চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার সিআরবি, পুরাতন রেল স্টেশন, পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও কাজির দেউড়ী এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে ও রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন। পুলিশ বলছে, ছিনতাইকারীরা ভোরে ও রাতে টার্গেট করে ছিনতাই করে থাকে।
সিআরবি এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেফতার আসামিরা হলেন- মো. হাসান (২০), রাকিব হোসেন (২০), মো. ফয়সাল (২০), আরমান হোসেন তাসিন (২১) ও সিরাজুল ইসলাম মুন্না (২০)। পলোগ্রাউন্ড মাঠ ও কাজির দেউড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতাররা হলেন- মো. শরীফ হোসেন প্রকাশ শরীফ (২১), মো. বাদশা (২২), মো. হানিফ (১৯), মো. ইমরান হোসেন লাবু (৪২), মো. ওমর ফারুক ইফতি (১৯), জয় বৈঞ্চব (১৯), মো. সালাউদ্দিন (১৯), শাকিব খান (২০), জুয়েল (১৯) ও রনি দাশ (২১)।
কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন বলেন, আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সদস্য। তারা রাতের অন্ধকারে ছিনতাই করার জন্য চট্টগ্রাম নগরীর অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকাকে বেছে নেয়। ছিনতাই করে যা পায় তারা তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। ছিনতাইকারী চক্রটি টাইগারপাস থেকে সিআরবিগামী তিন রাস্তার মোড়ে সিঁড়ির নিচে বসে থাকে। কোনো ব্যক্তি ওই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে দেখলেই তারা পিছু নেয়। অন্ধকার স্থানে যাওয়া মাত্রই তাকে ডাক দিয়ে বিভিন্ন কথা বলে। এর মাঝেই ছুরি বের করে ভয়ভীতি দেখিয়ে সর্বস্ব নিয়ে নেয়। যদি কোনো ভিকটিম বাঁধা দেয় তাৎক্ষণিক তাকে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু কেড়ে নিয়ে কদমতলীর দিকে চলে যায়। আর যদি পুলিশের গাড়ি আসতে দেখে তাৎক্ষণিক সিঁড়ির নিচে দিয়ে নেমে পালিয়ে যায়। অপরাধী চক্র দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম নগরীতে ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছিল।
তিনি আরও বলেন, তাদের মধ্যে ৪ থেকে ৫ জন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। আর বাকি ২ থেকে ৩ জন পুলিশ বা কোনো লোক আসছে কি না তা পাহারা দেয়। এই প্রক্রিয়ায় আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে নগরীতে ডাকাতি করে আসছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর রাত ১১টার দিকে মো. নাজিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি টাইগার পাস থেকে পায়ে হেঁটে পলোগ্রাউন্ড বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় বরাবর রাস্তায় পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতপরিচয় ৩ জন ছিনতাইকারী তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। পরে ছুরির ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোন, নগদ টাকা ও ব্যাংকের আইডি কার্ড নিয়ে যেতে চায়। এই সময় ছিনতাইকারীর সঙ্গে তার ধস্তাধস্তা হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যায়।
এছাড়া গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে মো. আইয়ুব খান (২৪) নামের একজন টাইগারপাস থেকে সিআরবিগামী রোডের মধ্যবর্তী স্থানে ছুরিকাঘাত করে আহত করে মোবাইলসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে যায়। এই ঘটনায় আইয়ুব চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন।
কোতোয়ালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) চৌধুরী রেজাউল করিম বলেন, মামলা দায়েরের পর ঘটনাস্থলের আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। পরে সোমবার ভোরে বয়লার এভিনিউ ও পুরাতন রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। এই ঘটনায় পলতাক আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত আছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন আরও বলেন, রোববার রাত ১১টার দিকে পৃথক অভিযানে পলোগ্রাউন্ড মাঠের দক্ষিণ পাশে অন্ধকার জায়গা থেকে ৭ ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করা হযেছে। এসময় তাদের কাছ থেকে সাতটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। এই ছিনতাইকারী চক্রটি রাতে ও ভোরে স্টেশনের ট্রেন যাত্রী, বাস যাত্রী ও পথচারীদেরকে ছুরির ভয় দেখিয়ে ছিনতাই করে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার আসামি মো. শরীফ হোসেন প্রকাশ শরীফের বিরুদ্ধে খুলশী ও কোতোয়ালী থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক ২টি মামলা আছে। এছাড়া আসামি মো. হানিফের বিরুদ্ধে খুলশী থানায় মাদকদ্রব্য আইনে ১টি মামলা, মো. ইমরান হোসেন লাবুর বিরুদ্ধে ৫টি ও ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা আছে।
এদিকে পৃথক অভিযানে কাজির দেউড়ী এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কাজীর দেউরী রেড চিলি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী মো. মহাব্বত হোসেন রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন। এসময় কাজীর দেউরীর মুক্ত মঞ্চের সামনে গোধুলী বেলা নামক দোকানের সামনে পৌঁছালে তিনজন আসামি ভয়ভীতি দেখিয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি মোবাইল ফোন দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে তিনজন মিলে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশের টহল টিম গিয়ে তিনজনকে আটক করে। আরেকজন মোবাইল ফোন নিয়ে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায়ও মামলা দায়ের করা হয়েছে।