সোমবার, ২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

করাচি-দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যিক রুট আশাব্যঞ্জক

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৭:৩৩ অপরাহ্ণ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ৭:৩৩ অপরাহ্ণ
করাচি-দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যিক রুট আশাব্যঞ্জক

পাকিস্তানের করাচি থেকে আগামী ১৯ ডিসেম্বর ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের জাহাজটি কনটেইনারবাহী পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা রয়েছে। এই জাহাজ পণ্য আনা-নেওয়ার মাধ্যমে কয়েকটি দেশের সঙ্গে নৌপথে বাংলাদেশের সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয়েছে। সেইসঙ্গে করাচি ও দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যিক রুট খুলেছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা।

এসব তথ্য জানিয়েছেন নৌবাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল অফিসার এবং রেজিস্ট্রার অব বাংলাদেশ শিপস ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ।

প্রথমবারের মতো গত ১১ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে জাহাজটি। ৩৭০ একক পণ্যবাহী কনটেইনার খালাসের পর এটি পরদিন চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। যার মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশিয়া, দুবাই ও করাচির সঙ্গে নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ শুরু হয় বাংলাদেশের।

ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘করাচি ও দুবাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যিক রুট অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। নতুন রুটটি বাংলাদেশের নৌবাণিজ্যকে আরও এগিয়ে নেবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে লাইনার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথমবার গত ১১ নভেম্বর এইচআর শিপিং লাইনের অধীনে এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং জাহাজের মাধ্যমে ৩৭০ একক কনটেইনার পণ্য নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছে। পরদিন ১২ নভেম্বর কনটেইনার খালাস করে বন্দর ত্যাগ করে। জাহাজটি মূলত দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে মধ্যবর্তী করাচি বন্দর হয়ে এই বন্দরে আসবে। এটির সাধারণ রাউন্ডিং হচ্ছে দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে শুরু করে করাচি বন্দর, চট্টগ্রাম বন্দর, ইন্দোনেশিয়ার বেলাওয়ান বন্দর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং বন্দর, ভারতের মুন্দা বন্দর ঘুরে পুনরায় দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাহাজটিতে কনটেইনার পরিবহনক্ষমতা দুই হাজার ৩০০টি। এই রুটে আমদানি কনটেইনার পর্যাপ্ত হলে ভবিষ্যতে রুটটি নিয়মিত পরিচালনা করতে জাহাজ মালিকরা আগ্রহী হবেন। আগে পাকিস্তানের সঙ্গে সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানি হতো। নতুন রুটটি চালু হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এতে করে সাশ্রয়ী ব্যয় এবং সময়ে উভয় দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।’

গত ১১ নভেম্বর বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে জাহাজ থেকে ৩৭০ কনটেইনার খালাস করা হয়। এর মধ্যে করাচি বন্দর থেকে আনা হয় ২৯৭ কনটেইনার পণ্য এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে আনা হয় ৭৩ কনটেইনার পণ্য। পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া কনটেইনারে ছিল শিল্পের কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য। এসব পণ্যের ওজন ছয় হাজার ৩৩৭ টন। পাকিস্তানের ১৮টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য সরবরাহ করেছে।

কাস্টমসের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী, পাকিস্তান থেকে জাহাজটিতে করে বেশি আনা হয়েছে সোডিয়াম কার্বনেট বা সোডা অ্যাশ। টেক্সটাইলসহ বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় এটি। মোট ১১৫ একক কনটেইনারে রয়েছে সোডা অ্যাশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য হলো খনিজ পদার্থ ডলোমাইট। ডলোমাইট রয়েছে ৪৬ একক কনটেইনারে। মোট ৩৫ একক কনটেইনারে আমদানি করা হয় চুনাপাথর। ৬ একক কনটেইনারে আনা হয় ম্যাগনেশিয়াম কার্বনেট।

এ ছাড়াও কাচশিল্পের কাঁচামাল ভাঙা কাচ আনা হয়েছে ১০ একক কনটেইনারে। শতভাগ রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের কাঁচামাল কাপড়, রঙ ইত্যাদি রয়েছে ২৮ একক কনটেইনারে। একটি কনটেইনারে রয়েছে গাড়ির যন্ত্রাংশ। এসব পণ্য আমদানি করেছে আকিজ গ্লাস কারখানা, নাসির ফ্লোট গ্লাস, প্যাসিফিক জিনস, এক্স সিরামিকস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ৪২ একক কনটেইনারে আনা হয় পেঁয়াজ। যার পরিমাণ ৬১১ মেট্রিক টন। এর বাইরে ১৪ একক কনটেইনারে আলু আমদানি হয়েছে ২০৩ টন। এই দুটো পণ্য আনা হয়েছে হিমায়িত কনটেইনারে। পেঁয়াজ-আলু এনেছে ঢাকার হাফিজ করপোরেশন, এম আর ট্রেডিংস ও চট্টগ্রামের আল্লাহর রহমত স্টোর।

সম্পর্কিত পোস্ট