প্রথমবারের মতো বুকের দুধে পাওয়া গেলে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব। এ ঘটনায় শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে চিন্তিত গবেষকরা। সাধারণত শিশুরা যে কোনো রাসায়নিক দূষণের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দ্রুতই এ ব্যাপারে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও শিশুদের জন্য সর্বোত্তম খাবার হিসেবে বুকের দুধকেই এখনো প্রথম সারিতে রাখা হয়।
সম্প্রতি ইতালির রোমে ৩৪ জন মায়ের কাছ থেকে বুকের দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। শিশু জন্মের এক সপ্তাহ পর তাদের কাছ থেকে এসব নমুনা সংগ্রহ করে গবেষকরা। সংগৃহীত এসব নমুনার ৭৫ শতাংশের মধ্যেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এরআগে বিভিন্ন গবেষণায় মানবদেহের কোষ, গবেষণাগারের প্রাণীদের দেহে ও সামুদ্রিক প্রাণীদের দেহে মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়। তবে মানবদেহে এর ক্ষতিকর প্রভাব অজানা ছিল।
প্লাস্টিকে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক থাকে। এরআগে বুকের দুধে প্যাথালেট পাওয়া যায়।
গবেষকরা মায়েদের গ্রহণকৃত প্লাসিকের মোড়কে থাকা খাদ্য, পানীয় ও সামুদ্রিক খাবার পরীক্ষা করে থাকে। এছাড়াও তারা প্লাস্টিক আছে এমন ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যসুরক্ষা পণ্যও পরীক্ষা করে দেখেন। তবে এসবের সঙ্গে বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়ার কোনো সম্পর্ক দেখা যায়নি।
গবেষকরা মনে করছেন, পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি মানবদেহে অনিবার্য প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের গবেষণার মাধ্যমে ঝুঁকি উৎপাদনের নির্দিষ্ট বিষয়গুলো চিহ্নিত করা যাবে।
২০২০ সালে ইতালির গবেষকদল মানবদেহের ডিম্বাশয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পান। এরপর বুকের দুধে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনটা বলেছেন ইতালির আঙ্কোনার মার্চে পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ভ্যালেন্টিনা নোটারস্টেফানো।
তিনি বলেন, গর্ভধারণ ও স্তন্যপানের সময় এই রাসায়নিক দূষণের মাত্রা (মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি) কমিয়ে আনা অনেকটাই কঠিন হবে। তবে বুকের দুধ পান করার অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা এখনো অনেকগুণ বেশি। এর কারণে (গবেষণা) বুকের দুধ পান করা কমানো উচিত নয়। পরিবেশে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপাদান কমিয়ে আনার জন্য রাজনীতিবিদদের চাপ প্রয়োগ করা উচিত। যাতে তারা এ ধরনের দূষণ বন্ধে আইন প্রণয়ন করেন।
সম্প্রতি পরিচালিত হওয়া অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায়, যেসব শিশু বোতলজাত খাদ্য গ্রহণ করে তাদের শরীরে বিপুল পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক প্রবেশ করে। এছাড়াও গরুর দুধেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
জার্নাল পলিমারে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায় বুকের দুধে পলিথিন, পিভিসি এবং পলিপ্রোপিলিনযুক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যায়। যার সবগুলোই মোড়কজাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
এসময় গবেষকরা ২ মাইক্রোনের চেয়ে ছোট কণা বিশ্লেষণ করতে পারেননি। যেসব বুকের দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তা কোনো ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার না করেই সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসময় এসব পরীক্ষা করার সময়ও কোনো প্লাস্টিক দূষণের নমুনা নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল।
দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে