
ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ইউএসবিসিসিআই) উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গত ৭ মে শনিবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে এর অগ্রযাত্রা অদূর ভবিষ্যতে আরো গভীর থেকে গভীরতর করার সংকল্প ব্যক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাইডেন প্রশাসনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জাতিসংঘ প্রতিনিধি সিমা কেরেটনাইয়া। তিনি বাংলাদেশের মানুষের জন্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের গভীর ভালবাসার নিদর্শন হিসেবে ইউএসবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদকে ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গোল্ড মেডেল’ প্রদান করেন।
সিমা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ এগুচ্ছে নারী নেতৃত্বে এবং সেই অগ্রযাত্রায় সমগ্র জনগোষ্ঠীকে একিভূত করতে প্রবাসীরাও সরব রয়েছেন- এটি আমাকে অভিভূত করছে। সমাবেশের প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক বলেন, একাত্তরের চেতনায় ফেরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় প্রবাসীদের ভূমিকা আমরা সবসময় স্মরণ করি। প্রবাস-বান্ধব সরকারের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্য সকলের দোয়া চাচ্ছি যেন তিনি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা রচনায় সফল হতে পারেন। প্রধান অতিথি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সমর্থনে ১৯৭১সালে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির ভূমিকা এবং ২০০০ সালে প্রথম মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সবচেয়ে বড় অবদান রাখা দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী শান্তি নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বলেন, হিসাব-নিকাশ ছাড়া চললে তাদেরতো উন্নয়নের সম্ভাবনা থাকে না। একটা সরকার আট বছরের প্ল্যান করে কিন্তু আমাদের শেখ হাসিনার সরকার শত বছরের পরিকল্পনা করে। সমাবেশের প্রধান বক্তা একুশে প্রদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং নিউজার্সির প্লেইন্সবরো সিটির কাউন্সিলম্যান ড. নুরুন্নবী বলেছেন, ইউএস সিনেটে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ার সিনেটর বব ম্যানেন্ডেজ বাংলাদেশের অগ্রগতির ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের অভিবাদন জানিয়েছেন। সিনেট ও কংগ্রেসে আমাদের বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক জোরদারের মধ্যদিয়ে বহুজাতিক এ সমাজে বাংলাদেশের সত্যিকার ইমেজকে মহিমান্বিত করতে এ ধরনের আয়োজনের গুরুত্ব অপরিসীম। নিউজার্সির সমারসেট কাউন্টিতে অবস্থিত ফ্র্যাঙ্কলিন টাউনশিপের কাউন্সিলওম্যান শেপা উদ্দিন উচ্ছ্বাসের সাথে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে নয়া মাত্রা আনতে সাধ্যমত সচেষ্ট থাকার অঙ্গীকার করেন।
অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর এনআরবিসির প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ারপার্সন শেকিল চৌধুরী বলেন, দেশ মাতৃকার স্বার্থে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। এর বিকল্প নেই। অনুষ্ঠানে ইউএসবিসিসিআই লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় লেখক-মুক্তিযোদ্ধা-বিজ্ঞানী ও সমাজসেবক ড. নূরননবী, নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ক্লাব ইনক’র প্রতিষ্ঠাতা মোরশেদ আলম, একেএম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আব্দুল কাদের মিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ভেটার্ন্স’১৯৭১-ইউএসএর প্রতিষ্ঠাতা-প্রেসিডেন্ট গোলাম মোস্তফা খান মিরাজ, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এস শেকিল চৌধুরী, ব্রঙ্কসের খলিল বিরিয়ানির মো. খলিলুর রহমান প্রমুখ। সম্মাননা প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক। এর আগে, নিউইয়র্ক স্টেট পার্লামেন্টের সাইটেশন প্রদান করেন এসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজকুমার। সাইটেশন পেয়েছেন নিউজার্সিস্থ জিএফবি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা-চেয়ার গোলাম ফারুক ভূইয়া এবং অন্যান্যরা। কমিউনিটি সার্ভিসে এ এক অনন্য স্বীকৃতি বলে উল্লেখ করেন জেনিফার। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় লিটন আহমেদের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল গোল্ড মেডেল’ প্রাপ্তির ঘটনাটি।
উল্লেখ্য, গত চার বছর যাবত ইউএসবিসিসিআই এ ধরনের সমাবেশের আয়োজন করছে। বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করা ছাড়াও বাংলাদেশি আমেরিকানদেরকেও উৎসাহিত করে আসছেন। আরো উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয় মডেল তারকা মোনালিসা এবং রিক্সা গার্লস মুভির আসাদুজ্জামানকে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ কে আব্দুল মোমেন এক ভিডিও বার্তায় আয়োজনের প্রশংসা করেন এবং ইউএস-বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিটি প্রবাসীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরব থাকার অনুরোধ জানান। অনুষ্ঠানে টেক্সাস থেকে আসা ব্যবসায়ী এবং ডেমক্র্যাট লিডার রহিম র্যা নিহাল ছাড়াও টেক্সাস আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম বরকত এবং সেক্রেটারি শাহাদৎ ভূইয়া। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আরো ছিলেন আবুল বাশার ভূইয়া। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও অতিথিদের সরব উপস্থিতিতে গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ইউএসবিসিসিআই’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া।