শনিবার শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটে হেরেছে স্বাগতিকরা। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১১৫ রানের সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় সফরকারীরা। ফলে সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হলো।
টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার, মুশফিকুর রহিম ছাড়া সবাই ব্যর্থ। ফলে বাংলাদেশ পায় মামুলি সংগ্রহ। এরপর নির্বিষ বোলিং ও তিন ক্যাচ মিসের খেসারত দিয়ে বড় হার সঙ্গী হলো টাইগারদের।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খেতে পারতো আফগানিস্তান। আগের ম্যাচেই ৪ উইকেট তুলে নেওয়া নাসুম আহমেদের তৃতীয় বলেই আফগান ওপেনার হজরতুল্লাহ জাজাই শূন্যে বল তুলে দেন। তার ব্যাটের কানায় লেগে বল সরাসরি উপরে উঠে যায়। কিছুটা দৌড়ে গিয়ে হাতেই বল পান বোলার, কিন্তু তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি। নাসুম না পারলেও দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্যের দেখা পান আরেক স্পিনার মেহেদি হাসান। ডাউন দ্য ট্র্যাকে শট খেলতে গিয়ে কভারে থাকা মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ (৩)।
এরপর নিজের তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম দুই বলেই উসমান গণির কাছে ছক্কা ও চার হজম করেন নাসুম। চতুর্থ বলে গণির বিপক্ষে লেগ বিফোরের আবেদন করেন বাঁহাতি স্পিনার। কিন্তু আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিও নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু তাতেও সিদ্ধান্ত বদলায়নি। এরপর নাসুমের ক্যাচ মিসে জীবন পাওয়া সেই জাজাই ধীরে ধীরে হাত খুলতে শুরু করেন। সাকিবের দ্বিতীয় ও ইনিংসে নবম ওভারের শেষ দুই বলে বিশাল দুই ছক্কা হাঁকিয়ে আফগানদের দলীয় সংগ্রহ ৫০ পার করেন তিনি। সাকিবের ওই ওভারে আসে ১৭ রান।
জাজাই ও গণির ব্যাটে জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে যায় আফগানরা। দারুণ জুটি গড়েন তারা। তবে দ্বাদশ ওভারে ফের ক্যাচ মিসের যন্ত্রণা সইতে হয় বাংলাদেশকে। এবার মেহেদির বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন গণি, কিন্তু সহজ ক্যাচ আফিফ হোসেনের হাত ফসকে বেরিয়ে যায়। মেহেদির পরের ওভারে ফের গণির ক্যাচ মিস। এবার ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা ফিল্ডার নাঈম শেখের হাত গলে বল পেরিয়ে গেল বাউন্ডারি লাইন।
জীবন পাওয়া দুই আফগান ব্যাটারই ফিফটির পথে ছুটছিলেন। এর মধ্যে জাজাই সাকিবের তৃতীয় ওভারে বিশাল দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ম্যাজিক ফিগারের দেখা পান। ৩৮ বলে ফিফটি ছোঁয়ার পথে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কা হাঁকান তিনি। আফগানদের দলীয় সংগ্রহও ১০০ ছাড়ায়। তবে পরের ওভারে মাহমুদউল্লাহর প্রথম বলেই বিদায় নেন ৪৮ বলে ৪৭ রান করা গণি। জুটি ভাঙে ৯৯ রানে! তবে ম্যাচ শেষ করেই মাঠ ছাড়েন জাজাই (৫৯*)।
এর আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। আগের ম্যাচে অভিষেক হওয়া ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার আজ বিদায় নিয়েছেন ৪ রান করেই। এরপর ১০ বলে ১৩ রান করে আফগান পেসার আজমতুল্লাহ ওমরাইজ্যের বলে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন আগের ম্যাচের নায়ক লিটন (১৩)। কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন ধুঁকতে থাকা নাঈম শেখও। শুরু থেকেই নড়বড়ে ব্যাটিং করতে থাকা নাঈম ১৯ বলে ১৩ রান করে করিম জানাতের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরেছেন।
নাঈমের পর দ্রুত ফিরেছেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। ওমরাজাইয়ের বলে উইকেটরক্ষক রহমানুল্লাহ গুরবাজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে সাকিব ১৫ বলে করেছেন মাত্র ৯ রান। দলীয় ৪৫ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রথম ১০ ওভারে তুলতে পারে মাত্র ৪৭ রান। প্রচণ্ড চাপের মুখে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখাচ্ছিলেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। দুজনে মিলে ৩১ বলে ৪৩ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েও মাহমুদউল্লাহ আফগান স্পিনার রশিদ খানের বলে এলডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ১৪ বলে ২১ রান করেন।
দলীয় রান ১০০ ছোঁয়ার আগেই বিদায় নেন মুশফিকও। শততম ম্যাচে ইনিংসের হাল ধরলেও ২৫ বলে ৩০ রান করে আফগান পেসার আজমতুল্লাহ ফারুকির বলে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন তিনি। এরপর মেহেদি হাসানকে শূন্য রানেই বিদায় করেন ফারুকি। বাঁহাতি ব্যাটার আফিফ হোসেনও (৭) ব্যর্থ। ওমরজাইয়ের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন তিনি। এরপর ইয়র্কারে বোল্ড হয়ে ফারুকির তৃতীয় শিকান হন শরিফুল ইসলাম (০)। শেষদিকে ৫ বলে ৬* রান করে দলীয় সংগ্রহ ১১৫-তে নিয়ে যান মোস্তাফিজ।
বল হাতে আফগানিস্তানের ওমরজাই ও ফারুকি ৩টি করে এবং নবি ও রশিদ ১টি করে উইকেট নেন।
সংলাপ ০৫/০৩/০০৪ আজিজ