সিটি কর্পোরেশন এবং সিডিএ! একটি দারুণ কৌশলী নগর শাসন ব্যবস্থা। পিরিয়ড ঘুরে নির্বাচন হয়। সবাই হাততালি দেয়। চট্টগ্রাম নগরী দেখভাল ব্যবস্থা ন্যস্ত হয় নির্বাচিত সম্মানিত মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যানের উপর। সাথে থাকেন ওয়ার্ডভিত্তিক কাউন্সিলরগণ ও সিডিএ মেম্বার। সবাই কমবেশি ভালই কাজ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাফল্য, কাজে সয়লাব। কার আগে কে ছবি তুলে ফেসবুকে দিবেন সেই মহড়া বেশ লক্ষণীয়। কিন্তু যেসব কাজে বেশি জোর দেয়া দরকার তা কেন জানি অবহেলায় পর্যবসিত হয়। যেমন- ফুটপাত, পানি নিষ্কাশনের দেখাশোনার কাজ।
জনগণের চলাফেরার রাস্তা তৈরি করা হলো নালা নর্দমার উপর স্ল্যাব দিয়ে। ব্যাস, এই দায়সারা কাজ যুগের পর যুগ চলছেই তো চলছে। সেদিন আমিও একখণ্ড ফাঁকা নালায় পড়ব পড়ব করে কোনোরকম রক্ষা পেয়েছিলাম। ভাগ্যিস আমার মেয়েটা পড়েনি। এতগুলো কাউন্সিলরের কাজ কী তবে? মেয়রের কাছে মাসিক সভায় অন্ততঃ এই নালাগুলোর উপরিতলের বেহাল দশার কথাতো বলাই যায়! লোহার পাটাতন ব্যবহার করে স্থায়ী কংক্রিট মিক্সারের ঢালাই কি খুব ব্যয়বহুল? কেন পথচারী ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে প্রাণ হারাবে? এর দায় কে নেবে? নিশ্চয়ই এই দায় নগর পিতার উপর বর্তায়। যার যায় সেই কেবল বুঝে। এতে রাষ্ট্রের কীইবা যায় আসে!
কয়দিন পর ঊনিশে পা রাখা ভবিষ্যৎ প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মেয়েটির নর্দমায় ডুবে মরার কথা সবাই ভুলে যাবে কালের স্বাভাবিক নিয়মে। কিন্তু তার পরিবার কি পারবে একটি জীবনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে? পথে ঘাটে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক। তাদেরও কি চোখে পড়ল না যে ফাঁকা নালা! এত বড় দূর্ঘটনায ঘটে কিভাবে! গত আগস্টের টানা বর্ষণে আরও একজন ব্যক্তি নালায় পড়ে মারা গেলেন।
এটা কেমন অনিরাপদ শহর যেখানে তার রক্ষার মত কোনো হৃদয়বান নগর পিতামাতা নেই! শুধু শাসন, আইন আর ক্ষমতা থাকলেই হয় না। মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষ হলেই কেবল একজন পথচারীর দুঃখ বুঝতে সমর্থ হবেন।জীবনের মূল্য বুঝতে সক্ষম হবেন। একটু চেপে বৃষ্টি হলেই আমাদের মতো খেটে খাওয়া মানুষদের বাসা থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম শহর পানিতে তলিয়ে যায়। অফিস যেতে বিড়ম্বনা, গাড়ির সমস্যা কোনটা নেই এই শহরে?
আমরা চাই, অনতিবিলম্বে ড্রেনগুলোর সংস্কার কাজ শেষ হোক। প্রয়োজনে অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়োগ দিন। এভাবে আর চলতে পারে না। আমাদের প্রত্যাশা, সবুজায়নে একটি সুশৃঙ্খল, শান্তিময় আর যানজটবিহীন চট্টগ্রাম নগরী। রাস্তার পাশে সকল অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে ফুটপাত তৈরি করুন। রাস্তা আরো প্রশস্ত করা হোক, যাতে সড়ক দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। নালা নর্দমার উপর দয়া করে ফুটপাত তৈরি করবেন না। এতে ভবিষ্যতে আরো প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা জোরদার হোক। নদীর নাব্যতা সৃষ্টি করা হোক। পলিথিনসহ যাবতীয় ময়লা আবর্জনা রিসাইকেল করে গ্যাস উৎপাদন সম্ভব। এতে গ্যাস সংকট অনেকাংশে হ্রাস পাবে। স্বপ্ন বুকে আকাশ দেখে চলতে গিয়ে আর যেন কোনো পথচারী মৃত্যুকূপ নালা নর্দমায় ডুবে বীভৎস মৃত্যুর মুখে পতিত না হয়। এই কামনা করি। আমাদের প্রিয় চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। চট্টগ্রাম ছাড়া বাংলাদেশ পঙ্গুদশার নামান্তর বৈকি। তাই, চট্টগ্রামকে নিরাপদ, নির্ঝঞ্জাট করতে দ্রুত ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।
( পাঠক মতামত-এ প্রকাশিত সকল লেখার দায় কেবল লেখকের। এর সঙ্গে সময়ের সংলাপ কর্তৃপক্ষের কোনো সম্পর্ক নেই।)