শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১

টাকার মান কমল আরও ২৫ পয়সা

প্রকাশ: ১০ মে ২০২২ | ৩:৩৪ অপরাহ্ণ আপডেট: ১০ মে ২০২২ | ৩:৩৪ অপরাহ্ণ
টাকার মান কমল আরও ২৫ পয়সা

বাজারে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে মার্কিন ডলারের দাম। ফলে ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রা টাকা মান হারাচ্ছে। এক দিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক‌মে গে‌ছে ২৫ পয়সা। আর গত ১৪ দিনে দুই দফায় ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে ৫০ পয়সা।

সবশেষ মঙ্গলবার (১০ মে) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। এক‌দিন আ‌গে সোমবারও (৯ মে) এক ডলা‌রে লেগেছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। আর গত এপ্রিলের ২৭ তারিখ ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা।
তবে ব্যাংকগুলো নগদ ডলার বিক্রি করছে এর চেয়ে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি দরে। ব্যাংকের বাইরে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে ডলার কেনাবেচা হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৩ টাকায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে একদিকে ব্যাপক হারে আমদানির চাপ বেড়েছে। ফলে আমদানির দায় পরিশোধে বাড়তি ডলার লাগছে। কিন্তু সেই তুলনায় রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়েনি। ফলে ব্যাংক ব্যবস্থা ও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের ওপর চাপ বাড়ছে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহে ঘাটতি দেখা দি‌য়ে‌ছে। যে কারণে টাকার বিপরীতে বাড়ছে ডলারের দাম। বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করছে। এতে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না ডলার।

২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়।

২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। এরপর ৩ আগস্ট থেকে দু’এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতাে ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এরপর চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তা বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছায়। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ রেটেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরও ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এ‌প্রিল আ‌রো ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে আরও ২৫ পয়সা বাড়ে। ফলে এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড মূল্য। অর্থাৎ গত ৯ মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারে দর বেড়েছে এক টাকা ৯০ পয়সা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, মূলধনীয় যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানি বেশি হওয়ায় ডলারের চাহিদা বেশি। তাই ডলারের রেট বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার বিশ্লেষণ করে ডলারের দাম ঠিক করে। কোনো সময় টাকার অবমূল্যায়ন করে। এখন বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করেছে এখন ডলারের দাম বাড়ানো উচিত। তাই বাড়িয়েছে।

১৪ দিনের ব্যবধানে ৫০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। এটা অস্বাভাবিক কি না জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বাজার বিশ্লেষণ করে যতক্ষণ বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে ঠিক রাখার প্রয়োজন ছিল ততক্ষণ ঠিক রেখেছে। এখন বাড়ানো প্রয়োজন মনে করেছে তাই বাড়িয়েছে।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২৭ এ‌প্রিল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪৬০ কোটি (৪.৬০ বিলিয়ন) ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের আগে সেটিই ছিল সর্বোচ্চ ডলার কেনার রেকর্ড ক‌রে‌ছিল আর্থিক খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো চাইলেও বাড়তি ডলার নিজেদের কাছে রাখতে পারে না। বৈদেশিক মুদ্রা রাখার বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংকের নির্ধারিত সীমা আছে, যাকে এনওপি বা নেট ওপেন পজিশন বলে। যদি কোনো ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার মজুত থাকে তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলার বিক্রি করতে হয়। আর না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিক্রি করতে হবে। কেউ নির্ধারিত সীমার বাইরে ডলার নিজেদের কাছে ধরে রাখলে ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। জরিমানার হাত থেকে বাঁচার জন্য ব্যাংকগুলো বাজারে ডলার বিক্রি করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, একটি ব্যাংক তার মূলধনের ১৫ শতাংশের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে ধরে রাখতে পারে। এর অতিরিক্ত হলেই তাকে বাজারে ডলার বিক্রি করতে হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট