একরাশ কালো মেঘে ঢেকে গেছে আমার পৃথিবী। কতদূরে যেতে হবে জেনেও বুকে পাথর চেপে রেখে নিরুদ্দেশ হচ্ছি এই প্রথম। মা-বাবা স্বজনদের থেকে জীবনের প্রথম পাড়ি দিচ্ছি বহুদূর।
এয়ারপোর্ট পৌঁছতেই বুক ধক ধক করছে। পেছন ফিরে তাকাতেই আমার দু’গাল বেয়ে অশ্রু ঝরঝর করে ঝরছে অঝোর ধারায়। তবুও বুকে পাথর বেঁধে বিমানে উঠে বসলাম। বিজনেস ক্লাসে ছিল আমার সিট। বিমানে সবাই অপরিচিত হলেও ঢাকা এজেন্সিতে এক বড়আপুর সাথে দেখা হয়েছিল।উনি আমাকে দেখতেই কথা বললেন। পাশে বসা আরেক আপু সাথে পরিচয় হলো। উনি ভাবছে, আমি ইউরোপে যাচ্ছি। দুজনের সাথে খুব ভাব হলো। উভয়ে ফোন নম্বর বিনিময় করলাম।
দীর্ঘ যাত্রার পর একসময় জেদ্দা এয়ারপোর্টে বিমান অবতরণ করে। মনে আনন্দ আর ভয় কাজ করছে কেন জানিনা। একসময় বের হলাম। আমি কাউকে খুঁজে পাচ্ছি না। আমার বর আমাকে চিনতে পারেনি, আমিও উনাকে চিনতে পারিনি। পরে কাজিন এসে আমাকে ডাক দিল। সবাই গাড়ীতে উঠলাম। একসময় বাসায় এসে পৌঁছলাম। ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন দুনিয়া সৌদি আরব।
সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রবাসে মা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজনকে খুব মনে পড়তে লাগলো। মনে পড়ত শৈশবের কথা। স্কুল-কলেজের কথা।কয়দিনের প্রবাস জীবনে স্মৃতিগুলো খুব নাড়া দিচ্ছে। ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন মানুষ, ভিন্ন খাবার। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই মন খারাপ হচ্ছে।রোজ কান্না করি। মন চাইতো, উড়াল দিয়ে মায়ের কাছে চলে আসি।
যার জন্য আমি প্রবাসে গেছি সেই সারাদিন ব্যস্ত। বলতে পারিনা তাকে মনের কথা। কথারা যেন আমার মাথার ভেতরে মানসিক রোগে পরিবর্তন হচ্ছে। দিনদিন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি বন্ধ ঘরে। কোনোরকম দুইমাস পার হতেই আমি মা হতে যাচ্ছি। এই খুশির সংবাদটা আমার সব কষ্ট মুছে দিল।একাকিত্বের অবসান ঘটবে নয়মাস পর, এই খুশিতে আমি রোজ স্বপ্ন বুনি আমার দু’চোখে।
এরমধ্যে কত ঝড় তুফানের সম্মুখীন হচ্ছি দাম্পত্য জীবনে তার কোন হিসেব নেই। আমাকে বুঝার মতো, কাউকে বলার মতো আমার চারপাশে কোন মানুষ নেই। নীরবে, নিভৃতে সহ্য করে যাচ্ছি।