
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত পাকিস্তানি এক প্রতিনিধিদলের তেলআবিব সফরের পর ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ পাকিস্তানিদের সফরকে ‘দারুণ অভিজ্ঞতা’ বলে অভিহিত করেছেন। একই সঙ্গে মুসলিম বিশ্বের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পাকিস্তানিদের এই সফর ‘বড় পরিবর্তনের’ উদাহরণ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈঠকে তিনি পাকিস্তানি প্রতিনিধি দলের ইসরায়েল সফরের বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সম্পর্ক স্বাভাবিকে স্বাক্ষরিত আব্রাহাম অ্যাকর্ড নিয়েও আলোচনা করেন তিনি।
ডব্লিউইএফের প্রেসিডেন্ট বোর্গ ব্রেন্ড উদ্দেশ্য করে ইসরায়েলের এই প্রেসিডেন্ট বলেন, আব্রাহাম অ্যাকর্ড অনেক ফল দিচ্ছে। সহযোগিতার পরিধি বাড়ানোর জন্য আপনি এটিকে কীভাবে দেখবেন?
জবাবে ডব্লিউইএফের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি আপনাকে বলব, আপনি জানেন, আমরা এটিকে জীবনের সব স্তরে দেখছি। নিছক পরিদর্শনের কথা বলছি না। আমরা অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, উদ্ভাবন স্তরেও আগ্রহ দেখছি। তবে আমি আপনাকে ব্যক্তিগত অনুভূতি সম্পর্কে আরও বেশি বলব।’
এরপর ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট হারজগ বলেন, তিনি গত সপ্তাহে দুটি প্রতিনিধিদলকে ইসরায়েলে স্বাগত জানিয়েছিলেন; যা ইসরায়েলকে ঘিরে মুসলিম বিশ্বের নীতির ‘বড় পরিবর্তন।’
তাদের মধ্যে একটি ছিল মরক্কোর তরুণ মতামত-প্রণেতাদের একটি প্রতিনিধিদল; যারা ফেসবুকে ইসরায়েলি একটি গ্রুপের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। উভয় গ্রুপ আমাদের কাছে এসে এক ঘণ্টার মতো বসেছিল এবং প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ও পরস্পরের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা শুনতে বেশ আশ্চর্যজনক মনে হয়েছিল।
পরের দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী পাকিস্তানি প্রবাসীদের একটি প্রতিনিধিদলকে তিনি পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন। ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট বলেন, এবং আমি অবশ্যই বলব যে, এটি চমৎকার এক অভিজ্ঞতা ছিল। ইসরায়েলে আমাদের কোনও পাকিস্তানি নেতা নেই। এসব কিছুই হয়েছে আব্রাহাম অ্যাকর্ডের ফলে। যার অর্থ ইহুদি এবং মুসলমানরা এই অঞ্চলে একসাথে বসবাস করতে পারে।
তবে পাকিস্তানি প্রবাসী প্রতিনিধিদলের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য দেননি ইসরায়েলের এই প্রেসিডেন্ট। ইসরায়েলের বেসরকারি সংস্থা শারাকা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ হিসেবে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের ওই প্রতিনিধিদলের ইসরায়েল সফরের ব্যবস্থা করেছিল।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন এই বিষয়ে মন্তব্যের জন্য দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর এবং সরকারের মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না পাকিস্তান। এমনকি ইসরায়েলের সাথে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবির অন্যতম সমর্থক পাকিস্তান। আব্রাহাম অ্যাকর্ড স্বাক্ষরিত হওয়ার পর পাকিস্তান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, ফিলিস্তিন সমস্যার সঠিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে পারবে না।
কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সরকারের নিম্ন স্তরে ইসরায়েল-পাকিস্তান অঘোষিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। ২০০৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরি এবং ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলভান শালোমের মধ্যে বৈঠক হয়েছিল।
পাকিস্তানিদের ইসরায়েল সফরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন দেশটির রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা ইমরান ইসমাইল। তিনি বলেন, এই লজ্জাজনক দাসত্বের কারণে জাতির অহংকার এখন নিলামে তোলা হচ্ছে।
এদিকে, দেশটির পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, ইসরায়েলে কোনও সরকারি বা আধা-সরকারি পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল বৈঠক করেনি। তিনি বলেন, সরকারের নীতি ‘স্পষ্ট’ এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি। ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জন্য আমাদের সহানুভূতি রয়েছে।