গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) হামাস পরিচালিত গাজার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের অভিযানে এ পর্যন্ত ৯২ হাজার ৪০১ জন আহত হয়েছেন এবং উপত্যকার ৮৫ শতাংশের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বেসামরিক নাগরিক ও জঙ্গি উভয় মিলিয়ে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
১০ মাসের বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধের অবসানে মধ্যস্থতা করতে আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে আরও একটি চাপ দেওয়ার মাঝেই এই ঘোষণা এল।
গত ৭ অক্টোবর হামাস নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করে এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়ার পর এই সংঘাত শুরু হয়।
ইসরায়েল বলছে, জিম্মিদের মধ্যে ৩৯ জনের লাশসহ ১১১ জনকে এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি। তাদের মধ্যে ১৫ জন নারী ও পাঁচ বছরের কম বয়সী দুই শিশুও রয়েছে।
নিহতদের শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। কারণ ইতোমধ্যে উপচে পড়া হাসপাতাল ও মর্গগুলোতে প্রতিনিয়ত আরও লাশ ঢুকছে।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত নিহতের বিষয়ে সর্বশেষ বিস্তারিত প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার ৫ জন নিহত হয়েছেন।
তবে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মীরা বলছেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হাজার হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনগুলোর ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক লাশ চাপা পড়ে আছে।
গাজায় ইসরাইলের বিমান ও স্থল অভিযান সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বিধ্বংসী সামরিক অভিযানগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এদিকে ইসরায়েল বলছে, হামাসকে নির্মূল করাই তাদের লক্ষ্য। ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর জন্যে তারা হামাসকে দায়ী করেছে।
কারণ হিসেবে ইসরায়েল বলছে, বেসামরিক এলাকায় হামাস জঙ্গিরা তৎপরতা চালায় এবং এসব এলাকার নিচে বিস্তৃত সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে তারা।
ইসরায়েলি বাহিনী নিয়মিতভাবে গাজার মসজিদ, স্কুল, হাসপাতাল ও কবরস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। এতে প্রায়ই বেসামরিক নাগরিক হতাহতের ঘটনা ঘটছে।
হামাসের সঙ্গে সংঘর্ষে অবশ্য ৩২৯ জন ইসরায়েলি সেনাও নিহত হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর দাবি, গাজায় নিহতদের মধ্যে ১৭ হাজারেরও বেশি হামাস যোদ্ধা রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ সরবরাহ করেনি তারা।
গাজার ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৮৫ শতাংশই তাদের বাড়িঘর ছেড়েছে। স্থল আক্রমণ থেকে বাঁচতে একাধিকবার তারা স্থানচ্যুত হয়েছে।
অন্যদিকে, গাজায় যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েলের ভেতরে এবং দক্ষিণ লেবাননেও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
এসব হামলায় গাজায় ব্যাপক মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। ক্ষুধা পরিমাপ বিষয়ক শীর্ষস্থানীয় কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুরো অঞ্চল দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এবং আগামী মাসগুলোতে ৪ লাখ ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ (জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি) সবচেয়ে মারাত্মক মাত্রার ক্ষুধায় ভুগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির ম্যাপিং বিশেষজ্ঞ কোরি শের ও জেমন ভ্যান ডেন হোয়েকের স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৩ জুলাই পর্যন্ত হামলায় গাজার সমস্ত কাঠামোর ৫৯ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হওয়ার সম্ভাবনায় রয়েছে, যার মধ্যে উত্তর গাজার ৭০ শতাংশ ভবন রয়েছে।
গাজা সংঘাত একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা ছড়িয়ে দিয়েছে। লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ এবং ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দুই দেশের সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই গুলি চালাচ্ছে।
ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে প্রায় ৩৫০ জন হিজবুল্লাহ সদস্য এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর ৫০ যোদ্ধাসহ ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া হিজবুল্লাহর হামলায় ইসরায়েলের ২২ সেনা ও ২৪ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।