মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পুরো রমজানজুড়ে মালয়েশিয়া ইফতারের বিশেষ আয়োজন

প্রকাশ: ৫ এপ্রিল ২০২২ | ২:৫৮ অপরাহ্ণ আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২২ | ২:৫৮ অপরাহ্ণ
পুরো রমজানজুড়ে মালয়েশিয়া ইফতারের বিশেষ আয়োজন

করোনা পরিস্থিতিতে গত দুই বছর মালয়েশিয়ায় নিয়ন্ত্রিত ছিল মানুষের চলাচল। বেশিরভাগ সময়ে মানুষ ঘরে বসে সময় কাটিয়েছেন। গত দুই রমজানেও বিধিনিষেধের কারণে রেস্তোরাঁয় ইফতার বিক্রির প্রবণতা ছিল বন্ধ। তবে এবার করোনা সংক্রমণ কমতে থাকায় বিধিনিষেধ মেনে চলছে নানা ধরনের ইফতারের আয়োজন।

মালয়েশিয়ার শাহ আলম, পেনাং, কোয়ান্তান, মেলাকাসহ প্রতিটি রাজ্যে চলে ইফতার মেলা। মারদেকা মাঠেও করা হয়েছে ইফতারের বিশেষ আয়োজন। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারিভাবে আয়োজন করা হয় ফ্রি ইফতারের। ধনী-গরিব সবাই একসঙ্গে বসে ফ্রি ইফতার করেন।

সোমবার (৪ এপ্রিল) মালয়েশিয়ার পিং-সিটি পুত্রাযায়ার রমজান বাজার পরিদর্শন করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব। এসময় তিনি বাজারের দর্শনার্থী ও স্টল অপারেটরদের স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (এসওপি) সেট মেনে চলার জন্য প্রশংসা করেন।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এমকেএন) নির্ধারণ করে দেওয়া সাধারণ কর্মপদ্ধতিগুলো (এসওপি) মানতে হবে। এছাড়া শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করানো (মাই সেজাহতেরা) অ্যাপটি সবসময় ব্যবহার করা উচিত।

ইসমাইল সাবরি বলেন, বাজারে অনেক বাবা-মা তাদের ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন। এটা আর করবেন না। কারণ ইফতারের বাজারের মতো যানজটপূর্ণ জায়গায় বাচ্চাদের নিয়ে গেলে তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। শিশুদের নিরাপত্তায় তাদের বাবা-মা বা অভিভাবকদের সর্তক থাকতে হবে।

রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, মূল্য পর্যবেক্ষণ দেশীয় বাণিজ্য ও ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন।

অন্যদিকে, একই দিনে মালয়েশিয়ার পিং-সিটি পুত্রাযায়ার রমজান বাজার পরিদর্শন করেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, যথারীতি রমজান বাজার আমার পছন্দের খাবার কেনার জায়গা। দুই বছর কেটে গেলো মহামারীর কারণে আমরা রমজান বাজারের খাবার কেনার অভিজ্ঞতা নিতে পারিনি। এ বছর রমজান বাজার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। লোকেরা এখানে প্রচুর পরিমাণে প্রস্তুত করা খাবার কিনছেন। এসময় তিনি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন।

মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান পালন করেন অনেকটা দেশীয় আমেজে। মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় রমজানে শ্রমিকদের নামাজ পড়ার ও রোজা রাখার সুযোগ করে দেওয়া হয়। মসজিদগুলোয় বিনামূল্যে ইফতারির সুযোগ থাকে। মসজিদে মসজিদে তারাবি নামাজ পড়া হয়। মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা রমজান মাসে ইফতার করেন দেশীয় খাবার দিয়েই। বাংলাদেশি মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টগুলোয় দেশীয় ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ইফতারি বানানো হয়। ইফতারিতে খেজুর, জিলাপি, শরবত, জুস, হালিম, ছোলা, মুড়ি, পিয়াজু, বেগুনি, চপ, লাচ্ছিসহ নানা ধরনের খাবার রাখা হয়।

বাংলাদেশিরা যেখানে থাকেন সেখানেই একসঙ্গে ইফতার করেন। তাই মালয়েশিয়ানদের পাশাপাশি বাঙালিদের আয়োজনটা বড় হয়। মালয়েশিয়ানরা অভিভূত হয় বাঙালিদের ইফতারির বিশাল আয়োজন দেখে। রমজান মাসে প্রতিদিন বিকেলে মালয়েশিয়ার পিং-সিটি পুত্রাযায়া, শাহ আলম, মারদেকাসহ প্রায় সব জায়গায় বাজার রমাদান নামে ইফতারি বেচাকেনার মেলা বসে। বাজার রমাদানে বিভিন্ন ধরনের মালয়েশিয়ান খাবারের সমারোহ ঘটে। তবে এসব খাবার প্রবাসী বাঙালিদের খুব একটা টানে না। ইফতারির আসল আইটেমগুলো তারা বাসায় নিজেরা তৈরি করেন বা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে আনেন।

রমজানে মুসলমানদের দিনে প্রকাশ্যে খাওয়া মালয়েশিয়ার আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রতিবছর এ অপরাধে আটক হন অনেকে। এছাড়া পুরো রমজানে সরকারি নজরদারিতে জিনিসপত্রের দাম অন্যান্য সময়ের থেকে কম রাখা হয়।

বাংলাদেশের মতো সব ইফতার আইটেমই আছে। জিলাপি কেজিপ্রতি ১০ রিঙ্গিত, বুন্দিয়া ১২ রিঙ্গিত, ছোলা ১২ রিঙ্গিত, পিয়াজু প্রতিটা এক রিঙ্গিত। এছাড়া রকমারি মিষ্টিতে ভরপুর। শত কষ্ট থাকা সত্ত্বেও সবার মুখে আনন্দ ফুটে ওঠে। রমজান যেন এই সুখ বার্তাই নিয়ে আসে। দেশীয় খাবার ছাড়া ভিনদেশি খাবারে ইফতার জমে না বাঙালিদের। সুদূর প্রবাসে থেকেও তাই তৃপ্তি মেটাতে ইফতারে বাঙালি খাবার-ই তাদের প্রথম পছন্দ।

সংলাপ-০৫/০৪/০০৫/আ/আ

সম্পর্কিত পোস্ট