শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার যত সুবিধা

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০২২ | ৪:১৯ অপরাহ্ণ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২২ | ৪:১৯ অপরাহ্ণ
জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার যত সুবিধা

জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী অভিবাসনপ্রত্যাশী, শরণার্থীরা দেশটির সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকেন। ফেরত যাওয়ার খরচ থেকে শুরু করে এককালীন অর্থ ও স্বদেশে নতুন উদ্যোগ শুরুর সহায়তাও পান তারা। বাংলাদেশিদের জন্য প্রযোজ্য এমন দুইটি সহায়তা প্রকল্পের কথাও জানানো হবে।

প্রতি বছর জার্মানিতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী, শরণার্থী আশ্রয় আবেদন করেন। দেশটির ফেডারেল অফিস ফর মাইগ্রেশন অ্যান্ড রিফিউজিস (বিএএমএফ)-এর হিসাবে ২০২১ সালে এক লাখ ৯০ হাজার ৮০০ জন আশ্রয় আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকের আবেদন গৃহীত হলেও, বড় একটি অংশই প্রত্যাখ্যাত হয়। এমন আশ্রয় আবেদনকারী, প্রত্যাখ্যাত ও শরণার্থীরা নিজ দেশে ফেরত যেতে চাইলে তাদের সহযোগিতা দেয় জার্মানির সরকার।

২০২১ সালে আরইএজি/জিএআরপি নামের একটি কর্মসূচির সুবিধা নিয়ে জার্মানি ছেড়েছেন ছয় হাজার ৮০০ জন (সাময়িক হিসাব)। ২০২০ সালে এই সংখ্যাটি ছিল পাঁচ হাজার ৬৫৭ জন। যেখানে ২০১৯ সালে ১৩ হাজার ৫৩ জন, ২০১৮ সালে ১৫ হাজার ৯৪১ জন, ২০১৭ সালে ২৯ হাজার ৫২২ জন আর ২০১৬ সালে স্বেচ্ছায় জার্মানি ছেড়েছেন ৫৪ হাজার জন। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এই সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমে গেছে বলে উল্লেখ করেছে বিএএমএফ।

কিছু ক্ষেত্রে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া ও বসবাসের অনুমতি না থাকায় স্বেচ্ছায় ফেরত যান অভিবাসীরা। আবার অনেকে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন অবস্থাতেও চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এমন অভিবাসীরা ফেরত যেতে চাইলে সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন।

রি-ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড ইমিগ্রেশন প্রোগ্রাম ফর অ্যাসাইলাম সিকার্স/গভর্নমেন্ট অ্যাসিস্টেড রিপ্যাট্রিয়েশন প্রোগ্রাম, সংক্ষেপে আরইএজি/জিএআরপি। জার্মান সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটির মাধ্যমে যেসব অভিবাসী নিজ দেশে বা অন্য যেই দেশ তাকে গ্রহণ করতে চায়, সেখানে ফেরত যেতে চাইলে সহায়তা করা হয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম-এর মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এক্ষেত্রে কী পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে সেটি প্রতি বছর নির্ধারণ করে জার্মানির সরকার।

যেসব সুবিধা পাওয়া যাবে

বিমান অথবা বাসের টিকিট ও বসবাসস্থল থেকে বিমানবন্দর বা বাস স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াতের খরচ; যাতায়াতকালীন খরচ: প্রতিজন ২০০ ইউরো (১৮ বছরের নীচে ১০০ ইউরো); এককালীন সহায়তা: জনপ্রতি সর্বোচ্চ ১০০০ ইউরো (১৮ বছরের নিচে ৫০০ ইউরো। একটি পরিবারের জন্য সর্বোচ্চ ৪০০০ ইউরো); চিকিৎসা সহায়তা: গন্তব্য-দেশে পৌঁছানোর পর তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ২০০০ ইউরো;

কারা আবেদন করতে পারবেন?

যার আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াধীন; যার আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে ও দেশ ছাড়ার বাধ্যবাধকতা আছে; যার বসবাসের অনুমতি আছে যেমন, শরণার্থী মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তি; মানবপাচারের শিকার বা জোরপূর্বক যৌনপেশায় জড়াতে বাধ্য হওয়া ব্যক্তি;

আবেদন প্রক্রিয়া।

কাউন্সেলিং সেন্টারগুলোর মাধ্যমে আগ্রহীদের আবেদন করতে হবে। বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা এই ধরনের কাউন্সেলিং সেন্টার পরিচালনা করে আসছে। জার্মানির সমাজ কল্যাণ দপ্তর বা বিদেশিদের নিবন্ধন কার্যালয়ে সরকারি কাউন্সেলিং সেন্টারের সেবা পাওয়া যাবে। আপনার নিকটস্থ কাউন্সেলিং সেন্টারের ঠিকানা পেতে পারেন এখানে।

যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন

স্বেচ্ছায় জার্মানি ত্যাগে আপনার কাছে গন্তব্য দেশের বৈধ ভ্রমণ ডকুমেন্টস, যেমন, পাসপোর্ট বা বসবাসের অনুমতিপত্র থাকতে হবে। না হলে দূতাবাসের মাধ্যমে জরুরি ভ্রমণ সনদ বা এমন কোনো অনুমতিপত্রও পাওয়া যেতে পারে। নিজ দেশ ছাড়া অন্য দেশে যেতে চাইলে সে দেশের দূতাবাস থেকে এক বছরের ভিসা নিতে হবে।

অসুস্থ বা চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিরাও এই সুবিধা নিয়ে ফিরতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হবে। এজন্য চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। কেউ গর্ভবতী হলে তার ভ্রমণ বিষয়ে চিকিৎসকের সনদ জমা দিতে হবে।

ইরিন প্রকল্প

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্প ইউরোপীয় রিটার্ন অ্যান্ড রিইন্টিগ্রেশন নেটওয়ার্ক, সংক্ষেপে যা ইআরআরআইএন বা ইরিন নামে পরিচিত। বাংলাদেশসহ ২৪টি দেশের অভিবাসীরা দেশে ফেরার পর এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকেন।

এর অধীনে ফিরে যাওয়ারা তাদের দেশে প্রকল্পের স্থানীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান বা সার্ভিস প্রোভাইডারের মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রমে সাহায্য পাবেন। যেইসব সেবা পাবেন, তার মধ্যে আছে:

দেশে অবতরণ পরবর্তী সহায়তা (বিমানবন্দর থেকে যাতায়াত, স্বল্পকালীন থাকার ব্যবস্থা); পৌঁছানোর পর কাউন্সেলিং; বাসস্থানের সহায়তা (মৌলিক সরঞ্জাম, ভাড়া, ভর্তুকি); পেশাগত দক্ষতা নিরূপণ ও চাকরি পেতে সহায়তা; ব্যবসা চালুতে সহায়তা; সামাজিক ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে কাউন্সেলিং ও সাধারণ আইনি সহায়তা; পুনর্বাসনে সহায়তা (দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক কার্যক্রম)।

স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক যেভাবেই প্রত্যাবর্তন হোক না কেন, এই প্রকল্পের অধীনে দুই ধরনের ব্যক্তিই সহায়তা পেতে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদন প্রক্রিয়া

এই ওয়েবসাইট থেকে ইরিন প্রকল্পের অধীনে রি-ইন্টিগ্রেশন বা পুনর্বাসন সহায়তা পেতে আপনাকে আবেদন করতে হবে। আবেদনের ইলেকট্রনিক ফর্মটি আপনার পরিচয়পত্র (পাসপোর্ট) ও সামাজিক সুবিধাপ্রাপ্তির ডকুমেন্টসহ পাঠাতে হবে বিএএমএফ এর কাছে।

নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যেও এই আবেদনটি করা যাবে। তবে জার্মানি ছাড়ার পরিকল্পনা করার আগেই এ বিষয়ে তৃতীয় দেশের সার্ভিস প্রোভাইডার বা এ বিষয়ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে বিএএমএফ, যাতে অভিবাসী নিজ দেশে পৌঁছানোর পরপরই প্রয়োজনীয় সহায়তাগুলো পেতে পারেন। কোনো ব্যক্তি দেশে পৌঁছানোর পর সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুনর্বাসন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করবেন। তার ভিত্তিতে বাস্তবতার নিরিখে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।

এই প্রকল্পের অধীনে একজন ব্যক্তির পুনর্বাসন কার্যক্রমের মেয়াদ শেষ হবে ছয় থেকে নয় মাসের মধ্যে। তবে সর্বোচ্চ ১২ মাস বা এক বছরও হতে পারে। ওই ব্যক্তি অন্যকোনো প্রকল্প থেকে সহায়তা পেলেও ইরিন-এর সহায়তা পেতে তা কোনো বাধা তৈরি করবে না। এ বিষয়ে আরও জানতে পারেন প্রকল্পের ওয়েবসাইট থেকে।

জার্মানি থেকে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনকারী বিভিন্ন দেশের অভিবাসীদের জন্য আরও কিছু কার্যক্রম থাকলেও বর্তমানে বাংলাদেশিরা এই দুইটি প্রকল্পের মাধ্যমেই সহায়তা পাচ্ছেন।

সূত্র: বিএএমএফ, রিটার্নিং ফ্রম জার্মানি/ফয়সাল শোভন/ইনফোমাইগ্র্যান্টস

সংলাপ-১৩/০৩/০০৬/আ/আ

সম্পর্কিত পোস্ট