বেশ কয়েকবছর ধরে গুঞ্জন ছিল, ‘দুবাই এক্সপো ২০২০’ ঘিরে সংযুক্ত আরব আমিরাত খুলে দিতে পারে বন্ধ থাকা বাংলাদেশের শ্রমবাজার। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বৃহত্তর বৈশি^ক এই বাণিজ্যিক প্রদর্শনীর পর্দা উঠলেও বন্ধ শ্রমবাজারের উপর তেমন নজর আসেনি কারও। তবে দেশটির অন্যতম বাণিজ্যিক শহর দুবাই ইতিমধ্যে চালু করেছে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থান ভিসা। জীবিকার সন্ধানে দুবাই যেতে আগ্রহীরা সহজে নিতে পারছেন এই সুযোগ।
বিভিন্ন ভিসা সেন্টার ও বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো সময়ের সংলাপকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে দেশটির অন্যান্য প্রদেশে এখনও বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। শুধুমাত্র দুবাইভিত্তিক কোম্পানি ও প্রাতিষ্ঠানিকগুলো আবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের নতুন কর্মসংস্থান ভিসা নিতে পারছে।
এই বিষয়ে অবগত রয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দুবাইস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট।
একাধিক ভিসা সেন্টার সময়ের সংলাপকে জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ভিত্তিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশি শ্রমিকের জন্য আবেদন করতে পারছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে বেশকিছু নতুন ভিসাও প্রদান করছে তারা। তবে প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যে গৃহকর্মী, চালক বা খাদেম ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া এখনও বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে সামগ্রিকভাবে দেশটির অন্যান্য প্রদেশে বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান প্রক্রিয়াও।
দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বিএম জামাল হোসেন সময়ের সংলাপকে বলেন, সরকারিভাবে আমাদের এই বিষয়ে তারা অবগত করেনি। কিন্তু নতুন ভিসা তারা দিচ্ছে, লোকজন আসছে। তবে বিষয়টি এই নয়, সামাগ্রিকভাবে বাংলাদেশিদের ভিসা খুলে গেছে। তাদের (আমিরাত) ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া যেটি বন্ধ ছিল, সেটি সক্রিয় করায় কিছু কিছু নতুন ভিসা পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশিদের অপরাধ ও অপরাধীর সংখ্যা বিবেচনায় ২০১২ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের নতুন শ্রম ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। একই ইস্যুতে আরব আমিরাত ছাড়াও সেসময় মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশ বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন শ্রমিক প্রবেশের সুযোগ না থাকায় এরপর শ্রমবাজার ধীরে ধীরে সংকুচিত হতে থাকে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ভিসা বন্ধের এই নয় বছরে বিএমইটি কার্ড গ্রহণ করে আমিরাত গেছেন ৮৮ হাজার ৩ শ ৬২ জন। অথচ শ্রমবাজার খোলা থাকা অবস্থায় দেশটিতে প্রতিবছরই দুই লাখের মত শ্রমিক প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিল। বিএমইটির তথ্য মতে, চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে কাজের ভিসা নিয়ে গেছেন ৪ হাজার ৭ শ ১৭ জন বাংলাদেশি। তান্মধ্যে ৫০৯ জনই মহিলা শ্রমিক। তবে, ভিজিট ভিসা নিয়ে কাজের জন্য দেশটিতে যাওয়া বাংলাদেশিদের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়।
এদিকে, আকাশ পথে যোগাযোগ উন্মুক্ত হবার পর দুবাইয়ে আবার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে ভ্রমণ ভিসা। ভ্রমণ ভিসা গ্রহণ করে দেশটিতে প্রবেশের পর ভিসার ধরণ পরিবর্তন করে অনেকেই ব্যবসায়িক ও কাজের ভিসা নবায়নের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দেওয়া এক আদেশে আমিরাত যেতে আগ্রহীদের সেই সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হবার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভ্রমণ ভিসা নিয়ে কাজের উদ্দেশ্যে দুবাই যাওয়ার জন্য আসা যাত্রীদের বহির্গমন টার্মিনালে ইমিগ্রেশন করা যাবে না মর্মে প্রকাশিত ওই আদেশ নতুন করে শঙ্কা তৈরি করেছে।