রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর বিশ্বের ধনীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সম্পদ ও পরিবার স্থানান্তর করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর বিশ্বের ধনীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ সম্পদ ও পরিবার স্থানান্তর করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ কাজে লাগাতে দুবাই ও আবুধাবির মতো এখানকার শহরগুলোয় বিদেশী অতিধনীদের ফ্যামিলি অফিস খোলার হারও দিন দিন বাড়ছে।
ব্রিটিশ বিনিয়োগ অভিবাসন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সকে উদ্ধৃত করে দ্য ন্যাশনালের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, চলতি বছর ৬ হাজার ৭০০-এরও বেশি মিলিয়নেয়ার ইউএই পাড়ি জমিয়েছে। দেশটিতে বিত্তবানদের প্রবেশ বাড়ায় সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন ধরনের পরিষেবার চাহিদা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পারিবারিক অফিস, যার মাধ্যমে সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ করছেন তারা।
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে। ফ্রান্সের সাম্প্রতিক নির্বাচন ও যুক্তরাজ্যের কর আইনে পরিবর্তনের মতো ঘটনা ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে। এছাড়া হোয়াইট হাউজে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সামরিক সংঘাত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কারণে প্রযুক্তি খাতে ব্যাঘাত এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলছে। এতে অতিধনীরা বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল ও ভালো আর্থিক পরিবেশসম্পন্ন দেশ খুঁজছে। উত্তরাধিকার পরিকল্পনাও এ স্থানান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আগামী ২৫ বছরে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ১০ লাখ কোটি ডলার সমপরিমাণ আর্থিক সম্পদ স্থানান্তর হতে পারে। সম্পদ রক্ষা, সন্তানদের শিক্ষাসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ধনী পরিবারগুলো ইউএই বেছে নিচ্ছে।
অতিধনী ব্যক্তিরা এতদিন বিনিয়োগ ও সম্পদের পরিকল্পনায় পারিবারিক অফিসের ওপর নির্ভর করেছেন। একটি পরিবারের জন্য একটি অফিস নির্ধারিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে এ ধারণায় পরিবর্তন আসছে। পারিবারিক অফিস এখন পরিষেবায় পরিণত হচ্ছে। একটি অফিস একাধিক পরিবারের আর্থিক বিষয় পরিচালনা করছে। এতে খরচও আগের চেয়ে কমে এসেছে। নতুন এ পরিষেবা ফ্যামিলি অফিস অ্যাজ আ সার্ভিস (এফওএএএস) নামে পরিচিতি লাভ করেছে। সাবস্ক্রিপশনভিত্তিক এ পরিষেবার মাধ্যমে একাধিক পরামর্শকের প্রয়োজনীয়তা কমেছে। পাশাপাশি তথ্যের গোপনীয়তাও আগের চেয়ে বেশি সুরক্ষিত হয়েছে।
অতিধনী পরিবারগুলো আজকাল বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ পরিকল্পনার দিকে ঝুঁকছে। নির্দিষ্ট আয়ের পরিবর্তে উদীয়মান খাতগুলো খতিয়ে দেখছে তারা। পরিচ্ছন্ন জ্বালানির জন্য তামার মতো যেসব উপাদান প্রয়োজন, সেসব শিল্পে তারা বিনিয়োগ করছেন।
সাম্প্রতিক যুক্তরাজ্য, ইতালি, চীন ও রাশিয়া থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পদের প্রবাহ বেশি দেখা গেছে। পাশাপাশি ইউরোপের অন্য দেশগুলো থেকেও এসেছেন অনেকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা এখানে খোলা হচ্ছে। ফলে সন্তানদের শিক্ষা নিয়েও সেভাবে চিন্তা করতে হচ্ছে না।
গত বছর প্রকাশিত হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের ‘ব্রিকস ওয়েলথ রিপোর্টে’ উল্লেখ করা হয়েছে যে দুবাইতে ১৫ জন বিলিয়নেয়ার, ২১২ জন সেন্টি-মিলিয়নেয়ার (১০ কোটি ডলার বা তার বেশি বিনিয়োগযোগ্য সম্পদের নিট মূল্য) ও ৭২ হাজার ২৭৩ জন মিলিয়নেয়ার পাড়ি জমিয়েছেন। সংস্থাটি পূর্বাভাস দিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে বছরের শেষ নাগাদ আরো ৪ হাজার ৫০০ মিলিয়নেয়ার আসবে। নাইট ফ্রাঙ্কের ওয়েলথ রিপোর্ট ২০২৪-এ বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে অতিধনী ব্যক্তিদের সংখ্যা ১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে, যা সৌদি আরবের ১০ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত অতিধনী ব্যক্তিদের তাদের সম্পদ বৃদ্ধি ও সুরক্ষিত রাখার জন্য উপযুক্ত স্থানে পরিণত হচ্ছে।
বৈশ্বিক সম্পদ পুঞ্জীভবনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হওয়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি নিয়ে অভিযোগও কম নয়। কর, ভিসা ও বিনিয়োগসহ অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি আইনের শিথিলতার কারণে ইউএই অবৈধ অর্থ পাচারের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।