বুধবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

জামানত ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান

প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৭:৫৮ অপরাহ্ণ আপডেট: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৭:৫৮ অপরাহ্ণ
জামানত ছাড়াই ঋণ দিচ্ছে কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান

সময়ের সংলাপ ডেস্ক :

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে পরিচালকদের যে কোনো অঙ্কের ঋণে জামানতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্যদের জামানত না নিয়ে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আইন লঙ্ঘন করে বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যে কারণে ঠিকমতো ঋণ আদায় করতে না পেরে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে এমন তথ্য পাওয়ার পর এখন এ ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থান নেওয়া হয়েছে।খবর সমকালের।

গতকাল সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীকে চিঠি দিয়ে আইন অনুযায়ী সব ঋণ বা লিজের বিপরীতে দ্রুততম সময়ে জামানত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনে ঋণের জামানত বিষয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। তবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নিয়ম লঙ্ঘন করে কোনো কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন গ্রাহকের অনুকূলে জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে। ঋণ শৃঙ্খলা নিশ্চিত ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় জামানত ছাড়া যেসব ঋণ দেওয়া হয়েছে, যোগ্য জামানত নিয়ে অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের যত অনিয়ম পেয়েছে তার বেশিরভাগের বিপরীতে আইন লঙ্ঘন করে জামানতবিহীন কিংবা ভুয়া জামানতের বিপরীতে ঋণ দেওয়ার তথ্য মিলেছে। অনেক ক্ষেত্রে জামানত নিলেও তা অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুয়া গ্যারান্টির বিপরীতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠান আর আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। পিকে হালদারের দখল করা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। সমস্যাগ্রস্ত পিপলস লিজিং, বিআইএফসি, এফএএস ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, প্রিমিয়ার লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্সসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রচুর ঋণখেলাপি হলেও যথাযথ আমানত না থাকায় তা ফেরত পাওয়া যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন পরিচালকের ভুয়া ঋণ ছাড়াও ব্যাংক ঋণ না দিয়ে ফেরত দেওয়াদের অনেককে এসব প্রতিষ্ঠান বড় অঙ্কের ঋণ দিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা আর ফেরত আসছে না। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে যোগ্য জামানত না থাকায় আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমেও এসব ঋণ আদায়ে ব্যবস্থাও নিতে পারছে না।

ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে পুরো আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত এখন সমালোচনার মুখে রয়েছে। বেশ আগ থেকে এ খাতের অবস্থা খারাপ হলেও ২০১৯ সালের জুলাইতে পিপলস লিজিং অবসায়নের উদ্যোগের পর পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়। এর মধ্যে এনআরবি গ্লোবাল ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের সাবেক এমডি কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ সামনে আসায় এ খাতের অবস্থা আরও খারাপ হয়। প্রশান্ত কুমার হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বিআইএফসিতে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নানা জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যান বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে আসে।

খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি: করোনার কারণে চলতি বছরও ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি করার ক্ষেত্রে নানা শিথিলতা রয়েছে। এরপরও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬৬ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ১০ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। শতাংশ বিবেচনায় ব্যাংকের তুলনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ প্রায় দ্বিগুণ। গত মার্চ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এ খাতের ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা ঋণের যা ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। শিথিলতা না থাকলে খেলাপি ঋণ আরও অনেক বাড়ত বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে খেলাপি ঋণে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছে বিআইএফসি। প্রতিষ্ঠানটির ৮১৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৭৭২ কোটি বা ৯৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ খেলাপি। পর্যায়ক্রমে এফএএস ফাইন্যান্সের এক হাজার ৯২৪ কোটি টাকা ঋণের ৮৭ দশমিক ৯২ শতাংশ খেলাপি। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের চার হাজার ২৩ কোটি টাকা ঋণের ৭৪ দশমিক ৫৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৪১ কোটি টাকা ঋণের ৫০ দশমিক ৫৮ শতাংশ খেলাপি। আর প্রিমিয়ার লিজিংয়ের এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ঋণের বিপরীতে ৪৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ খেলাপি।

সম্পর্কিত পোস্ট