিন জিদানের হাতে ছিল মশাল। যা তিনি তুলে দেন তিন শিশুর হাতে। তাদের হাত থেকে সেই মশাল চলে যায় এক অচেনা ব্যক্তির হাতে। গোটা অনুষ্ঠানে জুড়ে তাকে চেনা যায়নি, ঢাকা ছিল মুখ।

জল দিয়ে তৈরি করা হয় বিশেষ পর্দা। সেই পর্দা ভেঙে প্রথমে এগিয়ে এলো গ্রিস। পন্ট ডি’এলিনা ব্রিজের তলা দিয়ে বেরিয়ে এলো তারা। তার পরে এলো উদ্বাস্তুদের অলিম্পিক দল। মার্চপাস্টে অলিম্পিকের জন্মভূমি গ্রিস থাকে সবার আগে। সবার শেষে মার্চপাস্টে অংশ নেয় স্বাগতিক দেশ ফ্রান্স। নদীর পাড়ে পাটাতনের মতো জায়গায় নাচ ও পার্টিং সংয়ের সঙ্গে বেশ বড় বহর নিয়ে মার্চপাস্ট করে ফ্রান্স। স্বাগতিক দেশ হিসেবে ফ্রান্সই ছিল মার্চপাস্টে শেষ দল।

মার্চপাস্ট শেষে সিন নদীর বুকে ছুটল ধাতব ঘোড়া! তাতে নাইটদের মতো রুপালি পোশাকের একটি মেয়ে বসা ছিল। রুপালি হুডিতে মুখটা ঢাকা। মুখেও কি রুপালি মুখোশ? পিঠে তার অলিম্পিকের পতাকা। অর্পণ করতে ছুটে আসছে! প্রযুক্তির সাহায্যে ধাতব ঘোড়া সিনের বুক পাড়ি দিয়েছে। দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো। সম্ভবত এবারের প্যারিস অলিম্পিকের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের আইকনিক দৃশ্য হয়ে থাকবে। তবে মেয়েটির পরিচয় এখনো অজানা।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ফ্রান্সের মুক্তিকামী বীরকন্যা জোয়ান অব আর্কের সাজ দেওয়া হয়েছে মেয়েটিকে।
অলিম্পিকের ইতিহাসে এই প্রথম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হলো স্টেডিয়ামের বাইরে। প্যারিসের সিন নদীতে জাতীয় পতাকা নিয়ে অংশগ্রহণকারী সব কটি দেশ মার্চপাস্ট করে। অন্যদিকে বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি ফুটবলার জিনেদিন জিদানও মশাল হাতে শামিল হন অলিম্পিকের উৎসবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শর্ট ফিল্মে জিদানের হাতে দেখা গেছে মশাল।

অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের ইতিহাসে ১০ জন সবচেয়ে বিখ্যাত মহিলার মূর্তি উম্মোচন করা হয়। সঙ্গে বর্ণনা করা হয়েছে তাদের কৃতিত্বের। অন্যদিকে ফ্রান্সের অন্যতম সেরা সংগ্রহশালা, প্রদর্শনী স্থল ঐতিহাসিক গ্র্যান্ড প্যালেসের ছাঁদ থেকে জাতীয় সঙ্গীত গাইলেন ২০২৩ ভয়েস অব ওভারসিজ টেরিটরিজ জয়ী গায়িকা অ্যাক্সেলে সেইন্ট-সিরেল।

অনুষ্ঠানে পারফর্ম করেছেন অনেকেই। ফরাসি ভাষা জানা শিল্পিদের মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় শিল্পী এই অনুষ্ঠানে করেছেন পারফর্ম। তার সঙ্গে রিপাবলিকান গার্ডের বাদ্যযন্ত্রী এবং ফরাসি সেনার শিল্পীরাও গাইলেন। নোটরডামের সামনে পারফর্ম করেছেন তারা। ১৮২০-এর দশকে সৃষ্টি হওয়া একটি বিশেষ নাচ ফিরিয়ে আনলেন তারা। খেলোয়াড়দের নৌকা করে প্যারেডের মাঝেউ হয়েছে গানের অনুষ্ঠান।

মালি বংশোদ্ভুত ফরাসি সঙ্গীতশিল্পী আয়া নাকামুরা পারফর্ম করেছেন। ফ্রান্সের রিপাবলিকান গার্ডের ৬০ জন সুরকার ও সামরিক বাহিনীর ৩৬ জন গায়কের সঙ্গে পারফর্ম করেছেন তিনি। বিশ্বে ফরাসি ভাষার শিল্পীদের মধ্যে নাকামুরাকে বেশি স্ট্রিম করা হয়।

উল্লেখ্য, ফুটবল ও বাগবি সেভেন শুরু হয়ে গেছে উদ্বোধনের দুই দিন আগেই। আর্চারি ও হ্যান্ডবলও শুরু হয়েছে একদিন আগেই। বাকি ছিল শুধু ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বর্ণাঢ্য আয়োজন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেটাও হয়ে গেলো। প্যারিস অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে ২০৬টি দেশ। ৩২টি খেলার ৩২৯টি ইভেন্টে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবেন ১০ হাজার ৫০০ জন অ্যাথলেট।

সম্পর্কিত পোস্ট