দুই পায়ে হেঁটে ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ড পৌঁছেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী শেখ খালিদ ইবনে সেলিম। শুধু সেলিম নয় এরকম আরও বহু মানুষ রাশিয়ায় অভিযান শুরুর পর থেকে ইউক্রেন থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। বিশেষ করে পোল্যান্ড অভিমুখে জনস্রোত নেমেছে। আশ্রয়প্রার্থীরা ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর থেকে পায়ে হেঁটে পোল্যান্ড সীমান্তে পৌঁছান।
এক সাক্ষাৎকারে বলছিলেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত এবং যুদ্ধাঞ্চল পেরিয়ে আসার কথা সেলিম বলছিলেন, ‘পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে যাওয়ার সময় কোনো কোনো জায়গায় ৩০-৩৫ কিলোমিটার, আবার কোথাও ৩৮-৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ গাড়ির লাইন ছিল। সীমান্তের দিক থেকে আসার সুযোগ ছিল না। যারা সীমান্তের দিকে যাচ্ছিলেন তাদের মধ্যে সামর্থ্যবান নারী-পুরুষকে হেঁটে যেতে হবে। এই ছিল পরিস্থিতি।’
‘না দেখলে বোঝানো যাবে না। ইউক্রেনিয়ান, আফ্রিকান, আরব, বাংলাদেশিদের হাঁটতে দেখেছি। আমরা নিজেরা হেঁটেছি ২৭ কিলোমিটারের মতো। গুগল ম্যাপে দেখানো হচ্ছিল ২৭ কিলোমিটার। কিন্তু যে সাইনবোর্ড তা দেখে মনে হচ্ছিল ৩০-৩৫ কিলোমিটার।’
ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। দেশটিতে রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর পোল্যান্ডের ওয়ারশতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকেই যুদ্ধাঞ্চলে থাকা বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল।
জানা গেছে, পোল্যান্ড সরকার ইউক্রেনে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের ১৫ দিনের জন্য ট্রানজিট ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেন তারা স্বদেশে চলে যেতে পারেন। ইতোমধ্যে বেশকিছু বাংলাদেশি পোল্যান্ডে পৌঁছেছেন।
পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বিবিসিকে আগেই জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের মধ্যে শ পাঁচেকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছেন।
শেখ খালিদ ইবনে সেলিম আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে পদযাত্রা করা একটি পরিবার ছিল, যেখানে ছিল শিশুরাও। এ কারণে যাত্রাপথে বিভিন্ন জায়গায় বিনামূল্যে খাবার পেয়েছি। যখন মোটামুটি জ্যাম থেকে নেমে ১৭-১৮ কিলোমিটার হাঁটি, সেখানে যাওয়ার পর বললো এখানে স্কুলের হলে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখানে বিশ্রাম নিয়ে রাতে বা পরদিন সকালে বর্ডারে যেতে পারেন।
তিনি জানান, এভাবেই ধীরে ধীরে সীমান্তের দিকে এগিয়েছেন। কিন্তু সীমান্তের চেকপোস্টে বিশৃঙ্খলার খবর কয়েকদিন ধরেই আসছিল বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির কারণে। তারা এমন অনেককে পেয়েছেন যারা সারারাত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে একশ মিটারও এগোতে পারেননি চেকপোস্টে।
সেলিম জানায়, রাশিয়ার অভিযান শুরুর পর প্রথম তিনদিন শুধু নারী ও শিশুদের সীমান্ত অতিক্রমের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ইউক্রেনে থেকে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এরপরই আসলে সীমান্তের দিকে ঢল বাড়ে বহুগুণ। পুরো ইউক্রেনের চার কোটি ১০ লাখ মানুষের অর্ধেক সীমান্তে গেলে কী অবস্থা হয় তা বুঝতেই পারছেন। সব শিশু বা ফ্যামিলি এমন।
পোল্যান্ড যেভাবে গ্রহণ করলো
তিনি জানান, সীমান্ত অতিক্রমের পর সেখানকার সুযোগ সুবিধা তারা ভালোই পেয়েছেন। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে দুদিন দুই রাত তাদের শুধু হাঁটতে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
‘বসার সুযোগ কমই হয়েছে। লাইনের পর লাইন। হাঁটার পর হাঁটা। সীমান্তে তিন কিলোমিটার দূর থেকে সকাল ৬টায় রওনা দিয়ে পোল্যান্ডে পৌঁছেছি সন্ধ্যা ৭টায়। অনেকের সঙ্গে কথা হয়েছে যারা দুই রাত শুধু লাইনেই ছিলেন। এই ঠান্ডায় তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।’ ‘তবে সেখানে যাওয়ার পর সবার সহযোগিতা পেয়েছি। একটা ফ্যাক্টরিতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। বেড ও ফুড ফ্রি।’
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশের পরপরই ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে স্থল, আকাশ ও জলপথে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে সে দেশের সেনারা। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে, এমনকি বেলারুশ থেকেও হামলা চালানো শুরু হয়। ধীরে ধীরে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয় রুশ সেনারা। তীব্র লড়াই বাধে ইউক্রেনের সেনাদের সঙ্গে।
ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশের আগে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেন পুতিন।
২১ ফেব্রুয়ারি রাতে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, পূর্ব ইউক্রেন এক সময় রাশিয়ার ভূমি ছিল। পুতিনের এ ঘোষণার পরপরই শুরু হয় ইউক্রেনে আগ্রাসন।
সংলাপ ০১/০৩/০১২ আজিজ