সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি প্রতিযোগিতা। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের অংশগ্রহণে এ আয়োজন করে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাই ও উত্তর আমিরাত। চার দলের অংশগ্রহণে বুধবার বিকেলে আরব আমিরাতের আজমানের আল মদিনা স্পোর্টস একাডেমিতে মুখোমুখি হয় খেলোয়াড়েরা। ‘দুয়ারে কনস্যুলেট’ কর্মসূচির আওতায় যার নাম দেয়া হয়েছে ‘বঙ্গবন্ধু কাবাডি কাপ ২০২২’। নক আউট ভিত্তিক এই টুর্নামেন্টের প্রথম রাউন্ডে মুখোমুখি হয় আবুধাবি ও আজমান প্রবাসী কাবাডি দল। ৪০ মিনিটের খেলায় ২২-১৩ পয়েন্ট নিয়ে জয়ী হয় আবুধাবি। দ্বিতীয় খেলায় ১৪-৭ পয়েন্টে শারজাকে হারায় দুবাই। ফাইনালে মুখোমুখি হয় আবুধাবি-দুবাই। তবে এবার জয় এসেছে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়িয়ে। শেষ পর্যন্ত দুবাই প্রবাসীরা ফাইনাল জিতেছে ৮-৭ পয়েন্টে।
আবুধাবি দল টেকনিকে এগিয়ে থাকলেও বুদ্ধিমত্তা আর শক্তি কাজে লাগিয়েছে দুবাই। প্রতিপক্ষকে আটকাতে বারবার খেই হারিয়ে ফেলছিলেন দুবাইয়ের ইমাম হোসেন ও মাসুম হাওলাদাররা। প্রথমার্ধে সমান তালে ডিফেন্স ঠেকিয়ে মাঠ ছাড়লেও দ্বিতীয়ার্ধে ট্রফি ঘরে তুলতে প্রাণপণ লড়াই চালাতে দেখা গেছে দু’দলের খেলোয়াড়দের। প্রতিপক্ষকে আটকানোর ঝুঁকিতে না গিয়ে পয়েন্ট আনায় মনোযোগ দেন তারা। একপর্যায়ে স্কোর দাঁড়ায় আবুধাবি ৫, দুবাই ৪। শেষক্ষণে আবুধাবির দুর্দান্ত লড়াই আশা-নিরাশার দোলাচলে ফেলে দেয় দুবাইকে। এই অবস্থায় মুহুর্তে কৌশল বদলে আবুধাবিকে নিজ ঘরে কুপোকাত করতে থাকে দুবাই। ম্যাচের শেষ মিনিটে দুবাইয়ের রক্ষণ ভাগের ভুলে আরও ২ পয়েন্ট পেয়ে যায় প্রতিপক্ষ। ঘাড়ের ওপর যেন গরম নিশ্বাস ফেলছিল আবুধাবি। শেষ ৫ মিনিটের স্কোরলাইন আবুধাবি ৭, দুবাই ৬। সবার চোখ তখন ঘড়ির দিকে। ইমাম হোসেনের আক্রমণে ম্যাচটা শেষ হয় ৮-৭ পয়েন্টে। শেষ বাঁশি বাজতেই আল মদিনা স্পোর্টস একাডেমির সবুজ ঘাসে ঢাকা গ্যালারিতে ঠাসা দর্শক মেতে ওঠেন আনন্দে। মাঠে বিজয়ী খেলোয়াড়দের আনন্দের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। প্রথমবারের মতো “দুয়ারে কমস্যুলেট” এর উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু কাবাডি কাপ ঘাড়ে তুলে ফেরে দুবাই প্রবাসীরা।
খেলা শেষে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিজয়ী, রানারআপসহ সকল খেলোয়াড় ও সংশ্লিষ্টদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন কনস্যুলেট জেনারেল বিএম জামাল হোসেন। দুবাই ও উত্তর আমিরাতের প্রথম শ্রম সচিব ফকির মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম (ইউএই) এর প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলম মানিক সিআইপি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন (ইউএই) এর আহ্বায়ক মনসুর সবুর, শারজাহ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ইসমাইল গণী চৌধুরী, বাংলাদেশ বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শিকদার মো. সাফায়েত উল্ল্যাহ, বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক নেওয়াজ সোহাগ, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মকবুল হোসেন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বারেকুজ্জামান, ভাইস প্রেসিডেন্ট হাসান জাকির, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, ইসি মেম্বার মেজবাহ উদ্দীন গাজী, মনিরুজ্জামান, অর্থ সম্পাদক রাজু আহমেদ প্রমুখ।
আগত দর্শক ও সমর্থকরা বলছেন, “কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। তবে গত কয়েক বছরে দেশের কাবাডি পিছিয়েছে অনেক। আবার সেই কাবাডিকে টেনে তুলতে দেশে কিম্বা প্রবাসে এমন আয়োজন ইতিবাচক। প্রবাসের মাটিতে নিজ দেশের খেলায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে যেমন শরীর মন ভালো রাখার সুযোগ পাচ্ছেন প্রবাসীরা। তেমনি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে তা উপভোগ করছেন অন্যান্যরা। এমন আয়োজনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশীয় খেলা-ধুলা আর কিষ্টি-কালচারের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবে নতুন প্রজন্ম।”