গ্রিসে বসবাসরত অনিয়মিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মানবেতর জীবন-যাপন নিয়ে ‘দিস ইজ এভিডেন্স’ নামক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও নির্মাতা রীনা কুকরেজার আয়োজনে এথেন্সের একটি প্রদর্শনী হলে প্রদর্শিত হয় অভিবাসীদের জীবনযাত্রার চিত্র।
গ্রিসের কৃষিসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত প্রবাসীদের ছবি ছিল প্রদর্শনীয় মূল আকর্ষণ। বিভিন্ন ভিডিও চিত্রে প্রবাসীদের করুণ জীবনের কাহিনিতে অনেক দর্শকদেরই চোখে পানি টলমল করতে দেখা গেছে, আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেক স্থানীয় নাগরিক। বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশীয় অনিয়মিত অনেক অভিবাসীদের ছবি ও ভিডিও চিত্রও স্থান পেয়েছিল এই প্রদর্শনীতে।
আয়োজকেরা দীর্ঘদিন একনিষ্ঠভাবে, বিশেষ করে গ্রিসের মানোলাদাসহ বিভিন্ন গ্রামে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে কয়েক বছর কাজ করে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। গ্রিসের প্রবাসী অধিকার পরিষদের আমন্ত্রণে শিক্ষক ও নির্মাতা কুকরেজা এই প্রদর্শনীতে আগ্রহ প্রকাশ করেন।
প্রবাসী অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শেখ গিয়াস জানান, তাদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল এই প্রদর্শনী। সারা বিশ্ববাসীকে গ্রিসের অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের জীবন যাত্রা ও দুঃখের কথা তুলে ধরাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।
মানব সেবা, প্রবাসী কল্যাণ ও আশার আলো নামকরণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয় বিভিন্ন পেশায় কর্মরত অনিয়মিত অভিবাসীদের। গ্রিসে ‘অবৈধ’ অনিয়মিত অভিবাসী শ্রমিক হিসাবে তাদের জীবনযাত্রার কঠিন পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছে আয়োজক। এই প্রদর্শনীর আগে রীনা কুকরেজা গ্রিসের গ্রামে থাকা অনিয়মিত বাংলাদেশিদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে আসছিলেন।
প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২০১৮ সাল থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত রীনা কুকরেজার কাছে বিভিন্ন উপায়ে বা মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করে পাঠাতেন। ইতোমধ্যে গ্রিস অনিয়মিত অভিবাসনের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান বৃদ্ধি পাওয়ায় রীনা কুকরেজা সরাসরি তাদের কর্মকাণ্ড দেখার সুযোগ করে উঠতে পারেননি।
প্রদর্শনীতে প্রবাসীদের বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন তাদের মানবেতর জীবনের করুণ দিকগুলো। তারা বলেন, আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর গ্রিসের মূল সমাজকে জানানোর জন্য অংশগ্রহণ করছি। আমাদের সম্পর্কে স্থানীয় মানুষের ধারণা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চাই।
প্রবাসীরা জানান, গ্রিসে অনিয়মিত অবস্থায় কাজ করা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও অধিকারের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে নিজেদের পরিস্থতি তুলে ধরতে তারা এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। কৃষি শ্রমিকদের অধিকার শুধু গ্রিসে নয় বিশ্বের সর্বত্র প্রাপ্য।
গ্রিসের বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে এই ব্যক্তিক্রমী প্রদর্শনীটি। প্রথম দিন থেকেই সেখানে ভিড় জমিয়েছেন বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এনজিও, প্রবাসী অধিকার সংগঠন ও অভিবাসন সংশ্লিষ্ট নেতারা।
আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে ৩ মে পর্যন্ত ‘দিস ইজ এভিডেন্স’ এর দ্বিতীয় পর্ব প্রদর্শিত হবে কানাডার অন্টারিও রাজ্যের কিংস্টন শহরে।